সব জ্বর করোনা নয়; তবুও চিকিৎসা ভোগান্তি

সুবর্ণা বড়ুয়া তুলি | বুধবার , ১১ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

২৮ সেপ্টেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কেমন যেন আলসেমি লাগছিল শরীরে। দুপুর হতে হতে শরীরে হালকা ব্যথা অনুভব হচ্ছিল। বিকাল হতে হালকা মাথা ব্যথার সাথে জ্বর। রাতেও প্রচণ্ড শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, জ্বর। কোন ধরনের সর্দি, কাশি, গলাব্যথা নেই। জ্বরের জন্য ওষুধ খেলাম। পরের দিনও একই অবস্থা, মাথা ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। বিছানা থেকে মাথা উঠাতে পারছি না। সেদিন রক্তের কিছু টেস্ট করালাম, রিপোর্ট মোটামুটি ভালো। কিন্তু মাথাব্যথা আর জ্বরের তীব্রতা বেড়েই চলেছে যা অসহনীয় পর্যায়ে। খাওয়া দাওয়ার মধ্যে পানি ছাড়া আর কিছুই খেতে পারছি না। শরীর ভীষণ দুর্বল,তাই বাসায় নরমাল স্যালাইন দেয়া হল। মাথা ব্যথার জন্য বিভিন্ন ওষুধ দেয়ার পরেও ব্যথা কমছে না বরং বেড়েই চলেছে। মনে হচ্ছে মাথাটা এখন ব্লাস্ট হবে। পরের দিন করোনা টেস্টের সিদ্ধান্ত নেয়া হল যদিও করোনার মত লক্ষণ না। শুধুমাত্র ংবাবৎব যবধফধপযব ্‌ যরময ভবাবৎ. ১ অক্টোবর মাথাব্যথা যখন সহ্য করতে পারছি না, তখন সিদ্ধান্ত হল হসপিটালাইজড হব। কিন্তু কোথায়! আমার হাসবেন্ড ২/৩ ক্লিনিকের নাম বলল। তাকে বললাম ওসব ক্লিনিকে গেলে আমাকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখবে আর তাতে আমার করোনা না হলেও হতে বাধ্য। একটু পর সিদ্ধান্ত হল বাসার কাছাকাছি পরিচিত এক মাঝারি মানের ক্লিনিকে যাব। ক্লিনিকটার প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে আমার হাসবেন্ড ফোন করলে উনি বললেন কোন সমস্যা নেই এখনই নিয়ে আসেন। রাত সাড়ে এগারোটায় গেলাম ক্লিনিকে। কেবিন রেডি। কিন্তু কোন ডাক্তার দেখবেন না। কারণ জ্বরের রোগী মানে করোনা! ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা কমিটির এক ডাক্তার আমার হাসবেন্ডকে ফোন করে বললেন কেন আনলেন এমন রোগী! রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত চিকিৎসা আপনাকেই চালিয়ে যেতে হবে। উনিও করোনার চিকিৎসা শুরু করার পরামর্শ দিলেন!
আমার হাসবেন্ড তার চিকিৎসক বন্ধুদের পরামর্শে চিকিৎসা শুরু হল। ২ তারিখ করোনার স্যাম্পল দিলাম শেভরনে। আর যাবতীয় সব টেস্ট করালাম। রাতে যেসব টেস্টের রিপোর্ট পেলাম তা থেকে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেল করোনা নেই। তারপর দিন থেকে ডিউটি ডাক্তার আর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসতে শুরু করলেন। কিন্তু ক্লিনিকের ওই কর্মকর্তা ডাক্তার করোনা রিপোর্টের জন্য খুবই উদগ্রীব। পরদিন রিপোর্ট আসলো নেগেটিভ। তাতে উনি খুশি হতে পারলেন না, বললেন বিএমএ থেকে আবার করেন! আমরা অবশ্য আগেই বিএমএতে রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছি। ইচ্ছে করছিল যদি এক বোতল করোনাভাইরাস পেতাম তাহলে খেয়ে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট বানাই। তারপরও করলাম টেস্ট, আবার নেগেটিভ। আগের দিনের টেস্টে শুধুমাত্র রিকটেশিয়া ( জরপশবঃঃংরধ) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া স্বল্প মাত্রায় পাওয়া গেছে।এ রোগ সাধারণত আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ায় পাহাড়ে পর্বতে এক ধরনের পোকার কামড় থেকে হয়, এদেশে খুব সামান্য পরিমাণে হয় যারা বনে, পাহাড়ে যায়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বললেন এটা ভাইরাস জ্বর ছাড়া আর কিছুই নয়, আরো দুই দিন অপেক্ষা করে তারপর রিকটেশিয়া নাকি ভাইরাস জ্বর বলা যাবে। আরো দুই দিন অপেক্ষা করলাম মাথাব্যথা কমে না। তখন উনি আরো দুটো ওষুধ এড করে আমার মাথাব্যথা কমালেন যা আমার হাসবেন্ড দুই দিন আগে দিতে বলল। শেষ দুই দিন ওষুধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় অস্থিরতা কবে বাসায় ফিরবো ছেলে মেয়ের কাছে! ছেলে মেয়ে দুটি মা ছাড়া ১০টি দিন কীভাবে পার করছে তা অবর্ণনীয়। যাক, এত কথা লিখলাম, নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে যদি কারো উপকার হয়। সব জ্বর করোনা নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউঠতি বয়সী
পরবর্তী নিবন্ধপ্রয়োজন পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের পরিবর্তন