সরকারের নির্বাচনী ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি

আন্দোলন ডাইভার্ট করতে কুমিল্লার ঘটনা : চট্টগ্রামে ফখরুল

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি আর কখনো আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ‘নির্বাচনী ফাঁদে’ পা দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা কাজ করছি। দলকে অতি দ্রুত সংঘঠিত করে জনগণের কাছে চলে গিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে একটি আন্দোলন ও অভ্যুত্থান সৃষ্টি করার। যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করা হবে। এ দেশের মানুষ ভালো করেই জানে, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। জনগণও ভোট দিতে পারবে না। গতকাল শনিবার বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়িস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত নগর বিএনপির কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম। বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির সমালোচনা করেন। কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করেন এবং এ ঘটনার সূত্র ধরে সরকার সারা দেশে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করছে বলেও দাবি করেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্যও সরকারের সমালোচনা করেন। এছাড়া বক্তব্য রাখার সময় দলের কর্মীদের স্লোগান দেয়া, হৈ চৈ করা ও ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কুমিল্লার ঘটনা প্রসঙ্গ : মির্জা ফখরুল বলেন, চট্টগ্রামের ড. হাছান মাহমুদ সাহেব (তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী) বারবার করে বলছেন, এটার (কুমিল্লার ঘটনা) পেছনে নাকি বিএনপি আছে। আরে এসব ঘটনা করাচ্ছেন তো আপনারা। কারণ আপনারা জানেন, জনগণ গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করবে। সেটাকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্যই এসব ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের এজেন্ট আছে। এসব এজেন্ট কুমিল্লায় জঘন্য কাজটি করেছে। আবার সেটাকে সূত্র ধরে চাঁদপুর, নোয়াখালী চৌমুহনীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি চট্টগ্রামেও বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে দাঙা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। নোয়াখালী চৌমুহনীতে পুলিশ-র‌্যাবের সামনে সন্ত্রাসী কিছু লোক, আওয়ামী লীগের লোকেরা ভাঙচুর করল। এখন আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের পাশে ভাইয়ের মত দাঁড়ায়।
সার্চ কমিটি ও তত্ত্বাধায়ক সরকার : ফখরুল বলেন, সরকার সার্চ কমিটির কথা বলছে। কিসের সার্চ কমিটি? যাকে পছন্দ হয় তাকে দিয়ে সার্চ কমিটি করবে। সেই সার্চ কমিটি হুদা মার্কা নির্বাচন কমিশন তৈরি করবে, যারা আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দিয়ে দিবে। ওই ফাঁদে দেশবাসী আর পা দেবে না। তিনি বলেন, মানুষ তো এখন ভোট দিতেই চায় না। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি আস্থা নাই। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ অবস্থা তৈরি হলেই জনগণ ভোট দিতে যাবে।
সরকার মিথ্যাচার করছে : সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কোথাও নাই দাবি করে ফখরুল বলেন, তারা প্রতিমুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে। জনগণের সঙ্গে সবসময় প্রতারণা করছে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) বলেছিল, ১০ টাকায় চাল খাওয়াব, বিনে পয়সার সার দিব এবং ঘরে ঘরে চাকরি দেব। আর এখন ৭০ টাকার নিচে চাল নাই, কৃষকদের তিন থেকে পাঁচগুণ দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে এবং ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছে না উৎপাদিত পণ্যে। বর্তমানে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলেও জেলেদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, চট্টগ্রামে অনেকগুলো ফ্লাইওভার ও ড্রেন পাকা হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে সে ব্যবস্থা আপনারা (সরকার) করছেন না। করোনার দেড় বছরে লকডাউন-লকডাউন খেলা করে মানুষকে জীবিকা অর্জন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। হকার ও ছোট ছোট পুঁজি নিয়ে যারা ব্যবসা করতেন তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তাদের অনেকে এখন বাইক-রিকশা চালাচ্ছেন। ফখরুল দাবি করেন, আওয়ামী লীগ যারা করছে তাদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। গরীব মানুষদের যে আড়াই হাজার টাকা দেবে বলেছে তা ‘আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা’ লুট করে খেয়েছে। পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায়, আওয়ামী লীগ কিভাবে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।
ফেসবুক দিয়ে রাজনীতি হবে না : সভায় কর্মীরা হৈ চৈ করলে রেগে গিয়ে ফখরুল বলেন, চুপ করেন। কি অসভ্যের মত আচরণ করছেন। বিশৃঙ্খলা করার একট সীমা থাকা উচিত। এসময় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ফেসবুকে ছবি দিয়ে আন্দোলন করবেন, এ ধরনের আন্দোলন কখনো সফল হবে না। আমার বয়স এখন ৭৬। আমি অনেক আন্দোলন দেখেছি। যদি গণতন্ত্র ফেরাতে চান, তাহলে সত্যিকারে আন্দোলন করতে হবে। কষ্ট করতে হবে। এ জন্য সেনাপতির নির্দেশ পালন করতে হবে। অমুক দল, তমুক দল, উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম স্লোগান দিয়ে আন্দোলন সফল হবে না।
কর্মী সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, চট্টগ্রামের জনগণ ফ্যাসিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি চায়। ভোট ডাকাত ও মাফিয়া সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকার আবারো ভোটারবিহীন নির্বাচনের খেলায় মেতেছে। জনগণ সেটা সফল হতে দিবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে। সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে দেয়া হচ্ছে না। ফ্যাসিবাদ এই সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে পতন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। আন্দোলনের ডাক দেন। জনগণ পাশে থাকবে। শুধু বক্তব্য দিয়ে চলে গেলে হবে না। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। চট্টগ্রামবাসী যেকোনো কর্মসূচি বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বাস্তবায়ন করবে। নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, আন্দোলনের রূপরেখা চাই।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, শ্রমিক দলের এ এম নাজিম উদ্দিন, মো. মিয়া ভোলা, অ্যাড. আবদুস সাত্তার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, নগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৬শ জনকে আসামি করে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধআট মাসে সর্বনিম্ন মৃত্যু