সিক্সটিন ডেইজ অফ একটিভিজম: ‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’

মাহমুদা খাতুন | শনিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড: ফান্ড, রেসপন্ড, প্রিভেন্ট, কালেক্ট!’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে ‘সিক্সটিন ডেইজ অফ একটিভিজম এগেইনস্ট জেন্ডার বেসড্‌ ভায়োলেন্স ক্যাম্পেইন’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশও বর্তমানে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আয়োজনে এই ক্যাম্পেইনটি পালন করছে। এটি একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযান যা নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ ও নির্মূল করার জন্য ব্যক্তি ও সংস্থাকে আহ্বান জানায়। প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলের আন্তর্জাতিক দিবস (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ উধু ভড়ৎ ঃযব ঊষরসরহধঃরড়হ ড়ভ ঠরড়ষবহপব অমধরহংঃ ডড়সবহ) থেকে শুরু করে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঐঁসধহ জরমযঃং উধু) পর্যন্ত এই ক্যাম্পেইন চলে। এই ষোল দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিবস রয়েছে যেমন: ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ডড়সবহ ঐঁসধহ জরমযঃং উবভবহফবৎং উধু (২৯ নভেম্বর), ঘধঃরড়হধষ উধু ড়ভ জবসবসনৎধহপব ধহফ অপঃরড়হ ড়হ ঠরড়ষবহপব অমধরহংঃ ডড়সবহ (৬ ডিসেম্বর) ইত্যাদি। আর এই ষোলো দিনকেই ঘিরেই এই ক্যাম্পেইনটির আয়োজন। ক্যাম্পেইনটি প্রথম ১৯৯১ সালে রুটজার্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর উইমেনস গ্লোবাল লিডারশিপ ইনস্টিটিউট-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত, আনুমানিক ১৮৭টি দেশের ৬,০০০ এরও বেশি সংস্থা এতে অংশগ্রহণ করেছে।
শুরুতেই জানিয়েছি যে এ-বছরের জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রচারাভিযানের মূল প্রতিপাদ্য হল: ‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড: ফান্ড, রেসপন্ড, প্রিভেন্ট, কালেক্ট!;’ কিন্তু কেনো কমলা রঙে রাঙিয়ে দিতে হবে পৃথিবীটাকে? কারণ কমলা রঙ হিংসামুক্ত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক এবং সব ধরনের সহিংসতা দূর করার জন্য বিশ্বব্যাপী সংহতির প্রতীক। ইউএন উইমেন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে নারী সহিংসতা এবং বিশেষ করে গার্হস্থ্য সহিংসতা বেড়েছে কয়েক গুণ।
এই ক্যাম্পেইনে এবার যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সেটি হলো ‘ডু নো হার্ম’ অর্থাৎ নারীর কোনওরূপ ক্ষতি চাই না। এই ‘ডু নো হার্ম’ বিশ্বব্যাপী নারীর অবহিত সম্মতির প্রাসঙ্গিক বোঝাপড়াকে সম্মান করে, নারী আন্দোলনের ভূমিকাকে স্বীকার করে, নারীর অধিকার আদায়ের বিষয়ে যুক্ত সকল পক্ষকে একাধিক যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণে আমন্ত্রণ জানায়, রূপান্তরমূলক পরিবর্তনে যুক্ত তরুণ নারীবাদীদের কণ্ঠস্বরকে আরও উন্নত করার অভিপ্রায়ে কাজ করছে। তবে প্রাসঙ্গিকভাবে এই জিজ্ঞাসাও গুরুত্বপূর্ণ যে একটি ‘ফান্ড, রেসপন্ড, প্রিভেন্ট, কালেক্ট!’ মডেল নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবেলায় কতোটা সক্ষম যখন আমরা দেখি যে সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য বা ধর্মের নামে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর বলয়ে থেকে, পুরুষতান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক অর্থনীতির ছাতার তলায় বাস করে এই লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।
তবুও আমরা মনে করি যে নারীদের প্রতি সহিংসতার ব্যক্তিবাদী কাঠামোর বাইরে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। এ-বিষয়ে আরও সৃজনশীলভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে যে আমরা কীভাবে চলমান দৈনন্দিন লিঙ্গগত অনিশ্চয়তাকে মোকাবেলা করতে পারি যা কেবল লিঙ্গবাদী পুরুষ এবং নিপীড়ক সাংস্কৃতিক নিয়ম দ্বারাই নয় বরং সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী, নব্য উদারবাদী, বৈষম্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা এবং এইসব কু-নিয়ামকের হিংস্র নিপীড়ন ব্যবস্থা দ্বারা তৈরি করা হয়, টিকিয়ে রাখা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেটে গেছে নব্বই বছর
পরবর্তী নিবন্ধব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন