সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করতে হবে

| শুক্রবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতির মতো অপরাধ। এর প্রধান কারণ হিসেবে আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা, মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়া, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকা ইত্যাদি বলে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫.৩০ শতাংশ মানুষ বেকার যা আগের বছরের তুলনায় ১.১০ শতাংশ বেশি। অপরদিকে, ধনীরা দিন দিন আরও বেশি সম্পদশালী হচ্ছে এবং দরিদ্ররা আরও বেশি দরিদ্র। ফলে শ্রেণিবৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করছে, যার ফলে সামাজিক চাপ (সোশ্যাল স্ট্রেইন) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারণে অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এবং অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সেই তথ্যে বলা হয়, ২০২১ সালে ডিএমপির আট বিভাগে অপরাধের মামলা হয়েছে ২৭ হাজার ৪৬১টি। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মাদক নিয়ে। এরপর রয়েছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা।

প্রতিদিন গণমাধ্যমগুলোতে আমরা দেখি অপরাধমূলক কর্মতৎপরতা বাড়ছে। পত্রিকার প্রথম পাতায় এসব সংবাদ বেশি শোভা পায়। শুধু যে বাইরে মানুষ এসব অপরাধের সম্মুখীন হচ্ছে, তা নয়, পরিবারের অভ্যন্তরেও অপরাধ সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে ব্যাপক হারে। এর পেছনেও যে অর্থনৈতিক হতাশা একটি বড় কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মধ্যে আবার নতুন উপদ্রব হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধ, যাদের বিচারের অওতায় আনাও সম্ভব নয়। এর সাথে নারী ও শিশু ধর্ষণের সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এরও একটি বড় অংশের সঙ্গে অর্থনৈতিক হতাশা রয়েছে। মাদকাসক্তি এবং মাদকাসক্তি থেকে উদ্ভূত অপরাধের পিছনেও বড় ভূমিকা রয়েছে অর্থনৈতিক হতাশার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান তাঁর এক লেখায় বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এর ফলে মূলত কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা বলতে সংশোধনমূলক কার্যক্রমের অপ্রতুলতা, দীর্ঘ সময়ব্যাপী বিচারব্যবস্থা, কারাগারের অব্যবস্থাপনা, পাকা বা গুরুতর অপরাধীদের সাথে কিশোর অপরাধী এবং নতুন অপরাধীদের এক সেলে রাখা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ইত্যাদি। এসব অব্যবস্থাপনার জন্য কোনো অপরাধী একবার কারাগারে থেকে বের হলেও সে পরবর্তীতে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে ফলে অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হলেও মূলহোতা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, নিষ্পাপ একটি মেয়ের অকালে প্রাণ ঝরে যাওয়া এবং তার পরিবার থানায় কোনো মামলা করার অস্বীকৃতি জানায়। এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামোর উপর সাধারণ জনগণের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া তিনি ইন্টারনেটের সহজলভ্যতাকেও দায়ী করেন এই লেখায়। বলেন, সারাবিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। তবে ইন্টারনেট ব্যবহার সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষ সহজে এর অপব্যবহার করছে। যার ফলে সাইবার ক্রাইম, অনলাইন হ্যারাসমেন্ট, সাইবার বুলিং, পর্নোগ্রাফিসহ অনলাইন ভিত্তিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে উত্তরণ করা, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কাজ বাস্তবায়ন, মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প, পুরো দেশকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা, ইন্টারনেট সুবিধা ফোরজি থেকে ফাইভজির আওতায় আনা ইত্যাদি বহু উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আমাদের সমাজের মানুষের মধ্যে যেভাবে নৈতিকতার অবক্ষয় ও সুবিধাভোগের মানসিকতার সৃষ্টি হচ্ছে এবং তার ফলাফল হিসেবে অপরাধ ও নৃশংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে নিকট ভবিষ্যতে এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় বাধা হিসেবে প্রতীয়মান হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে কোনো ধরনের অপরাধ কেবল মানুষের শান্তিতে জীবনযাপনের অন্তরায়ই নহে, তা অগ্রগতিরও অন্তরায়। এটি বিনিয়োগকেও ব্যাহত করে থাকে। সামাজিক বিজ্ঞানের কথা মাথায় রেখে বলা যায়, একটি অপরাধ আরেকটি অপরাধকে ডেকে আনে।

আমাদের মনে রাখা জরুরি যে, বিশৃঙ্খল ও অপরাধপ্রবণ সমাজে বসবাস করে উন্নতি প্রত্যাশা করা যায় না। আমাদের প্রয়োজন পরিকল্পিত, রুচিসম্পন্ন ও বিন্যস্ত সমাজ। সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে দূর করতে হবে সামাজিক যত অপরাধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধজাপানের জাতীয় দিবস