সাতকানিয়ায় গুলিবিদ্ধ ৭

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় নিজেদের ভিটে ও কৃষিজ জমি রক্ষার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিতে রক্তাক্ত হল উপজেলার চরতী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড উত্তর তুলাতলী গ্রাম। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শঙ্খনদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কৃষকদের উপর গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭ জন কৃষক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। গুলিবিদ্ধ ৭ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ভারী ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছিল। তাদের উত্তোলন করা এইসব বালি রাখা হতো স্থানীয় কৃষকদের জমিতে। দীর্ঘদিন ধরে জমিতে এভাবে বালির স্তূপ করে রাখায় নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছিলেন না স্থানীয় কৃষকরা। এই বিষয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করলেও তাতে কর্ণপাত করেননি বালি উত্তোলনকারী সহ সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে অভিযোগ দেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ও সাতকানিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার কথা ছিল। এতে সকাল থেকে নিজেদের অভিযোগ জানাতে নদীর পাড়ে জড়ো হন শত শত কৃষক। এই সময় বালি উত্তোলনকারীদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে একদল সন্ত্রাসী কৃষকদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ ও আহতরা হলেন- স্থানীয় হাজী ফজর আলীর পুত্র আব্দুল মালেক (৫০), মৃত বশরত আলীর পুত্র মো. নুরুল হাসান (৫০), মৃত মনিরুজ্জামানের পুত্র ফয়েজ আহমদ (৬২), মৃত আবুল হাশেমের পুত্র আবু তাহের (৩৮), মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র মো. কাউছার (২৬), মৃত হাজী আবদুস সালামের পুত্র রুহুল আমিন (৬০), ফয়েজ আহম্মদের পুত্র মো. মানিক (২০), শফিকুর রহমানের পুত্র জিয়াউর রহমান (১৯), হাজী মৃত বদরুজ্জামানের পুত্র মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সিরাজুল ইসলাম (৪৫), বদিউর রহমান (৪০), হাফেজ আহমদ (৫৬), এয়াকুব হোসেন (৫৫), মুহাম্মদ রুবেল (২১), শাহেদুল ইসলাম (২০), মো. রিপন (১৮)। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ প্রথম ৭ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কর্মরত জেলা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দীন তালুকদার জানান, সাতকানিয়ার চরতী থেকে গুলিবিদ্ধ ৭ জনকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। এদের মধ্যে ৬ জনকে ৫ম তলার ২৭ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে এবং ১ জনকে ৪ তলার ২৪নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে নুরুল হাসানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় কৃষক আবদুল শুক্কুর বলেন, সম্প্রতি ড্রেজার মেশিনগুলো উত্তর চরতী থেকে নিয়ে এসে শঙ্খনদীর পাড়ে নোঙর করা হয় এবং পাইপগুলো নদীর পাড়ে রাখা হয়। এসময় বালি উত্তোলনের সাথে সংশ্লিষ্টরা আমাদের বলেন, ‘আমরা এখানে সরকারিভাবে বালি উত্তোলন করবো এবং জমিতে বালি স্তুপ করে রাখা হবে।’ এতে কৃষকরা তাদের কৃষি জমি রক্ষার্থে বালি উত্তোলনে বাধা দিয়ে আসছিলেন। বুধবার রাতে কাউকে কিছু না বলে বালি উত্তোলনকারীরা কৃষকদের ক্ষেতের মাঝখানে পাইপ টাঙানো শুরু করে। এতে তাদের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় কৃষকরা বিষয়টি দেখে শঙ্খনদীর পাড়ে গিয়ে বালি উত্তোলনকারী সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০/২৫ জন আমাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে কমপক্ষে ১৫ জন কৃষক গুলিবিদ্ধ হন। তাদেরকে চমেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চরতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তাকিম চৌধুরী জানান, বালি উত্তোলনকারীরা বালি উত্তোলন করে স্থানীয় কৃষকদের জমিতে রাখছিলেন। কিন্তু কৃষকরা তাদের জমিতে বালি রাখার অনুমোদন দেননি। পরবর্তীতে কৃষকরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে তদন্ত টিম আসার কথা ছিল। মূলত কৃষকরা তাদের অভিযোগ জানাতে শঙ্খনদীর পাড়ে জড়ো হন। এক পর্যায়ে অপেক্ষারত কৃষকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন কৃষক। তিনি বলেন, তারা এখানে দীর্ঘদিন ধরে বালি উত্তোলন করছিলেন। এতে কৃষকদের চাষাবাদে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি শঙ্খনদীর ভাঙনের শিকার হচ্ছে শত শত বসতবাড়ি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে অপ্রপচার চালাচ্ছে। এ ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন বলেও জানান।
এই বিষয়ে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা সকাল থেকে চরতীর তুলাতলী এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নদী ড্রেজিংয়ের কাজ হচ্ছিল। ড্রেজিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের লোকজনের সাথে স্থানীয়দের সাথে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ছড়াগুলিতে এলাকাবাসীর মধ্যে ৩/৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতরা চিকিৎসা নিতে ব্যস্ত থাকায় এখনো এ ব্যাপারে কেউ থানায় অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থল তুলাতলী গ্রাম পরিদর্শন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজেটিতে বিদেশি জাহাজের ধাক্কা
পরবর্তী নিবন্ধআজ থেকে বন্ধ অবৈধ হ্যান্ডসেট