সমাজের সবাইকে শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে

| সোমবার , ৭ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

ভীষণ মন খারাপ করা একটা সংবাদ। পত্রিকায় এসব সংবাদ অহরহ প্রকাশিত হয় যদিও, তবু মনে হচ্ছে এসব সংবাদের নেতিবাচক প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারি না। ৫ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘শিশু ধর্ষণ বাড়ছে’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদটি রীতিমত অনাকাঙ্ক্ষিত। তাতে বলা হয়েছে, দিন দিন বাড়ছে ধর্ষণ ও বলাৎকার। ধর্ষণের পর খুন করা হচ্ছে নৃশংসভাবে। একাধিক সংস্থার হিসাবে গত পাঁচ বছরে প্রতি বছর গড়ে যতটি ধর্ষণ বা বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরে দশ মাসেই তা ছাড়িয়ে গেছে। সেই হিসেবে এ অপরাধ এখন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনায় দায়ের হওয়া অর্ধশতাধিক মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই শিশু এবং কিশোর-কিশোরী, যাদের বয়স পাঁচ থেকে ১৭ বছর। শতকরা হিসাবে ৬০ শতাংশের বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে মেয়ে শিশু। তাদের ফুসলিয়ে অথবা জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানা মিলিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয় ১০৮টি, ২০১৮ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০টিতে। ২০১৯ সালে নগরীতে ধর্ষণের মামলা হয় ১৯৫টি। ২০২০ সালে হয় ২৪৮টি এবং ২০২১ সালে মামলা হয় ২৫১টি। অর্থাৎ প্রতি বছর ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে।

বলতে দ্বিধা নেই যে, সারা দেশে একের পর এক শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শুধু ধর্ষণ করে ক্ষান্ত থাকছে না পাষণ্ডরা, ধর্ষিত শিশুটিকে হত্যা করতে পর্যন্ত দ্বিধা করছে না। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাড়ির আঙিনায়, মাদরাসা, বাসে-লঞ্চে, পথে-ঘাটে-মাঠে বা স্কুলের চার দেয়ালে- শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা কোথাও আজ নেই। শিশু থেকে বয়স্ক নারী কেউই ধর্ষণের কবর থেকে রেহাই পাচ্ছে না। নগর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিনই শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলছে। বিরামহীন ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধিতে মানুষের নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের বিষয়টিই যে সামনে এসে পড়ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবদমনের সংস্কৃতি বৃদ্ধি করছে মানসিকতার বিকৃতি। বাড়ছে ধর্ষণের মতো অপরাধ। এসব রোধে সমাজে সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি সহশিক্ষার প্রসারেও গুরুত্ব দিতে হবে।

শিশু ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ চাই সকল স্তরেই সচেতনতা। এক্ষেত্রে পরিবারকেও ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবারকে তাদের সন্তানের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। মূল্যবোধ ও নীতি নৈতিকতার চর্চার অভাবে দেশে দিন দিন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বৃদ্ধি হচ্ছে। নারী ও পুরুষের মধ্যকার দূষণের ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির মতো অপরাধগুলো সংঘটিত হয়। মানুষের ভেতরে নৈতিকতাকে জাগ্রত করতে হবে। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মাঝে নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ করতে হবে। পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে। নৈতিকতার সঠিক চর্চা সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে পারে।

আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা কোনোভাবেই সমাজে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি না। এটা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা। শিশু ধর্ষণের মতো এ ধরনের উদ্বেগজনক ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। এটা সত্য, সমাজের একশ্রেণির বর্বর পাষাণ্ড মানুষের হাতে অনেকের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ছে; অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। এমনকি শিশুর জীবনও চলে যাচ্ছে। সমাজে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ঠুনকো কারণে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আপনজনের হাতেও শিশুর জীবন চলে যাচ্ছে। কেবল তাই নয়, আমাদের কোমলমতি শিশুরা অবলীলায় ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অথচ শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজ তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান। ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির অভিযোগে বিচার হতে হবে শক্ত। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরপরই অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে এসে অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সকল ধারায় প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারা সমূহকে স্পষ্ট করতে হবে। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার সাপেক্ষে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির রোধের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান জোরদার করতে হবে। বিচার ব্যবস্থার দৌরাত্ম্য হ্রাস করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

সমাজের সবাইকে এক হয়ে এ ধরনের হীন কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সমাজের সবাই সচেতন হলেই এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি দোষীরা যাতে শাস্তি পায় সে দিকটাও নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে