সব আশা শেষ

জয় অধরা, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেও হার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

টানা তিন ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। তারপরও অনেকেই ক্ষীণ আশা দেখছিলেন। তাও অনেক যদি, কিন্তুর উপর নির্ভর করে। নানা হিসেব-নিকেশের মার-প্যাচে অনেকেই স্বপ্ন দেখছিলেন বাংলাদেশের সেমিফাইনালে যাওয়ার। তবে সে ক্ষীণ আশাও শেষ হয়ে গেল লজ্জার চাদর মুড়িয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম তিন ম্যাচের অন্তত দুটিতে জয়ের অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হতশ্রী ফিল্ডিং আর ছন্নছাড়া বোলিংয়ের কারণে হাতছাড়া হয় দুটি জয়। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ গতকাল পর্যন্ত নিভু নিভু বাতির মত টিকে থাকলেও দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচেই। সাকিবকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। আর সে ম্যাচেই কিনা স্বপ্নের সমাধি হলো। শতরানের নিচে অল আউট হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ। এখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি কেবলই আনুষ্ঠানিকতার এক ম্যাচে পরিণত হয়েছে।
আগের ম্যাচগুলোতে অনেক ব্যর্থতার মাঝেও ব্যাটসম্যানরা কিছুটা হলেও আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছিল। গতকাল সে ব্যাটসম্যানরাও যোগ দিল ব্যর্থতার মিছিলে। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের তোপের মুখে মাত্র ৮৪ রানে অল আউট হওয়া বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরেছে ৬ উইকেটে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নবমবারের মত শতরানের নিচে অল আউট হলো বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে প্রথমবারের মত এক বছরে তিনবার শতরানের নিচে অল আউট হলো বাংলাদেশ। এপ্রিলে অকল্যান্ডে এবং সেপ্টেম্বরে ঢাকায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রানে অল আউট হয়েছিল বাংলাদেশ। আর এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৪ রানে অল আউট হলো। বলা যায় ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণ করে এবার দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে টাইগাররা। নিজেদের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে বধ করা, ওমানে গিয়ে কন্ডিশনিং ক্যাম্প কোনো কিছুই কাজে আসল না। যথারীতি লজ্জা সঙ্গী হলো টাইগারদের। পরাজয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও জয়ের ফলে সেমিফাইনালের পথে থাকল দক্ষিণ আফ্রিকা।
গতকাল বাঁচা মরার লড়াইয়ে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সবুজের পরিবর্তে লাল জার্সি গায়ে মাঠে নামলেও ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের কোন পরিবর্তন হয়নি। দুই ওপেনার টিকে ছিল ২২ রান পর্যন্ত। ৯ রান করা নাঈমকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন রাবাদা। এরপর শুরু টাইগার ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিল। প্রোটিয়াস পেসার রাবাদাকে খেলতে হিমশিম খাওয়া টাইগার ব্যাটসম্যানদের দুই সেরা সৌম্য সরকার এবং মুশফিকুর রহিম ফিরলেন রানের খাতা খোলার আগেই। যার কাঁধে গুরু দায়িত্ব সেই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও অনুসরণ করলেন সৌম্য-মুশফিকদের। যদিও ৩ রান করেছেন তিনি। তরুণ প্রতিভা খ্যাত আফিফ নামেই প্রতিভা হয়ে থাকল। রানের খাতা খোলার সুযোগ হয়নি তারও। একপ্রান্ত ধরে রেখে বেশ লড়াই করে যাচ্ছিলেন লিটন দাশ। কিন্তু তিনিও রণে ভঙ্গ দিলেন। শামসির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন লিটন। রিভিও নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। তবে সতীর্থদের এমন আসা যাওয়ার মিছিলেও ৩৬ বলে ২৪ রান করেছেন লিটন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া শামীম হোসেন চেষ্টা করেছিলেন মেহেদী হাসানকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সিনিয়রদের অনুসরণ না করাটা তার কাছে যেন অন্যায় মনে হলো। তাইতো ১১ রান করে ফিরলেন তিনিও। ভাগ্য ভালা ছিল যে মেহেদী হাসান কিছুটা ব্যাট চালিয়ে ছিলেন। নয়তো আরো বড় লজ্জা পেতে হতো। এই তরুণের ২৫ বলে ইনিংস সেরা ২৭ রান না হলে কি অবস্থা হতো তা সহজেই অনুমেয়। দলের আট জন ব্যাটসম্যান পারেনি দুই অংকের ঘরে যেতে। ১০ বল বাকি থাকতে ৮৪ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন কাগিসো রাবাদা এবং এনরিচ নর্থজি। ২টি উইকেট নিয়েছেন শামসি।
৮৫ রানের হাতের নাগালের মধ্যে থাকা লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম ওভারেই ধাক্কা দেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম ওভারের শেষ বলে রিজা হেনরিকসবে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাসকিন। আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কককেও ভয়ংকর হয়ে উঠতে দেননি মেহেদী হাসান। ১৫ বলে ১৬ রান করা ডি কক বোল্ড হয়েছেন এই স্পিনারের বলে। পরের ওভারে তাসকিনের দ্বিতীয় ধাক্কা। এবার তিনি ফেরান মার্করামকে। ৩৩ রানে তিন উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকাকে এরপর জয়ের দিকে নিয়ে যান ভ্যান ডান দুশান এবং অধিনায়ক ভাবুমা। ৮০ রানের মাথায় গিয়ে ফিরেন দুশান। ২৭ বলে ২২ রান করা দুশানকে ফেরান নাসুম আহমেদ। দারুণ এক ক্যাচ নেন শরীফুল। পরের ওভারেই জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক ভাবুমা। ২৮ বলে ৩১ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরেন প্রোটিয়াস অধিনায়ক। তখনো ৩৯ বল বাকি। তাসকিন নিয়েছেন ২টি উইকেট। ম্যাচ সেরা হয়েছেন অ্যানরিচ নর্টজে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজেল হত্যা দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে কারোরই প্রতিদ্বন্দ্বী নেই