সমুদ্রে ভাসা দেশ

রেজাউল করিম | বুধবার , ২৯ জুন, ২০২২ at ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ

দেশ সমুদ্রে ভাসছে -এটা শুনে অনেকে আঁতকে উঠতে পারেন। এতদিন ভ্যাটিকানকে বলা হতো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। কেউবা দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপকেও বলে থাকেন। রাষ্ট্র গঠনে যা যা দরকার তার সবই আছে। মাত্র ৫৫০ বর্গমিটারের রাষ্ট্র সিল্যান্ডের বাসিন্দা মাত্র ৩ জন। আছে নিজস্ব পতাকা, পাসপোর্ট, মুদ্রা ও রাজধানী। রূপকথার কোনো কাহিনি নয়, এটা বাস্তবতা। রাজধানী এইচ এম ফোর্ট। মুদ্রা সিল্যান্ড ডলার। বাইরের কোনো দেশের মুদ্রা এখানে চলে না।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি নেই সিল্যান্ডের। তারপরও স্বাধীন হিসেবে পরিচিত আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে ভাসমান দেশটি। আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে দুটি পিলার। তার ওপর রাখা বৃহদাকার পাটাতন। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, এটিই একটি দেশ। অবশ্য এই পাটাতনটি একটি ভবনের উপরভাগ। নিচে আছে বেশ কয়েকটি কক্ষ। আর এটিকেই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দাবি করে আসছে এখানকার বাসিন্দারা। দেশটির প্রাতিষ্ঠানিক নাম প্রিন্সিপালিটি অব সিল্যান্ড। ইন্টারনেটে সিল্যান্ডের নিজস্ব একটি ওয়েবসাইটও আছে। সেখানে সিল্যান্ডের নানা স্মারক, ডাকটিকিট, মুদ্রা ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও সিল্যান্ডের লর্ড, ব্যারন, কাউন্ট প্রভৃতি পদবী কেনা যাবে। সেই সাথে সিল্যান্ডের পাসপোর্ট করে চাইলে ঘুরে আসা যাবে। ইংল্যান্ডের শ্যাফলক উপকূল থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে সিল্যান্ডের অবস্থান।

১৯৪২ সালে প্রথমে একটি ফেরির ন্যায় বিশাল ভাসমান সমতল জাহাজ নেওয়া হয়। এরপর এর উপরে পাটাতন যুক্ত দু’টি কংক্রিটের ফাঁপা টাওয়ার যুক্ত করা হয়। যাতে এর উপরে অন্যান্য কাঠামো তৈরি করা যায়। এই দুই টাওয়ারের প্রতিটি ছিল মোট সাত তলা করে। এগুলো খাবার ও ঘুমানোর ঘর, গুদাম ঘর ও নানা যুদ্ধোপকরণ রাখার কাজে ব্যবহৃত হতো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে অন্যান্য অসংখ্য দুর্গের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এটিকেও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরপর ১৯৬৭ সালে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ নাগরিক মেজর প্যাডজ রয় বেটস ও তার পরিবার এই দ্বীপের স্বত্বাধিকারী হন। তারপর তারাই একে স্বাধীন মাইক্রো রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। এরপর ১৯৭০ সালে এখানে ৫০ জন মানুষ বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে থাকতে আসে। যারা বেশিরভাগ ছিলেন বেটসের বন্ধু এবং তাদের পরিবার। যারা যুক্তরাজ্যের বাইরে এসে নিজেদের মতো করে বাঁচতে চায়। সেসময় এখানে বেশ কয়েকটি ঘর তৈরি করা হয়। শুধু রান্নাঘরই ১০টি। সেসথে থাকার ঘর। বিদ্যুৎ সরবারহ করা হয়। নিয়মিত এখানে নৌকায় করে খাবার, পানীয়, খবরের কাগজ আসত। তবে ধীরে ধীরে তা আসা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৮ সালে আলেকজান্ডার অচেনবাচ নামের এক ব্যক্তি এখানে আসেন। তিনি নিজেকে সিল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী দাবি করে বসেন। বেটসের পুত্র মাইকেলকে তিনি জিম্মি করে রাখেন ৪ দিন।

সিল্যান্ডের উপর সবার নজর ছিল। বেটস তার সমস্ত যন্ত্রপাতি ও ১৫ বছর বয়সী ছেলে মাইকেলকে নিয়ে রাফস টাওয়ারে এসে ওঠে। লড়াইয়ের পর এটি দখল করে নেয়। কিন্তু তবুও এই টাওয়ারটি পরবর্তীতে আর পরিপূর্ণভাবে বেতারকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারেনি। কারণ ১৯৮০ সালে সমুদ্র আইনে কিছু পরিবর্তন এসেছিল।

১৯৬৮ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সিল্যান্ডের কাছাকাছি থাকা কিছু পুরানো সামরিক টাওয়ার ধ্বংস করতে হেলিকপ্টার এবং নৌকা পাঠিয়েছিল। তখন তারা সেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে টাওয়ারগুলো ধ্বংস করতে চেয়েছিল। তবে ধোঁয়া আর শব্দ শুনে বেটস পরিবার খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিল। ২০১২ সালে মেজর বেটসের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী এবং দুই পুত্র বসবাস করছেন। বর্তমানে সিল্যান্ডকে বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। এখানে আছে একটি মাত্র ভবন ও একটি হেলিপ্যাড। যদিও ২০০৭ সালে প্রিন্স মাইকেল সিল্যান্ড বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। অনেকে আগ্রহ দেখানোর পরও মাইকেল তাদের কাছে বিক্রি করেননি। আশ্চর্য মনে হলেও দেশটি খুবই সুন্দর ও পরিপাটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমায়ের ঋণ
পরবর্তী নিবন্ধবন্যার্তদের পাশে কানেক্ট দ্য ডটস