সরকার জনগণের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে : গয়েশ্বর

নগর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ।। দিলেন হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩১ জুলাই, ২০২২ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় তিনি বলেন, সেটি (হারিকেন) সরকারকেই ধরিয়ে দিতে হবে। তারপর তারা হেঁটে দেখুক হারিকেন হাতে হাঁটতে কেমন লাগে। এ জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের এই দুর্দশার মধ্যে যদি মাঠে না নামি তাহলে জনগণ ভালো চোখে দেখবে না। বিএনপির জন্ম হয়েছে জনগণের জন্য। নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত থাকলে আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। এ সময় হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচি ঘোষণারও ইঙ্গিত দেন তিনি। সারা দেশে লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে নগর বিএনপি’র আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকালে নগরের পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার। বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
সরকার জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে বলে দাবি করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলেন। এখন জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বলছেন বিদ্যুৎ নেই। সরকারে সমালোচনা করে আরো বলেন, এই সরকারের কাছে দাবি করলে কি জিনিসপত্রের দাম কমবে? বিদ্যুৎ-গ্যাস পাওয়া যাবে? এই সরকার জনগণকে ধোঁকা দেয়। প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে। সরকার প্রধান কখনো সত্য কথা বলেন না। তিনি বলেন, মানুষের আয় নেই। সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। শুধু একটা জিনিসের দাম কমছে। শেখ হাসিনা সরকারে দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের মূল্য কিন্তু প্রতিদিনই কমছে। তিনি বলেন, কার কাছে বিদ্যুতের দাবি করছি। বিদ্যুৎ নাই। মানে শেখ হাসিনার সরকারও নেই।
গয়েশ্বর চন্দ্র আরো বলেন, ক্ষমতায় আসার পর তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, বিদ্যুতের শতভাগ চাহিদা মেটাবেন। রাতারাতি কুইক রেন্টাল করলেন। এর মাধ্যমে কুইক কমিশন বিদেশে পাচার করলেন। এই সরকারের সময় ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। গতকাল শেখ হাসিনা বলেছেন বৈধ রেমিটেন্সের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে। একটা অবৈধ সরকার বলে অবৈধভাবে পাচার হওয়া টাকা নাকি বৈধভাবে আনা যায়। অর্থমন্ত্রীও পার্লামেন্টে এরকম আইন পাশ করলো। আমার মনে হয় অর্থমন্ত্রী অর্থনীতি বুঝেন না। যে টাকা পাচার হয়েছে সেটা তো বৈধভাবে নেননি। তাহলে বৈধভাবে ফেরত আনবেন কীভাবে? যারা পাচার করেছে তারা যদি বৈধতা দিতে না পারে তাহলে যে সকল দেশে পাচারকৃত টাকা আছে ওইসব দেশ যদি বাজেয়াপ্ত করে আপনার কিছু করার আছে। শ্রীলংকার পাচারকৃত টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে আমেরিকায়। সে কারণে দেশটির দুর্দশা।
সরকারের উদ্দেশে এ বিএনপি নেতা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে কত টাকা ব্যয় করেছেন? কুইক রেন্টাল বেসিসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কোন কোন কোম্পানিকে বরাদ্দ দিয়েছেন তাদের তালিকা করুন। কোন কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদনে কতটুকু ক্যাপাসিটি ছিল, সে সব কোম্পানিকে রেশনিং প্রথায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কত ফার্নেস অয়েল দিয়েছেন? তারা ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ ঋণ নিয়েছে? কত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে তার হিসাব আজ জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। এর মাধ্যমে বুঝা যাবে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাঠের টাকার পরিমাণ কত। এই হিসাব চাওয়া অন্যায় নয়। যদি হিসাব না দেন তাহলে বলতে হবে এই সকল দুর্নীতির সঙ্গে সরকার প্রধান জড়িত। যদি জড়িত না হয় তাহলে হিসাব দেবে না কেন।
আন্দোলন-কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল দিচ্ছি না অনেক বছর। ভুলে গেছি, তাই না? হরতাল তো সাংবিধানিক অধিকার। হরতাল দেব না তা তো বলি নাই। অবরোধ সাংবিধানিক অধিকার। অবরোধ অনেকদিন করি না। করব না এমন কথা তো দিই নাই। আপনারা কি হরতাল করতে রাজি না। অবরোধ করতে রাজি না। চট্টগ্রাম বন্দরকে বন্ধ করতে পারবেন না? চট্টগ্রামে রাস্তায় নামলে কেউ যেতে পারবে?
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, শুধুমাত্র লোভের কারণে আজকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অন্ধকারের পথে নিয়ে গিয়েছে সরকার। এখন শহরে ২-৩ ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। শিল্পে ও কৃষিতে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোয় সমস্যা জটিল হয়েছে। দেশে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যই হচ্ছে চুরি ও দুর্নীতি করা।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতিপরায়ন ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রীয় দায়দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র দু-তিন বছরে বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তা এখনো চলমান। বেশ কিছুসংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।
নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, শাকসবজি ও মাছ মাংসের দাম বৃদ্ধির জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনা ও সরকারের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেটই দায়ী। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকারকে এর দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি একটাই, সেটা হচ্ছে জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং তা বিদেশে পাচার করা। এখন আওয়ামী সেই জঞ্জাল সাফ করার সময় এসেছে। দেশকে আওয়ামী জঞ্জালমুক্ত করতে আমাদের প্রত্যেককে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ভূমিকা নিতে হবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, জ্বালানি তেলের লোকসান কমাতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু করেছে সরকার। কিন্তু এই লোডশেডিংয়ের জন্য সরকারের লুটপাটই দায়ী। কারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক আর না হোক, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিকেরা টাকা পাবে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সি. সহ সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব এমএ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আর ইউ চৌধুরী শাহীন, গাজী মো. সিরজ উল্লাহ, মো. কামরুল ইসলাম, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, মহিলাদলের মনোয়ারা বেগম মনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইপিজেড লেবার কলোনিতে ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে দুই যুবককে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি