সাকিব, টাকাই কি সব?

মোহাম্মদ আবদুল মালেক | শনিবার , ২০ মার্চ, ২০২১ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ


সাকিব আল হাসান। তুমি শুধু দেশের নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেরও এক বড় সম্পদ। ক্রিকেট বিশ্বে সুদীর্ঘ সময় ধরে তুমিই সেরা অলরাউন্ডার। তোমার সাফল্যে দেশের কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগী আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। তোমার বেদনায়-ব্যর্থতায় ভারাক্রান্ত হয় তাদের হৃদয়। তুমি তোমার পরিশ্রমে, দক্ষতায় আজ ক্রিকেট জগতের সেরা অলরাউন্ডার। এ জন্য আমরা গর্বিত, দেশ গর্বিত।
ক্রিকেটের এত বড় তারকা তুমি। তোমার কাছে টাকাই কি সব হতে পারে? দেশ তোমার জন্য কি কিছুই নয়? তুমি কি চিন্তা করে দেখছ-তোমার আজ যেখানে অবস্থান- সেখানে পৌঁছানোর পিছনে দেশের, জনগণের কোনো কন্ট্রিবিউশন কি নেই? ভেবে দেখেছ, টাকা বড় না দেশ বড়? জীবনের শুরুতে যদি তুমি টাকাকে প্রাধান্য দিতে তাহলে আমাদের কিছুই বলার ছিল না। মধ্যবিত্ত বা গরীব হয়ে জন্মানো কোন অভিশাপ নয়। তবে তা হয়ে মরা ঠিকই অভিশাপ।
তোমার জন্ম মাগুরায়। তোমার বাবা খোন্দকার মাসরুর রেজার মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবাও সামান্য ফুটবল খেলেছেন। সুতরাং বলতে পারি তুমি খেলোয়াড় ঘরানারই ছেলে।
মূলত তোমার আর্থিক সচ্ছলতা আসতে থাকে ২০০৬ সালে ওয়ান ডে ও ২০০৭ সালে টেস্ট ডেবুর পর। ২০১১ সালে আইপিএল ডেবুর পরই তোমাকে আর অর্থের পিছনে তাকাতে হয়নি। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন লিগে প্রচুর খেলে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছ।
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থানরত শিশিরকে বিয়ে করেছ। প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রে গেলে শ্বশুর বাড়িতে থাকলেও পরে উইনকিনসনে বিপুল অর্থ খরচ করে বাড়ি কিনেছ। এতে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তুমি টাকা উপার্জন করেছ- প্রায় সব পয়সাওয়ালা বাঙালিরা একই কাজ করেন। দেশের মধ্যে তুমি বিভিন্ন জায়গায় হেলিকপ্টারে আসা যাওয়া কর। তা করতেই পার। তোমার টাকা আছে- আর তোমার সময়েরও মূল্য অনেক। কিন্তু আমাদের মাথাব্যথা হলো অন্য জায়গায়। তুমি এত টাকার মালিক। মাত্র তিন কোটি বিশ লাখ ইন্ডিয়ান রুপির বিনিময়ে আইপিএল খেলবে বলে দেশের হয়ে নিউজিল্যান্ডে খেলতে গেলে না। তার উপর আবার তোমার বায়না-সব ক্রিকেট ফরমেটে তুমি খেলবে না- যেমন পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ। কারণ মাঠে তোমার এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। কষ্ট হয়।
তুমি এই সব করতে পারছ কারণ সামনে বিশ্বকাপ। তোমাকে ছাড়া বাংলাদেশ দল চিন্তাই করা যায় না। এত টাকা থাকা সত্ত্বেও আইপিএলে জুয়াড়ীদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আইসিসি তোমাকে এক বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করে। ২০২০ সালে অক্টোবরে সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। যে অনুরাগী, ফ্যানরা তোমাকে এত ভালোবাসে তাদের সাথে তোমার দুর্ব্যবহারের অভিযোগও আমাদের পীড়া দেয়।

তুমি বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেললেও দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, জাতীয় লিগ কিংবা বাংলাদেশ লিগে খেল না। কারণ সেখানে অর্থ কম। তবে ঢাকা লিগ কিংবা বিপিএলের সময় ঠিকই তোমাকে পাওয়া যায়।
ক্রিস গেইল কিংবা আফগান ক্রিকেটার রশিদ খানের মত বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা পাকিস্তান সুপার লিগের লোভনীয় সুযোগ ছেড়ে দেশের হয়ে খেলার জন্যে দেশে ফিরে গেছেন। এখন আমার দেশের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ছুটি নিয়ে আইপিএল খেলতে যাবেন-কারণ এতে অনেক টাকা।
ধিক এ ধরনের মানসিকতাকে। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইংলিশ ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার জিওফ্রে বয়কটের সাম্প্রতিক একটা মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘ক্রিকেটারদের মধ্যে ন্যূনতম কৃতজ্ঞতাবোধ থাকা উচিত। তারা আইপিএলে খেলতেই পারে কিন্তু জাতীয় দলের খেলা বাদ রেখে আইপিএল খেলা মেনে নেওয়া যায় না। ক্রিকেটাররা মনে হয় ভুলে যান, দেশের হয়ে পারফর্ম না করলে আইপিএলে তাদের সুযোগ জুটত না।’
শেষে স্যালুট জানাই কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানকে। কারণ সে জানিয়েছে- টেস্ট বা বাংলাদেশ দলে যদি তাকে নেয়া হয় তাহলে সে আইপিএলে না খেলে দেশের হয়ে খেলবে। আইপিএলে তার দামও উঠেছে এক কোটি ভারতীয় রুপি। ধন্য মোস্তাফিজ, ধন্য। তোমাকে নিয়েই আমাদের গর্ব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে আরও ১৮ মৃত্যু শনাক্ত ১৮৯৯
পরবর্তী নিবন্ধপ্রায় ১০ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেয়নি চট্টগ্রামে