সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় হেফাজত

| বুধবার , ২১ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতে ইসলামের নেতারা সোমবার মধ্যরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। সেটিকে তারা সরকারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি নিরসনের চেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন। সমপ্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় সংঘাতে জড়ায় হেফাজত। এরপর সরকার সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মামুনুল হককেও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
হেফাজতের নেতারা বলেছেন, তাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই, তারা সরকারকে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নামে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে হেফাজতের নেতারা মূলত নিজেদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
সংগঠনটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না, সেটা তারা বোঝাতে চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এর সমর্থনে তারা ২৬ মার্চের আগে তাদের সংগঠনের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যসহ কাগজপত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, তারা মনে করছেন, সরকার তাদেরকে প্রতিপক্ষ বা রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে দেখছে। সেজন্য তারা সরকারকে বোঝাতে চাইছেন, হেফাজতে ইসলাম সরকারের কোনো প্রতিপক্ষ নয়।
তিনি বলেন, সরকার যেন কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ করে এবং গ্রেপ্তারকৃতরা যাতে আইনগত সব সহায়তা নিতে পারে সে ব্যাপারে তারা সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী বলেছেন, একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সরকারের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় সেটাই মূল বিষয় ছিল। ভুল বোঝাবুঝি তো আছে। এগুলোর নিরসন হলে অগ্রগতি সাধিত হবে ইনশাআল্লাহ। ভুল বোঝাবুঝির কারণেই তো দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তার মানে এই নয় যে আমরা সরকারের ভেতরে ছিলাম। আমরা স্বতন্ত্রভাবেই হেফাজতের কাজ করতেছিলাম।
তিনি বলেন, এর মধ্যে হঠাৎ করে ২৬, ২৭ এবং ২৮ শে মার্চ অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। সেজন্য আমরা মনে করলাম, কিছু আলাপ আলোচনা করলে ভুল বোঝাবুঝির নিরসন হবে। এই ধারণা নিয়ে হঠাৎ বৈঠক (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে) হয়। উভয় পক্ষের কথার মাধ্যমে আশা করা যায় যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনার পর গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে হেফাজত চাপে পড়েছে। হেফাজতের নেতাদের অনেকের বিভিন্ন দলের সাথে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। যদিও সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে দাবি করেছে। কিন্তু তাদের কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে নতুন করে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এসেছে। সেজন্য এখন সংগঠনটির নেতারা নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে বক্তব্য তুলে ধরছেন।
সোমবার রাতে হেফাজতের একদল নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তার বাসভবনে দেখা করতে যাওয়ার আগে হেফাজতের আমির জোনায়েদ বাবুনগরী এক ভিডিওবার্তায় তাদের সংগঠনকে হেফাজত হিসাবে দাবি করে তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কাউকে ক্ষমতায় বসানো, কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য নয়।
হেফাজতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বা সমঝোতার জন্য তাদের সংগঠনের মুরব্বি বা বয়স্ক নেতা যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারাও কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় গিয়েছিলেন হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদীর নেতৃত্বে কয়েকজন বয়স্ক নেতা। সেই আলোচনায় তাদের বক্তব্য ছিল, এখন ‘ঢালাও’ গ্রেপ্তার চলছে। মামুনুল হকসহ তাদের ১০ জনের মতো কেন্দ্রীয় নেতাসহ সারা দেশে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জেহাদী বলেন, ঢালাও গ্রেপ্তার হবে না এমন আশ্বাস তারা পেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে। গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। অনেক নিরীহ মানুষও গ্রেপ্তার হচ্ছে। আমরা এই গ্রেপ্তার এবং হয়রানি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। উনি বলেছেন, নির্দোষ বা কোনো অপরাধ নাই এ ধরনের লোককে হয়রানি করা হবে না। সহিংসতার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে তারা ব্যবস্থা নেবে। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করেছেন তারা।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এটি কোনো বৈঠক ছিল না। এটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। তিনি বলেন, সহিংসতার ঘটনায় মামলা আছে, সেগুলো আইন অনুযায়ী চলবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, তারা তাদের দলের পক্ষ থেকে মনে করেন সহিংসতার ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। সমপ্রতিকালে যে সমস্ত নাশকতা কর্মকাণ্ড করা হয়েছে, বিশেষ করে ২৬, ২৭ এবং ২৮ শে মার্চ এবং এরপরে ৩রা এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রিসোর্টে যে সহিংসতা হয়েছে, এসব ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি অফিসে নাশকতা করা হয়েছে। এই নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়াটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব রাশিয়ার
পরবর্তী নিবন্ধশাপলা চত্বরে সমাবেশের আগে খালেদার সঙ্গে বৈঠক করেন বাবুনগরী