সম্ভাবনা যখন ‘বাক্সবন্দী’

রেলের ৪শ কটি টাকার ১০ ইঞ্জিন চালু হয়নি তিন মাসেও

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

রেলওয়েতে গতি আনতে ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে দশটি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের বেশি সময় ধরে এগুলো অলস পড়ে আছে। অভিযোগ আছে, সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কারসাজিতে ইঞ্জিনগুলোর একটিও চালু করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও শক্তিশালী ইঞ্জিনগুলো চালু না করায় রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রী ও কন্টেনার পরিবহনে গতি সৃষ্টির সম্ভাবনা ‘বাক্সবন্দী’ হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের অধিকাংশ ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় ইঞ্জিন বিগড়ে যায়। ইঞ্জিনের অভাবে ঠিকভাবে ট্রেন চালানো সম্ভব হয় না। ইঞ্জিনের গতি না থাকায় নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। ‘মালগাড়ি’র চলাচলে লাগে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময়। ট্রেনের যাত্রীসেবা ও কন্টেনার পরিবহনে সময়ক্ষেপণ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সংকট সৃষ্টি করছে। কন্টেনার পরিবহনে সময়ক্ষেপণ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যাহত হচ্ছে রাজস্ব আয়। ইঞ্জিন সংকটই রেলের বড় সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। সংকটের সুরাহা করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। যাত্রীসেবা এবং কন্টেনার পরিবহনের মানোন্নয়নে নেওয়া হয় বিশেষ এই প্রকল্প। কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত হুন্দাই রোটেম কোম্পানির উৎপাদিত ইঞ্জিনগুলো (লোকোমোটিভ) গত সেপ্টেম্বরে আনা হয়। ২২০০ হর্স পাওয়ারের শক্তিশালী এসব ইঞ্জিন মিটারগেজ হলেও এগুলোকে ব্রডগেজে রূপান্তর করার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধরনের ইঞ্জিন দেশে প্রথমবারের মতো আমদানি করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইঞ্জিনগুলো পুরোপুরি অপারেশনে দেওয়ার আগে টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল সম্পন্ন হয়। এতে ইঞ্জিনগুলো থেকে সর্বোচ্চ পারফরমেন্স পাওয়া গেছে। ইঞ্জিনগুলোর ডিজাইন স্পিড ১১০ কিলোমিটার। অর্থাৎ এগুলো ১১০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারবে। লোডেড অবস্থায় টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়ালের লাইনে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিতে চালানো হয়। কিন্তু রেল লাইনের অবস্থা ভালো না হওয়ায় এত গতি নিয়ে দেশে কোনো ট্রেন চালানো সম্ভব হয় না। পণ্যবাহী বগি নিয়ে ইঞ্জিনগুলো ৫০ কিলোমিটার বেগে চলেছে, যা আগের ইঞ্জিনের গতিবেগের প্রায় দ্বিগুণ। পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে চলাচল করার ফলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে কন্টেনারবাহী ট্রেন পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। এতে সময় সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি বেড়ে যাবে ট্রিপ। পণ্য পরিবহন খাতে রেলের রাজস্ব আয় বাড়বে। আমদানিকৃত দশটি ইঞ্জিনের তিনটি পণ্য পরিবহনে এবং সাতটি যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার করা হবে। দশটি ইঞ্জিনই পূর্বাঞ্চলে ব্যবহারের কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ের বহরে থাকা পুরনো ইঞ্জিনগুলো এসি এবং ডিসি অলটারনেট এবং কম ক্ষমতা সম্পন্ন। নতুন লোকোমোটিভগুলো এসি এবং এসি অলটারনেট ও অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন। ইঞ্জিনগুলো অত্যাধুনিক হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক কম।
কথা ছিল ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলো ইঞ্জিন অপারেশনে দেওয়া হবে। কিন্তু দেশে আসার পর তিন মাসের বেশি সময় গত হলেও রহস্যজনক কারণে এগুলো এখন পর্যন্ত অপারেশনে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ইঞ্জিনগুলো যাতে চালু করা সম্ভব না হয় সেজন্য সংঘবদ্ধ একটি চক্র নানাভাবে কারসাজি করছে বলে অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। ইঞ্জিনগুলো টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল রানে সফলতা দেখিয়েছে। ইঞ্জিনগুলোর ব্যাপারে হুন্দাই পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি প্রদান করেছে। এর মধ্যে তিন বছর পুরো ইঞ্জিনের ওয়ারেন্টি এবং পরবর্তী দুই বছর সব ধরনের পার্টসের ওয়ারেন্টি। ইঞ্জিনগুলো বুঝে নেওয়ার পর বসিয়ে রেখে ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ করে ফেললে রেল বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, রেলের বহরে যুক্ত হওয়া দশটি ইঞ্জিন চালু করার পর আগামী বছর আরো বিশটি ইঞ্জিন আমদানির কথা রয়েছে। কিন্তু এই দশটি চালু না হলে নতুন করে ইঞ্জিন আনা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করেন তারা।
ইঞ্জিন এনে চালু না করার ব্যাপারে গতকাল রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়। একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি রেলওয়েকে ধ্বংস করার সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (মেকানিক্যাল) ফকির মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, দশটি নতুন ইঞ্জিনের ট্রায়াল এবং কমিশনিং হয়ে গেছে। ট্রায়ালের রেজাল্ট খুবই ভালো। এখন কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিনগুলো আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে চালানোর নির্দেশনা দিলে আমরা চালাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রপতিকে চিঠি ৪২ নাগরিকের
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬