সমস্ত কিছু ছাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন প্রফেসর ডা. ফজলুল করিম

স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, প্রফেসর ডা. এ এস এম ফজলুল করিম ছিলেন বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। বহুগুণে গুণান্বিত একজন আদর্শ মানবিক মানুষ। নীতি নৈতিকতার বিষয়ে তিনি ছিলেন আপোষহীন। সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ছিল তাঁর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য তাঁর ত্যাগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালকে তিনি তাঁর সন্তানের মতো দেখতেন। এই হাসপাতালকে তিনি নিবিড়ভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। এই প্রতিষ্ঠান যতদিন থাকবে ততদিন চট্টগ্রামের মানুষ গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে প্রফেসর ডা. এ এস এম ফজলুল করিমকে স্মরণ করবে।

গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল সেক্রেটারি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম প্রফেসর ডা. এ এস এম ফজলুল করিম স্মরণে নাগরিক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান এসব কথা বলেন।

. মসিউর রহমান আরো বলেন, প্রফেসর ডা. এ এস এম ফজলুল করিমের মতো এমন মানবিক মানুষ বর্তমান সময়ে খুবই বিরল। তিনি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তির নিজের অংশটুকু স্কুলমাদ্রাসাএতিমখানাসহ গরিব মানুষের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে গেছেন। প্রফেসর ডা. এ এস এম ফজলুল করিম সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল আজ বিশাল বট বৃক্ষের মতো মাথা উঁচু করে চট্টগ্রামের বুকে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রতিষ্ঠান যতদিন থাকবে ততদিন চট্টগ্রামের মানুষ গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে প্রফেসর ডা. এ এস এম ফজলুল করিম সাহেবকে স্মরণ করবে।

. মসিউর রহমান বলেন, প্রফেসর ফজলুল করিম পারিবারিকভাবে আমাদের আত্মীয় ছিলেন। দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিককাল যাবৎ তাঁর সাথে আমার পরিচয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত উন্নত নীতি ও নৈতিকতা এবং খুবই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন মানুষ। নিজের পরিবারের প্রতি, আত্মীয়স্বজনের প্রতি, সমাজের প্রতি সর্বোপরি দেশের প্রতি ছিল ওনার অসম্ভব রকমের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রতি ছিল তাঁর ছিল অন্য রকম ভালবাসা। হাসপাতাল পরিচালনা ও হাসপাতালের উন্নয়নে তিনি সবসময়ই চিন্তাভাবনা করতেন। আমার সাথেও এই হাসপাতালকে নিয়ে তাঁর অনেক আলাপ আলোচনা হয়েছে। মূলত সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি মা ও শিশু হাসপাতাল নিয়েই ছিলেন। আজ মা ও শিশু হাসপাতাল বাংলাদেশের একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।

বিশেষ অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যনাক, কান, গলা রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, তাঁর মত সর্বগুণে গুণান্বিত একজন আদর্শ শিক্ষক আজকের সমাজে খুবই বিরল। স্যারকে আজীবন আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে দেখি। স্যার ছিলেন একাধারে একজন চিকিৎসক, একজন শিক্ষক ও একজন দক্ষ প্রশাসক। নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে স্যার ছিলেন সব সময় আপোষহীন। স্যার ছিলেন অসম্ভব ব্যক্তিত্ববান এবং সর্বক্ষেত্রেই একজন সফল মানুষ। ছাত্র জীবন থেকেই স্যারকে আমি অনেক সমীহ ও ভয় করতাম; কর্মজীবনে এসেও সে ভয় আমার কাটেনি। স্যার আজ আমাদের মাঝে নেই, তাঁর কর্মের মাধ্যমে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। প্রিয় শিক্ষক ফজলুল করিম স্যারকে আমি জীবনে কখনো ভুলতে পারবো না। তাঁর মতো এতো বড়, বিশাল হৃদয়ের মানুষ আমি দেখিনি। আপাদমস্তক উনাকে অনুকরণঅনুসরণ করা যায়। করিম স্যারকে আমার শুধু ভয় পেতাম তাই না তাঁকে আমরা শ্রদ্ধা করতাম ভালোবাসতাম। আজকে স্যার নেই, কিন্তু তাঁর স্মৃতিগুলো আমাদের মানসপটে বারবার উঁকি দিচ্ছে।

কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর এম এ তাহের খানের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি মো. রেজাউল করিম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আলহাজ্ব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, চট্টগ্রাম এপোলো ইম্পেরিয়েল হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. রবিউল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এম এ ফয়েজ, ইউএসটিসির সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, সাবেক রোটারি জেলা গভর্নর এম এ আহাদ, সাবেক লায়ন্স জেলা গভর্নর আলহাজ্ব রফিক আহমেদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর ডা. এম মনজুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. ইমরান বিন ইউনুস, চট্টগ্রাম কিডনি হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট ডা. মইনুল ইসলাম মাহমুদ, রোটারিয়ান সাইফুল ইসলাম, এডভোকেট বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি ডা. আঞ্জুমান আরা ইসলাম, ফজলুল করিম স্যারের বড় ছেলে আহমেদ জিয়া করিম, ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ ইয়াছির করিম ও মেয়ে ডা. সুমাইয়া করিম। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেন, প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর ডা. এন আই খান, চমাশিহা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর এ এস এম মোস্তাক আহমেদ, প্রফেসর ডা. ওয়াজির আহমেদ ও প্রফেসর ডা. জালাল উদ্দিন, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক প্রমুখ। সভায় মরহুম প্রফেসর এ এস এম ফজলুল করিমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ উপলক্ষে মরহুম প্রফেসর এ এস এম ফজলুল করিম স্মরণে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। সভায় চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার ব্যক্তিবর্গ, হাসপাতালের আজীবন/ডোনার সদস্যবৃন্দ ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তকর্মচারীগণ উপস্থিত থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশুদের প্রহরে শিশুদের উৎসব
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬