শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পেটালেন ইউপি চেয়ারম্যান

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৭ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পেটালেন গোমতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. তফাজ্জল হোসেন। গোমতি বিরেন্দ্র কিশোর (বিকে) উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণির পাঠদান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। গত ১৩ই মার্চ এ ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি পরে জানাজানি হয়। সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

গোমতি বিরেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিন আক্তার জানান, সকালে আমি ক্লাসে পাঠদান করাচ্ছিলাম। এসময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শ্রেণিকক্ষের পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। চেয়ারম্যান বাচ্চাদের পাঠ্য বই থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাস করেন এবং পাঠ্যবই ‘রিডিং পড়তে’ বলেন। বই থেকে বিভিন্ন শব্দার্থ জিজ্ঞাসা করেন। বাচ্চারা ভয়ে রিডিং পড়তে পারে নাই। পরে চেয়ারম্যান রেগে যায়। এ সময় তিনি আমাকে বেত নিয়ে আসতে বললে বিদ্যালয়ের বেতের ব্যবহারে নিষাধাজ্ঞা রয়েছে বলে চেয়ারম্যানকে জানায়। বিদ্যালয়ে বেত না থাকায় আমাকে বাঁশের কনচি নিয়ে আসতে বাধ্য করে। পরে তিনি বাঁশের কনচি দিয়ে ক্লাসের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীদের পেটান। বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদা আক্তার বৃষ্টি, আয়েশা আক্তার জেরি, ঝরনা ত্রিপুরা, ফাহাদুল ইসলাম সিয়াম জানান, ক্লাসে ঢুকে চেয়ারম্যান ইংরেজি ক্লাস কোন স্যার নেন সেটা জিজ্ঞাস করেন। পাঠ্যবই থেকে আমাদের পড়া ধরেছে। আমরা কোন কথা বলি নাই। উনি আমাদেরকে গালিগালাজ করেছে। পরে বেত দিয়ে আমাদেরকে মেরেছে।

বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, যে কেউ প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করলে পারমিশন লাগে। তিনি কারো কাছ থেকে পারমিশন নেয়নি। ঐদিনের ঘটনা ‘অপ্রত্যাশিত’। চেয়ারম্যান বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাস করছেন। শিক্ষার্থীরা উত্তর দিতে না পারায় তাদের বেত্রাঘাত করেছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা জানান, যেদিন চেয়ারম্যান ক্লাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন সেদিন আমি দাপ্তরিক কাজে মাটিরাঙা উপজেলা সদরে ছিলাম। পরে বিদ্যালয়ে আসার পর আমি ঘটনা জানতে পারি। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে আমার অনুমতি বাইরের কেউ ক্লাসে প্রবেশ করতে পারে না। আর ক্লাসে ঢুকে শিক্ষার্থীরে পেটানোর কোন বিধান নেই । বিদ্যালয়ে আমরা বেতও রাখি না।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মো. তফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি মেজাজ হারিয়ে এ কাজটি করেছি। তাদেরকে (শিক্ষার্থী) পাঠ্য বইয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতেই চেয়েছি। এসময় শিক্ষার্থীরা আমার সাথে কোন কথায় বলেনি। পরে ম্যাডামকে বেত আনতে বলেছি। সামনের বেঞ্চের শিক্ষার্থীদের চিকন একটা বাঁশের কনচি দিয়ে আঘাত করেছি। আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। তারা আমার সাথে কথা না বলায় মেজাজ হারিয়েছি।

মাটিরাঙা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতেমা চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমরা গতকালই জানতে পেরেছি। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বেত্রাঘাতের শিকার শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিব। কার্যক্রম চলমান আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে হোটেলে তরুণীর ঝুলন্ত লাশ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রেমিকার বিয়ের খবর শুনে বের হল ঘর থেকে, পরে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার