‘সিআরবিতে হাসপাতাল : সবুজ ভূখণ্ড নিশ্চিহ্নের পাঁয়তারা প্রতিহত করুন’

| রবিবার , ২৫ জুলাই, ২০২১ at ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ


হাসপাতাল বিতর্ক : দূরদর্শী চিন্তাভাবনা প্রয়োজন
বাসুদেব খাস্তগীর
সিআরবির মত নান্দনিক জায়গার পাশে বৃহৎ মেগা প্রজেক্ট করা যায় না। কারণ ভবিষ্যতে এ হাসপাতলকে ঘিরে যে অবকাঠামা গড়ে উঠবে তা সিআরবি’র নান্দনিক পরিবেশের জন্য হুমকি। হাজার হাজার গাড়ির চলাচল, এ্যাম্বুলেন্স যাতায়ত, মেডিক্যালের কলেজের স্থাপনার কারণে ভবিষ্যতে এখানে যে পরিবেশের সৃষ্টি হবে তা এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নীরবে শ্বাস নেয়ার প্রশান্তি পরিবেশ নিশ্চয়ই ক্ষুন্ন হবে। সিআরবি’র চারিদিক থেকে এর যোগাযোগ স্থাপিত হতে পারে। একারণে রাস্তা বড় করার প্রশ্নে ভবিষ্যতে গাছ কাটার কথাও আসতে পারে। এখানে হওয়া বাঙালির ঐতিহ্যের অনুষ্ঠানমালার দিকে অঙ্গুলি উঠতে পারে। সুতরাং এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া চিন্তা করতে হবে। আজকের দিনের চিন্তা করলে হবে না। এখন পৃথিবীর সব বড় বড় স্থাপনা শহরের বাইরেই হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শহরের বাইরে হওয়াতে কেউ কি পড়াশুনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন? এভাকেয়ার চট্টগ্রামের বাইরে হয় নি? ইম্পরিয়েলও অনেকটা শহরের বাইরে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলাও বর্তমান সময়ে একেবারে হাস্যকর। কলকাতায় বেশ কিছু বছর আগে থেকে বড় বড় হাসপাতালগুলো মূল শহরের একটু বাইরেই তৈরি হয়েছে। এটি পৃথিবীর এখন স্বীকৃত নিয়ম। আর এ হাসপাতালে কোন সাধারণ নাগরিক সুবিধা পাবে না। এটি বড়লোকদের চিকিৎসা আর বড়লোকদের ছেলেমেয়ের পড়ার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এটি। হতেই পারে, অসুবিধে নেই। তবে চট্টগ্রামের মানুষের প্রতিবাদ হাসপাতালের বিরুদ্ধে নয়, হাসপাতাল যে জায়গায় হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আবার এ প্রতিবাদকে পুঁজি করে পুরো হাসপাতালের প্রজেক্টটা বাতিল করে আন্দোলনকারীদের ঘাড়ে যেন কেউ দায় চাপিয়ে দিতে না পারেন সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যদি হাসপাতাল না হয় সেটি হবে কারো কারো সংকীর্ণতার কারণে। কারণ চট্টগ্রামে জায়গার অভাব নেই। পৃথিবীর কোন দেশে এখন বড় বড় হাসপাতাল, বিমান বন্দর, কৃত্রিম পার্ক শহরের ভেতরে হয় না, বাইরেই হয়। বর্তমান বিশ্বে সারা বড় বড় শহরে বড় বড় স্থাপনাগুলো শহরের একটু অদূরে গড়ে তোলার ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদরা একমত এবং এ কারণে বড় বড় স্থাপনাগুলো একটু শহরের বাইরের গড়ে উঠছে সারাবিশ্বে। সিআরবি প্রকৃতি প্রদত্ত নান্দনিক স্থান। এটি কেউ সৃষ্টি করতে পারে না। শহরের ভেতর এরকম জায়গা খুব একটা নেই।

সবুজ বনানী ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না
নুরুন্নাহার ডলি
অসম্ভব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার এই সিআরবি। ১৮৭২ সালে সম্পন্ন হওয়া ভবনটি নগরীর প্রাচীনতম ভবন। চট্টগ্রামের রেলওয়ে সিআরবি পাহাড়ের হাতির বাংলো: অপূর্ব স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। আছে শিরীষতলা, যেখানে প্রতি বছর বৈশাখের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এক সময়ে ডিসি হিলে পালিত হতো বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসব পহেলা বৈশাখ। সময়ের ক্রন্দনে, অযাচিত থাবায় মলিন হয়েছে ডিসি হিল। এখন বাংলা লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম পাদপীঠ: সিআরবি’র শিরীষতলা। নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা স্বস্তি, আরাম আর মানসিক প্রশান্তির খোঁজে মানুষ জমায়েত হয় এখানে। প্রাতঃভ্রমণ, বৈকালিক ভ্রমণ, ছেলেদের খেলাধুলা, পথশিশুদের পড়ালেখা এই সিআরবি’র শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে হয়ে থাকে। এমনিতেই চট্টগ্রামে প্রতি বছর পাহাড় ধ্বস আর জলাবদ্ধতা নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সেখানে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে মালিকানাধীন হাসপাতাল তৈরির সঙ্গত কারণেই আমাদের প্রতিবাদ। বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি হাসপাতাল এখানে বর্তমান আছে। তারপরও সেখানেই কেন হাসপাতাল হতে হবে? অন্য কোথাও তো হতে পারে। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের এই পাহাড়ী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করে একে ন্যাড়া করার এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমার মতামত। সমবেত ঐক্যের জয় হোক। সবুজ পাহাড় বনানী ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না।

প্রকৃতির সাথে বৈরি আচরণ আর নয়
গৌরী প্রভা দাশ
বহুদিন ধরে আমরা সম্ভবত প্রকৃতির সাথে সেটাই করছি যা নিজেরা একে অপরের সাথে প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি। গ্রামীণ জীবন থেকে নগর জীবনে এর প্রভাব সুস্পষ্ট। এমনিতেই নানা কারণে নগরজীবন দুর্বিসহ। ইটের গাঁথুনির দালানে বাস করা মানুষগুলোর মানসিকতাও দিনে দিনে কৃত্রিমতায় ভরে যাচ্ছে। এক তলার সাথে আরেক তলার, একবাড়ির সাথে আরেক বাড়ির মানুষের কোন সংযোগ নেই। নগরের নিয়ন বাতির আড়ালে ঢাকা পড়েছে স্বতঃস্ফূর্ততা। সীমিত গাছপালার রুক্ষ পরিবেশে মানুষের জীবনও সীমাবদ্ধ, যান্ত্রিক। তবুও দেশের অন্যান্য শহরের মত চট্টগ্রাম শহরেও জীবনদায়ী অঙিজেন বিলানো একটি স্থান সিআরবি যেখানে শতবর্ষী গর্জন, শিরীষসহ রয়েছে কয়েক শত বৃক্ষ। সকালে মুক্তবাতাসে একটু হাঁটার আশায়, বিকেলে অফিস ফেরত মানুষের সান্ধ্যবকাশসহ নানা মৈত্রীময় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের কেন্দ্রস্থল এই সিআর বি।
জনবহুল নগরের নানা দূষণে অনেক স্থানের গাছগুলো এমনিতেই নির্জীব হয়ে পড়ছে, তার উপর নগরের উন্নয়ন প্রকল্প, সৌন্দর্যবর্ধন ও স্থাপনা নির্মানের কাজে সেই অল্পকিছু গাছকেই সবার প্রথমে করাতের নীচে মাথা রাখতে হয়। পর্যাপ্ত মুক্ত আলো বাতাসের অভাবে সাধারণ মানুষ নানারোগে আক্রান্ত । সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের নামে, অথের্র মোহে আর লোভের ফাঁদে পড়ে অন্যান্য স্থানের মত সিআরবির শতবর্ষী গাছগুলো হত্যা করে প্রকৃতিকে ধ্বংসের মাধ্যমে মূলত নিজেরাই ধ্বংসের মুখোমুখি হতে চলেছি। এ ধরণের গর্হিত কাজকে আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করতে আজ ঐক্যবদ্ধ।

হাসপাতাল নির্মিত হলে লাভের তুলনায় ক্ষতি বেশি হবে
মোহাম্মদ ওয়াহিদ মিরাজ
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ লিঃ এর সঙ্গে বিগত বছরের ১৮ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে নগরীর সিআরবি-তে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ সিটের মেডিকেল কলেজ নির্মিত হবে। এ খবরে চট্টগ্রামবাসী তথা আমাদের লাভের তুলনায় ক্ষতি হাজার গুণ বেড়ে যাবে মর্মে আমরা মনে করছি। কারণ প্রথমে ৬ একর জায়গা জুড়ে এ প্রতিষ্ঠানের জন্ম হলেও পরবর্তীতে আরো কয়েক একর জায়গায় এ প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক নিয়মেই গড়ে ওঠবে। ফলে সিআরবি তার প্রাকৃতিক পরিবেশ হারাবার কারণে অঙিজেন সরবরাহে ব্যর্থ হবে, নগরীর ফুসফুস তথা সিআরবি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হবে। শহরের উপকণ্ঠে এতো জমি থাকতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র তথা বিশুদ্ধ বায়ু উৎপাদনের স্থানে কেন চিকিৎসালয়ের নামে “রোগ সৃষ্টির কারখানা” গড়ার জন্য একটি মহল ওঠে পড়ে লেগেছে তা স্বচ্ছ পানির ন্যায় পরিষ্কার। এ কথা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে, বিগত দিনের বিভিন্ন ন্যায় সংগত আন্দোলনের মতো এ আন্দোলনেও চট্টগ্রামবাসী জয়ী হয়ে প্রমাণ করবে যে, চট্টগ্রামবাসী কোন অন্যায়ে কখনো আপোষ করতে শিখেনি আর করবেও না। তাই কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগেই এ প্রতিষ্ঠান গড়ার স্থান পরিবর্তন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে সবিনয়ে অনুরোধ করছি। অন্যথায় এর পরিণাম হবে ভয়াবহ, যার দায়-দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে।

সিআরবি-তে হাসপাতাল নয়
তানভীর হাসান বিপ্লব
সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ হলে এখানকার সামাজিক সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ, ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।
এখানে হাসপাতাল হলে, হাসপাতালের সাথে জড়িত প্রতিদিন গড়ে হাজার-হাজার গাড়ির যাতায়াত, একই সাথে শত-শত ফার্মাসী, দোকান, এপার্টমেন্ট ব্যবসা শুরু হয়ে, গাছ ও প্রকৃতি ধ্বংস হবে ধীরে ধীরে, আগামী ২০ বছরের মাঝেই। আমরা হাসপাতাল চাই, তাই বলে কি অঙিজেনের ফ্যাক্টরিকে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক লাভের আশায় সিআরবি-কে ধ্বংস করে দিয়ে? আগামী প্রজন্মেকে বাঁচাতে সিআরবি-তে হাসপাতাল নয় এই শ্লোগান চলছে চলবে। আগামী প্রজন্ম ও সিআরবি-কে বাঁচাতে মাননীয় সরকার মানবতার প্রতীক আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সিআরবি এর পরিবেশ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার্থে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছি। আশা করি তিনি দেশ, জাতি ও আগামী প্রজন্মের স্বার্থে সিআরবি-তে হাসপাতাল হতে দিবেন না।

সিআরবি ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ
নেছার আহমেদ খান
চট্টগ্রাম নগরীর “ফুসফুস” খ্যাত ঐতিহাসিক সিআরবি। এ ফুসফুসকে ধ্বংসের অংশ হিসাবে এখানে বড়সড় হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বৃটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার চট্টগ্রামের সিআরবি হওয়াতে এই শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রেলের অনেক জায়গা৷ ফয়’স লেকসহ পুরো পাহাড়তলী, আমবাগান, জিলাপী পাহাড়, শাহজাহান ফিল্ড, কুত্তা বাংলো, হাতি বাংলো সবই রেলওয়ের। এর বাইরেও হালিশহর ও পোর্টেও রয়েছে রেলের প্রচুর জায়গা৷ এখানে সকাল সন্ধ্যায় সমাবেত হয় চার দেয়ালে বন্দী থাকা হাজার মানুষ। এর বাইরেও বসে বৈশাখী মেলা, সারা বছরই হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রেলের আর সহ্য হলো না এটা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এখন নগরীর হৃদপিণ্ড, নগর ঐতিহ্য সিআরবিকে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে ই্‌উনাটেডের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ব্যয়বহুল প্রাইভেট হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ বানাতে। বড়লোকের এই হাসপাতাল থেকে সাধারণ জনগন কোন উপকার পাবে না। তারপরও হাসপাতাল যদি করতেই হয় তবে সিআরবি কেন? চট্টগ্রাম শহরে কি জায়গার অভাব পড়েছে?
শুধু শত শত শতবর্ষী গাছের কারণে নয়, ঐতিহ্যগত কারণেই সিআরবি এলাকাকে রাখতে হবে অবিকৃত। চট্টগ্রাম শহরের নতুন প্রজন্মের স্বার্থেই সিআরবিকে রাখতে হবে অক্ষত। সিআরবি ধ্বংসের পাঁয়তারা প্রতিরাধ করতেই হবে। আমদের চট্টগ্রামবাসীর নিশ্চিত জয় হবে। ইনশাআল্লাহ।

সিআরবি রক্ষায় পাঁচ দাবি
ওসমান গনি
সিআরবি এমন এক জায়গা, সেটা সবার প্রিয়। কিন্তু প্রিয় সে সিআরবি নিয়েই এখন হাসপাতাল তৈরীর নতুন ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের কাছ থেকে সবুজের সমাহার কেড়ে নিতে চায়। কেড়ে নিতে চায় প্রাকৃতিক অঙিজেন। কিন্তু আমরা কি তা দিতে পারি? পারি না। পারিনা বলেই সাংবাদিক, ডাক্তার, সরকারি চাকুরীজীবী, ব্যাংকার, শ্রমিকসহ আমরা ছাত্ররা মাঠে নেমেছিলাম। সিআরবি রক্ষার্থে আমরা গত ১৬ই জুলাই ৫ দফা দাবি গণমাধ্যমে তুলে ধরেছিলাম। কৃতজ্ঞতার সহীত বলতে হয় স্থানীয় সকল পত্রিকাগুলো আমাদের এ দাবি দাওয়া গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছেন। আমাদের নিম্নোক্ত এই পাঁচটি দাবি যদি কর্তৃপক্ষ মেনে নেন, তাহলে অবশ্যই রক্ষা পাবে আমাদের প্রাণের সিআরবি। রক্ষা পাবে সবুজের সমাহার ও অঙিজেন ব্যাংক। দাবিগুলো হলো- ১. অতি বিলম্বে পরিবেশ বিধ্বংসী এই সিদ্ধান্ত বাতিলের ঘোষণা দিতে হবে। ২. সিআরবির বাইরে চট্টগ্রামের অন্যত্র যে কোন যায়গায় হাসপাতালটি নির্মাণ করতে হবে। ৩. হাসপাতাল নয় বরং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সিআরবি এলাকায় একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করতে হবে। ৪. ঐতিহ্যবাহী ডিসিহিলে সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম করতে না পারার যে নিষেধাজ্ঞা তা অচিরেই তুলে নিতে হবে। ৫. অকার্যকর হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে।

চট্টলবাসীর এক কথা : সিআরবিতে হাসপাতাল নয়
কাঞ্চন গুহ
বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। এই মূলমন্ত্রের ধারা বাহিকতায় চট্টলবাসীর মূল স্লোগান : বীর চট্টলা ঐক্য হও, সিআরবি কে শৃংখলমুক্ত করতে বদ্ধ পরিকর হও। অনেক স্মৃতি, অনেক সুখকর মুহূর্ত ও বহু বছরের ঐতিহ্য এবং কালের স্মৃতিবাহী বটবৃক্ষ ও মহীরুহ গুলোকে সংরক্ষণার্থে চট্টলবাসী আজ ঐক্যে অনড়। যে কোন মূল্যে ‘সিআরবি’ কে রক্ষা করতেই হবে। আর, ঐতিহাসিক সিআরবি সংলগ্ন ‘শিরীষতলা’ অন্যতম। চট্টলনগরীর একমাত্র ‘ফুসফুস’। চট্টগ্রামে রেলের জায়গা জমি কোন অংশে কোথাও কম বলে মনে হয় না! ‘সিআরবি’কে বাদ দিয়ে হেতা নয় অন্য কোথায় হাসপাতাল গড়ে তুলুক, এই মিনতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট। আকুল প্রার্থনা প্রাণের ” সিআরবি” কে রক্ষা করে আপনার চিরচেনা চট্টগ্রামকে অবমুক্ত করুন।

সিআরবিতে কোনও হাসপাতাল নয়
রিফাত ফাতিমা তানসী
সুস্থ মানুষের পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য চট্টগ্রামের সিআরবি’র মতো একটি জায়গা যেটি খোলামেলা, গাছে গাছে ঘেরা ঠিক তেমনটিই থাকা অত্যাবশ্যক। যেখানে বিশুদ্ধ হাওয়ায় মানুষ প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারে, হাঁটাহাঁটি করতে পারে সকাল কিংবা বিকেলে খোলা আকাশের নিচে, বিশুদ্ধ বাতাস গায়ে মাখিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে পারে একা কিংবা বন্ধুবান্ধব, পরিবার মিলে। আর সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম একটি স্থান হিশেবেও সিআরবির শিরিষতলা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রামবাসী তথা সমগ্র বাংলাদশীদের কাছে বেশ কয়েকবছর আগ থেকেই; যেখানে পয়লা বৈশাখ, বসন্ত উৎসবের মতো বাঙালির ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান এবং নানা আয়োজন করা হয় পরিচ্ছন্ন ও গোছানোভাবে। সিআরবি পুরো দেশের জন্যই একটি অন্যতম নান্দনিক স্থান বলে বিবেচিত।
তাই সবদিক দিয়ে বিবেচনা করে এটি বলা যায় হাসপাতাল হোক চট্টগ্রামে, কোনও সমস্যাই নেই। তবে চট্টগ্রামে আরও অনেক জায়গা রয়েছে, সেখানে হোক। কারণ হাসপাতাল সিআরবি ছাড়াও অন্য অনেক উপযোগী স্থানে হতে পারে কিন্তু চট্টগ্রামের “ফুসফুস” খ্যাত সিআরবিতে যদি হাসপাতাল বানানো হয়, তখন সংশ্লিষ্ট সকল কিছু মিলে চট্টগ্রামের মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই শ্বাসকষ্টে ভুগবে! ইতোমধ্যে প্রানভূমি চট্টগ্রামের মাননীয় মেয়র শ্রদ্ধেয় “রেজাউল করিম চৌধুরী” এ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন- জনমত উপেক্ষা করে হাসপাতাল নির্মাণ করে সিআরবি’র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করা উচিত হবে না। সেইসাথে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়তলীসহ বিকল্প জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবও করেন তিনি। প্রয়োজন হলে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য মোহরায় সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দিতেও আগ্রহ দেখান মাননীয় মেয়র। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকা ‘হেরিটেজ জোন’ হিসেবে বন্দরনগরীর মহাপরিকল্পনায় ‘সংরক্ষিত এলাকা’ হওয়ায় সেখানে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হবে না।
সমস্ত গুণীজনদের সাথে সাথে তাই চট্টগ্রামবাসীও একত্রিত হয়েছেন সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে, তাঁদের ফুসফুস বাঁচানোর তাগিদে। চট্টগ্রামের আকাশে-বাতাসে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এ জোরালো কন্ঠের আওয়াজ গান-কবিতা-বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। সকলে সমবেত হয়ে একটি কথাই বলছেন, “সিআরবিতে কোনও হাসপাতাল নয়”।

শতবর্ষী গাছগুন থাক/ হসপিটাল সরে যাক
কাজল কান্তি দে
আঁরা মিন্নত গরি বাগান বানায়
চোরহাডায় চোখ পাগায়,
আঁরা হউস গরি পাখি পালায়
মোয়াবে নামি খায় ফালায়
অওরগো ক্ষেতত ভূত ঢুকিলে
তোয়ায় লইবার উপায় নাই।।

কন্‌ লাডর পুত্‌ কালাইয়া বোলে
হাম্‌ দরদী হয় গেইয়ে
গাছ গাছালি কাডি ছিরি
হসপিটাল দিবার খাইশ হয়ে
হারা দু্‌ইন্যা ফালাইয়ারে
সাত রাস্তার হেড়ত ঢুইকতো চায়।।

ঘরর শত্রু বিভিষণ
তারা একজোট হইয়ে
দাইর্‌গা পুডির হঙ্গে রেল
কোম্পানীরে ভিড়াইয়ে
বারা বান্দনীর পোয়া চেয়ার পাইলে
আসমান ছুঁইতো চায়।।

বেল পড়িলে হাপায় নিপায়
শিরিষ গাছ তলায়
পোয়া বুড়া জিড়াইয়ারে
নিয়ঁস ফালায় শান্তি পায়।
নববর্ষের মিলন মেলা বলী খেলা
চাইআরে প্রাণ জুড়ায়।।

হট্টা মানুষ ঠঁশা চাআর
খাপ্‌ দিয়ারে চায়
তারার মুখত মেডা দিইয়ে
কাগজর্‌ বোন্দায়
অইন লইয়ারে ন-খেলিছ আর
তৈয়ার আঁরা জান দিবার লাই।।

সিআরবি’র বাইরে হাসপাতাল চাই
এস এম সালাহ্‌উদ্দিন সামির
আমরা কখনই হাসপাতাল বিরোধী নয়, হাসপাতাল চাই, তবে চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস খ্যাত অপূর্ব সৌন্দর্যের সমারোহ সিআরবি কে কেন্দ্র করে হাসপাতাল আমরা কখনই চাই না। একটা ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠলে সেটাকে কেন্দ্র করে আরো আরো অব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে তা সিআরবি র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই বিঘ্নিত হবে। চট্টগ্রামে রেলওয়ে, বন্দর কতৃপক্ষের অনেক অনেক খাস জায়গা পড়ে আছে। সেখানে বৃহৎভাবে হাসপাতাল নির্মাণ করা যায় কিনা ভেবে দেখার সময় এসেছে। আমরা চাই সিআরবিকে বাদ দিয়ে অন্যত্র একটি মানসম্মত হাসপাতাল হোক।

সিআরবিকে রক্ষা করা একান্ত জরুরি
আসাদুজ্জামান সম্রাট
চট্টগ্রাম নগরীর ‘ফুসফুস’ খ্যাত একটি ঐতিহাসিক স্থান হল সিআরবি। তাছাড়া এটি দৃষ্টিনন্দন উঁচু নিচু পাহাড় ও শতবর্ষী বৃক্ষসারি বেষ্টিত সবুজ-শ্যামল এবং বৈচিত্র্যময় পাখির কোলাহলে পরিপূর্ণ একটি বিশাল নৈসর্গিক এলাকা। শুধু তাই নয়, এটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ও ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান, অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গন হিসেবেও সুপরিচিত ।
চটগ্রামের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এই সিআরবি প্রাঙ্গণে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ উৎসব, নবান্ন উৎসব, পিঠা এবং খাদ্য উৎসব এবং বসন্ত বরণসহ উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে এইখানে উদযাপিত হয়ে আসছে প্রায় দেড় যুগ ধরে ।
সাধারণত সিআরবি একটি সরকারি জায়গা। কিন্তু সরকারি জায়গা নির্মিত হতে যাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবা ভোগ করতে গেলে জনগণকে ভবিষ্যতে নির্ঘাত আর্থিক বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে ।
তাই আমি মনে করি বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকতাদেরকে চট্টগ্রামবাসীর বৃহত্তর কল্যাণের জন্য, নগরীর ফুসফুস খ্যাত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং ঐতিহাসিক স্থান চট্টগ্রামের সিআরবিকে সুরক্ষা করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ।

সি আর বি রক্ষায় এগিয়ে আসুন
এস.এম. মাঈন উদ্দীন রুবেল
চট্টগ্রাম নগরীর বুকে গাছ-গাছালি বেষ্টিত পাহাড় চট্টলার ফুসফুস নামে খ্যাত ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের সিআরবি। যার মাঝে রয়েছে বহু মুক্তিযোদ্ধার সমাধি, শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি। এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহু জ্ঞানী-গুনী, কবি, সাহিত্যিকদের আত্মা ও ভালোবাসা। লোকজনের বৈকালিক হাঁটাহাঁটি ও বিনোদন নেয়ার একটি প্রসিদ্ধ জায়গা। বেসরকারি হাসপাতাল ও কলেজ, নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণে সেই পরিবেশ হবে অশান্তি। হারিয়ে যাবে মুক্ত-চিন্তা, ভাবনা, সুধীজন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের আড্ডা। ধ্বংস হবে পাহাড় বেষ্টিত গাছ-পালা ও পশুপাখি। অঙিজেনের অভাবে ভোগান্তিতে পড়বে সুস্থ-সামাজিকভাবে প্রাকৃতিক হাওয়ায় বেঁচে থাকা মানুষ ও জীব-জন্তু।
বিশ্বের ফুসফুস আফ্রিকার “আমাজান বন” আর চট্টগ্রামের ফুসফুস বলা হয় সিআরবিকে। তাই সিআরবি রক্ষা করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। এমন ক্ষতি চট্টগ্রামের লোকজন মেনে নিতে পারে না। হোক না আরো হাসপাতাল চট্টগ্রামে কিন্তু সিআরবিতে নয় অন্য কোথাও। এতে চট্টগ্রামের মানুষ ধনী হোক আর গরিব হোক উপকৃত হবে কিন্তু সিআরবিকে ধ্বংস করে নয়।

চট্টগ্রাম বাসীর অক্সিজেন বাঁচিয়ে রাখুন
মোহাম্মদ শামশু উদ্দিন ভূইয়া মানিক
নগরীর নান্দনিক সবুজ ছায়া সিআরবিকে বাঁচান। বীর চট্টলার নান্দনিক সবুজ ছায়ায় ঘেরা, শীতল ছায়া আমাদের সিআরবি। আমরা ছোট্ট বেলা থেকে এই মনোরম পরিবেশ আমাদের সুপরিচিত। যে কোন জাতীয় অনুষ্ঠানমালার মধ্যে পহেলা বৈশাখসহ অনেক সামাজিক অনুষ্ঠান এখানে অনুষ্ঠিত হয়। আমরা হাসপাতাল চাই কিন্তু সিআরবি তে নয়। অন্য কোন স্থানে করা হোক। সিআরবি মানে তো শীতল বাতাসে নিঃশ্বাসের এক মাত্র ঠিকানা। আমরা হাসপাতাল চাই চট্টগ্রামের যে কোন জায়গায়। রেলওয়ে একাডেমিতে আছে বিশাল জায়গা যা অলস পড়ে আছে। বা অন্য কোন স্থানে হোক। আমরা সিআরবিকে বাঁচাবো। চট্টগ্রাম বাসীর অক্সিজেন নেওয়ার জন্য সিআরবিকে বাঁচাতে হবে। এই হল আমাদের প্রাণের দাবী।

ঐতিহাসিক সিআরবি-তে বেসরকারী হাসপাতাল চাই না
নৃপতি রঞ্জন বড়ুয়া
সি.আর.বি চট্টগ্রামবাসীর হৃদপিণ্ড। এ হৃদপিণ্ডে আঘাত করলে তা সামাল দেয়া যাবে না। চট্টগ্রামবাসী সি.আর.বি-তে বেসরকারী হাসপাতাল না করার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে এটা সুনিশ্চিত। যারা মুক্তিযুদ্ধের রক্তে ভেজা মাটির উপর ৫০০ বেডের বেসরকারী হাসপাতাল ও ১০০ সিটের মেডিকেল কলেজ করার পাঁয়তারা করছে তাদের খুঁজে বের করে জনতার আদালতে বিচার করার সময় দ্বারপ্রান্তে। এটা সময়ের ব্যাপার। এই সি.আর.বি চট্টগ্রামবাসীর আপামর জনতার দীর্ঘ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার একটি মনোরম ও ঐতিহাসিক স্থান। এটাতে কোনভাবে বেসরকারী হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ করতে দেবে না চট্টগ্রামবাসী এবং তা যেকোন মূল্যে রুখে দেবে।

সিআরবি রক্ষায় এগিয়ে আসুন
টিপলু বড়ুয়া
ইট পাথরে ঘেরা রোবটিক জীবনে যখন মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসে তখন মানুষ বেশি কিছু চায় না। চায় একটু মুক্ত হাওয়া আর নির্মল পরিবেশের একটু সবুজ শীতল ছোঁয়া। শহর চট্টগ্রামে যে ক’টি বিনোদনের স্থান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হলো সিআরবি। ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের সিআরবিতে বেড়ে ওঠা শতবর্ষী বৃক্ষের ছায়ায় এসে মানুষ একটু স্বস্তি পায়। শান্তিতে কিছু সময় অতিবাহিত করার সুযোগ পায়। শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতিসহ সকল বয়সী মানুষের সমাগম হয় এই সিআরবি এলাকায়। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় হচ্ছে কিছু অসাধু, লোভী ব্যবসায়ী এই ঐতিহাসিক স্থান সিআরবি-তে হাসপাতাল স্থাপন করে মানুষের মায়াজড়িত নান্দনিক এই পরিবেশকে নষ্ট করতে চায়। ধ্বংস করতে চায় চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত এই সিআরবিকে। স্বার্থন্বেষী এইসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা অতীব জরুরি। চট্টগ্রামে সু-চিকিৎসার জন্য বৃহৎ আয়তনের হাসপাতাল প্রয়োজন আছে বটে; তবে তা পরিবেশ ধ্বংস করে নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিআইটিআইডি হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান সপরিবারে করোনাায় আক্রান্ত
পরবর্তী নিবন্ধদূষণমুক্ত পরিবেশ গঠনে বৃক্ষরোপণ করুন