সবার প্রিয় রাসেল

রিয়াজুল হক | বুধবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

তোমরা নিশ্চয়ই জানো শোকের মাস আগস্টে আমরা হারিয়েছি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যকে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড আর ঘটেনি।

তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে মাত্র কয়েক বছর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ গড়ার ডাক দিয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন জাতির পিতা কিন্তু ঘাতকের বুলেট তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ দেয়নি। ১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। নিস্তার পায়নি ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও। তখন তার বয়স কতো জানো? মোটে ১১ বছরের কাছাকাছি। তোমাদের কারো কারো বয়সীই হবে। দেখতে তোমাদের মতোই। খেলাধুলায় ভীষণ উৎসাহ তার। রাজনীতি বুঝার বয়স হয়নি। না হলেও কি হবে, ঘাতকেরা তাকেও রেহাই দেয়নি।

শেখ রাসেলের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। তার নাম রাখা হয়েছিল কার নাম অনুসারে জানো? ঠিকই বলেছো। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় লেখক ও দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নাম অনুসারে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। শৈশবে তোমাদের মতোই দুরন্ত ছিলেন। ছিলেন পরিবারের সকলের অতি আদরের। শিক্ষার্থী ছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভোরে ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি ঘিরে ফেলে।

পাষাণ ঘাতকদের বুলেট ছোট্ট শিশু রাসেলের বুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। পৃথিবী দেখেছিল ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। আমরা হয়েছিলাম জঘন্যতম সেই কলঙ্কের অংশীদার।

সেই সময় কী ঘটেছিলো জানো? চলো বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত কর্মচারী এ এফ এম মহিতুল আলমের কাছ থেকেই না হয় আমরা শুনি। মহিতুল আলমের ভাষ্যমতে, ‘‘রাসেল দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে। বলে, ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তো?’ ওর সেই কন্ঠ শুনে আমার চোখ ফেটে পানি এসেছিল। এক ঘাতক এসে আমাকে রাইফেলের বাট দিয়ে ভীষণ মারলো। আমাকে মারতে দেখে রাসেল আমাকে ছেড়ে দিল। ও কান্নাকাটি করছিল যে ‘আমি মায়ের কাছে যাবো, আমি মায়ের কাছে যাবো।’ এক ঘাতক এসে ওকে বললো, ‘চল তোকে মায়ের কাছে দিয়ে আসি’। বিশ্বাস করতে পারিনি যে ঘাতকরা ছোট্ট শিশুটাকেও হত্যা করবে। রাসেলকে ভিতরে নিয়ে গেল। এরপর ব্রাশ ফায়ার।’’ কী নৃশংস ঘটনা!

তিনি চলে গেছেন প্রায় ৪৯ বছর আগে কিন্তু তার স্মৃতি এখনও আমাদের হৃদয়ে জাগরুক। তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য রয়েছে রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ। তোমরা জানো বাংলাদেশের প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের অন্যতম শক্তিশালী দল শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে এই দলের যাত্রা শুরু। বহুবার ফুটবল লীগের শিরোপা জিতেছে এই দল। এই দলের নামও কিন্তু তার নাম অনুসারেই হয়েছে। ১৯৮৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে শেখ রাসেল জাতীয় শিশুকিশোর পরিষদ। এটি একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন। শেখ রাসেলের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার জন্মদিন ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিন চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আরো অনেক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তোমাদের অনেকেরই হয়তো এ সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছে। তোমরা নিয়মিত এ সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে এবং নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে শেখ রাসেলের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে। সাথে সাথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবদান রাখবে। এসো আমরা সকলে মিলে প্রার্থনা করি যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাসেলের জন্য ভালোবাসা
পরবর্তী নিবন্ধক্ষমা করো রাসেল