‘শিল্প এবং সন্তান উভয়ের জন্য সত্য হতে পারছি না’

চিমামান্ডা নগোজি আদিচি | শনিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৪ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

চিমামান্ডা নগোজি আদিচি একজন অনন্য ঔপন্যাসিক যিনি তার শিল্প ও রাজনীতির উভয়ক্ষেত্রের জন্যে ‘সেলিব্রেটি’ আখ্যা পেয়েছেন। নারীবাদী লেখক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ও জনপ্রিয়। সাহিত্যকর্মের জন্য পেয়েছেন বহু পুরস্কার। ৪০ বছরের আদিচি স্বামী ও মেয়ে সন্তানের সাথে নিউইউর্কে থাকেন। তাঁর জন্মভূমি নাইজেরিয়াতে আপাতত থাকছেন না। কাজের সূত্রেই নিউইয়র্কের বিভিন্ন রাস্তায় পরিদর্শনে যান। ‘‘আমি এমন কোনো সময় মনে করতে পারি না যেখানে গল্প বলতে চাইনা’’ আদিচি বলেন। সাথে দুঃখ প্রকাশ করেন, তিনি বিশ্বকে নিয়ে কী ভাবছেন তা বেশিরভাগ সময় বলতে পারেন না বলে।

চিমামান্ডা’র এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন ডেভিড মার্চিস, ভালচার ডট কম পত্রিকার জন্য, ২০১৮ সালে। সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করলেন সাদিয়া মেহজাবিন।

প্রিয় ইজিয়ারোয়েলে’ মেয়েদেরকে আদর করে ডাকা হয়। আমি বেশ আগ্রহী, আপনারও একটি মেয়ে আছে? আপনি কি কখনো ছেলে সন্তান লালনপালন করার কথা ভেবেছেন? অনেকভাবেই মেয়ে সন্তান আর ছেলে সন্তান মানুষ করার মাঝে ভিন্নতা আছে। বিশেষ করে যখন তরুণ পুরুষেরা অতি সহজেই নারী বিদ্বেষী ও শ্রেণিবৈষম্যকারী মনোভাবের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

আমি এটা নিয়ে বেশ চিন্তা করি। যদি আমার একটি ছেলে সন্তান থাকতো তাহলে অবশ্যই আমি তার দুর্বলতাকেও সম্মান করতাম যদিও দুর্বল হওয়া ঠিক নয়। বরং তার দুর্বলতা নিয়ে লজ্জা দেওয়া একটি ভালো কাজ হতে পারে কেননা পুরুষতান্ত্রিক বেশিরভাগ কাজই লজ্জাজনক। এখন যদি আমরা এর উল্টো করি? দুর্বলতার জন্যে লজ্জা দেওয়ার পরিবর্তে দুর্বল না হওয়ার জন্যে লজ্জা দেই? আমি অনুভব করতে পারি, মাঝেমাঝে তাদের জন্যে দুঃখ হয় তবে আমি তা বলতে চাই না।

আহা এটা তো একটি দীর্ঘ সেতু!

[হাসি] হ্যাঁ

আপনি কি মনে করেন মিটু আন্দোলন ক্ষমতা ও লিঙ্গ ধারণায় বহুমাত্রায় অর্থবহ কোনো পরিবর্তন এনেছে?

আমি আশা করেছিলাম হবে কিন্তু এটি হয়নি। মিটু আন্দোলনের সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় এটি একটি জায়গা তৈরি করেছে নারীদের এসব ঘটনায় বিশ্বাস রাখার, যা বৈপ্লবিক। এখন যেকোনো নারীই তাদের গল্প বলতে পারে, জনসাধারণের বিপুল সমর্থন পায় কিন্তু এখনো সম্ভাবনা রয়েছে এর পরিণতিতে হয়রানির শিকার হওয়ার। এরকম আগে হয়নি। ফলে এ আন্দোলনের চারপাশের প্রেক্ষাপট সমস্যায় পড়তে পারে।

সেটি কিভাবে?

এটি এমন এক ধারণা যে, একজন নারী ভালো না হওয়ার আগ অব্দি সে সহানুভূতির যোগ্য নয়। আমি খুবই দুঃখিত, আমি আবারো বর্ণবৈষম্যের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছি তবে কালো পুরুষদের সাথে যা হয় এটি তার অনুরূপ। এদেশে মনে করে, বিশুদ্ধ না হওয়া অব্দি সহানুভূতির যোগ্য নয়। যদি আমরা জানতে পারি যে একটি ছোট ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এবং সে ‘স্কিটোস’ নয় বরং ‘মারিজোয়ানা’ কিনতে গিয়েছে তবে সে সহানুভূতির যোগ্য নয়। সহানুভুতির যোগ্য হতে আমাদের নিখুঁত হতে হবে না, এটি নারীদের জন্যেও সমান প্রযোজ্য। কিন্তু একজন নারীকে যেভাব নির্দোষ বা অসহায় হিসেবে প্রমাণ করানো হয় তা নারীবাদের ধারণাকে হ্রাস করে। যেমন আমরা প্রায়ই বলি, তাকে লোকটির কামরায় যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

যেন নারীকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি এবং যদি খারাপ কিছু ঘটে তবে সে দোষী

সম্ভবত তিনি সে কামরায় গিয়েছেন কারণ তাকে সে পছন্দ করে। এর অর্থ এ নয় সে হয়রানি হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছিল। আমাকে এটি মাঝেমাঝে বেশ বিরক্ত করে যে টিভিতে দেখা যায়, বেশিরভাগ নারী এমন কোনো ঘটনার মধ্য দিয়ে গেলে কান্নাকাটি করে। এসব আমার কাছে অস্বস্তিকর। কেননা একজন নারী কেমন তার মাপঝোঁক করার চেষ্টা করছে। এসবই পুরুষতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করার হাতিয়ার, শুধু পুরুষতন্ত্রই নয় পিতৃতন্ত্রও বটে। আমি এ শব্দগুলো এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম। আমি পুরুষত্ব বলতে চাই না কারণ বেশিরভাগ রায় নারী ও পুরুষদের থেকে আসতে পারে। আমি এমন অনেক নারীকে বলতে শুনেছি যারা ভিক্টিমকে বলছেন, সে ছোট স্কার্ট কেন পরেছিল। আমার একটাই কথা ন্যায়বিচারের জন্যে নারীকে এসব তথাকথিত নিখুঁত হতে হবে না।

প্রথম মেয়ে সন্তান হওয়ার আগেই ‘ডিয়ার ইজিয়ারোয়েলে’ লিখেছিলেন। এখন কি মনে হয় আপনার দেওয়া উপদেশবাণীর কোনো একটা পালন করতে নিজেরই কষ্ট হচ্ছে?

হ্যাঁ আমি লিখেছিলাম (প্রিয় ইজিয়াভেলে) যখন আমি একজন মা ছিলাম না তবে বাস্তবের শিশুর চাইতে কাল্পনিক সে শিশু নিয়ে লেখা সহজ। বইটিতে যে শিশুর নাম বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কিন্তু নিজের থাকাতে আপনি বুঝতে পারবেন যে প্রতিদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা কতটা কঠিন। যখন শিশুকে বড় করছেন তখন মাঝে মাঝে মনে হয় পুরো মহাবিশ্ব আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আপনি দোকানে যাচ্ছেন ‘মেয়েলী নয়’ এমন কিছু খুঁজতে কিন্তু গোলাপী বা এ ধরনের কিছু দেখে অভিভূত হচ্ছেন। এমনকি আমার পরিবার থেকেও আমার সন্তান যে আশীবার্দ পায় তা হলো ভালো স্বামী পাক। যখন এসব দেখি তখন ভাবতে থাকি কিভাবে নারীদের সামাজিকিকরণে পরিবর্তন আনা যায়। বরং অনেক নারীও আমাদের ভেতর এসব পান।

আমরা কিভাবে বুঝি যখন একটি সংস্কৃতি সাম্য থেকে ম্যালিগনেন্টের দিকে এগিয়ে যায়? আমি আমার তিন বছর বয়সী মেয়ের কথা ভাবছি যে কিনা সৌন্দর্যের মান ও ছেলেমেয়ের মধ্যে আচরণগত পার্থক্যগুলো বেছে নিতে শিখছে। তার প্রাপ্ত কোনো মনোভাবে হস্তক্ষেপ করা জরুরি যা আমার জানা প্রয়োজন?

আমি জানি না। এবং আমি এখানে একজন ঘোষিত কার্ড বহনকারী নারীবাদী। তবে বিষয়গুলো অতিরিক্ত না করাই উত্তম, নিশ্চয় আমি একজন পাগল নারীবাদী মা হতে চাই না। আমি মনে করি, মানুষ মূল্যবান হতে চায় বলে কঠোর পরিশ্রম করে এবং চেহারাও এর একটি অংশ। সুতরাং আপনার প্রশ্নের উত্তর হলো আমি জানি না।

সন্দেহ নেই আপনি একজন ভালো ঔপন্যাসিক হওয়ার চেয়েও ভালো নারীবাদী। আপনি কি চান পাঠক আপনার লেখা এ দর্শনগত দিক থেকে পড়ুক?

আমি মতাদর্শগতভাবে পড়তে চাই কেননা আমার কথাসাহিত্য মতাদর্শগত নয়। যদি এমন হতো তবে আমার বেশিরভাগ নারী চরিত্রগুলো ক্ষমতাবান হত বরং তারা তা নয়। সাধারণত আমি এমন কল্পকাহিনী পড়তে পছন্দ করি না যেখানে বেশিরভাগ গল্প আদর্শগত এবং সঠিক কাজ করছে। কখনো যদি স্কুলের কথা বলি, ২০১২ সালে টেডএক্সটক এ নিউইউর্কের একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘একজন নারীবাদী’ হিসেবে। তারা আমাকে প্রশ্ন করতো, ‘আপনার চরিত্র সম্পর্কে নারীবাদীরা কী গ্রহণ করে?’ আমি জানি না চরিত্রটি কখন নারীবাদী হয়ে উঠলো। লেখার সময় এসব কীভাবে ঘটে, সত্যিই আমি জানি না।

আপনার লেখা একটি চরিত্র নিয়ে ভাবছি, যেখানে নারীটি অর্ধ সূর্যের উগুউ। সে চরিত্রটি পুরো বই জুড়ে বেশ সহনশীল এবং পরে দেখা যায় সে একটি গণধর্ষণের শিকার হয়। নিপীড়কের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ ধারণাটি নিষিদ্ধ হয়ে উঠেছে। আমি বুঝতে পারছি, বইটি এক দশক আগে লেখা হয়েছিল। কিন্তু তুমি কি এখন এ চরিত্রের অসুবিধা সম্পর্কে লিখতে বা বলতে পারো?

আমি জানি আপনার প্রশ্নটি মূলত, আমি কি এখনো একই জিনিস লিখব কিনা, সেটা। আমিও সে প্রশ্নটি নিয়ে ভাবছি এবং আমার উত্তর হবে হ্যাঁ। এটি লেখার জন্য একটি খুব কঠিন দৃশ্যর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। এই চরিত্রগুলির মধ্যে প্রধান হলেন হাউসবয় উগুউ, যে শেষ পর্যন্ত নিজেকে বিয়াফ্রানদের পক্ষে যুদ্ধে লড়াই করে সফল হয়। কিন্তু আমার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল দৃশ্যে তার স্বয়ং উপস্থিতি কারণ এটি সত্য ঘটনা। আমি যখন বইটি লিখেছিলাম তখন আমি বেশ গবেষণা করেছিলাম এবং গভীরভাবে যা খুঁজে পেয়েছি তা হ’ল বিয়াফ্রান সৈন্যরা বিয়াফ্রানের মহিলাদের ধর্ষণ করে কারণ এটি যুদ্ধের ক্ষতির কথা বলে। সুতরাং, আবার সত্যের পক্ষেই কথা বলছে। আমি যদি খানিক অর্ধ হলুদ সূর্যের কথা ভাবি তবে উগুউ একজন ভালো মানুষ। যদি যুদ্ধ না হতো, সে হয়তো ধর্ষণ করতো না। তবে বর্তমানে যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমার মাঝে মাঝে অস্বস্তিবোধ হয়, #মিটু কেস অনেক সময় কেসবাইকেস বিষয় হতে পারে।

আপনার কাছে কি এ নিয়ে বাস্তব কোনো উদাহারণ আছে?

আসলে এর কোনো বাস্তব উদাহারণ না দেওয়াই ভালো, আমার অস্বস্তিবোধের জায়গায় নিজেকে যা বোঝাই তা হলো, প্রত্যেক আন্দোলনই নিখুঁত হতে পারে না। আমি এও মনে করি এটি সত্য এবং আমরা একদিন সে বিন্দুতে পৌঁছাতে পারব যেখানে এটি নিখুঁত হবে।

আন্দোলনগুলো কেন সূক্ষ্মতা বহন করতে পারে না?

আন্দোলন এখনো এত নতুন আর দ্ব্যার্থক যে, আমি বুঝতে পারি এর সাথের অনুভূতিগুলো। আমি এও বিশ্বাস করি অপর পক্ষের আসামীরা খুবই খারাপ। এবং আপনি যদি মেনে নেন এটি নিঁখুত তবে এ আন্দোলন যৌক্তিকতা হারাবে। নির্দিষ্ট পরিমাণে পরিত্রাণে বিশ্বাসী আমি, তবে এও সত্য কিছু অপরাধী মুক্তির যোগ্য নয়।

আমি জানি আপনি যদি এসব পুরুষদের নির্দিষ্ট করে কথা বলতে চান না যাদের বিরুদ্ধে যৌন অন্যায়ের অভিযোগ আনা হয়েছে, কিন্তু যখন ঔপন্যাসিক বা অন্যান্য শিল্পীরা এই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন, তখন কি এটি তাদের কাজ সম্পর্কে আপনার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনে?

বেশ জটিল। কিছু অনারীবাদী মানুষ আছে যাদের কাজ আমি পছন্দ করি। আমি ভান করতে যাচ্ছি না যে আমি করি না।

এক্ষেত্রে কি ফিলিপ রথ এই অনারীবাদীদের কাতারে পড়েন?

আজকাল অনেকেই আমাকে বলছেন যে তাদের খারাপ লাগছে কেন আমি ফিলিপ রথকে পছন্দ করি। ফিলিপ রথের নারীবিদ্বেষ নিয়ে আমরা যখন কথা বলি তখন প্রায় তার কাজের মধ্যে মানবতাবাদকে অস্বীকার করা হয়। যা আমার বেশ বিরক্ত লাগে। আমি তার স্ত্রীর সাথে তার আচরণ দেখি। কিন্তু আমাদের অনেক পুরুষই নারীবিদ্বেষী। নারীবিদ্বেষ বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা। হয়তো এমন অনেক পাঠক আছে, যারা ফিলিপের উপন্যাস পড়ে নিজেদের নারীবিদ্বেষী মনোভাবকে মারতে চায়। এটি কি একটু সহজ নয়? সমসাময়িক এমন অনেক ঘটনা আছে যা আমাকে অস্বস্তির ভেতর ফেলে দেয়।

আমরা এমন সময় নিখুঁত হাতে এসব সামলাতে পারদর্শী নই।

আমি মনে করি কিছু উপায়ে নিখুঁত মৃত। কিন্তু আপনি কি অন্য কিছু জানেন যা মারা গেছে? আমি উদারবাম বৃত্তের মতো অনুভব করি, আপনি কি বলতে পারেন বা জানেন না কেন সব ভুল হচ্ছে? আমি ছাত্রদের সাথে কথা বলি এবং কেউ বলবে যে এটা ভয়ানক এবং অন্য সবাই মাথা নাড়বে; আমি ভাবছি যে তাদের অর্ধেকই জানে না কেন এই জিনিসটি ভয়ানক। তারা মূলত প্রশ্ন করতে ভয় পায় এবং ভাবে অন্যদের মত এরাও ভয়ানক।

২০১৬ সালে, আপনি মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে সেই মহান ছোট গল্পটি লিখেছিলেন। তারপর থেকে তার মন মানসিকতা নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা কি পরিবর্তিত হয়েছে?

আমার ভেতর এখনো এ অনুভূতি আছে, সে গল্পে তার চরিত্র এখনো শক্তিশালী অবস্থানে আছে। তার সম্পর্কে আমি অনুভব করি এবং এটি সহানুভূতি এবং করুণার মতো একই মানসিকতার কাজ করে এবং সেই অনুভূতিটি বৃদ্ধি পেয়েছে। আসলে, যখন আমি এই গল্পটি লিখেছিলাম তখন ভেবেছিলাম এটি ট্রাম্পের কন্যা (ইভাঙ্কা) সম্পর্কে। গল্পটিকে দেখেছি যে তিনি (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) কীভাবে অস্থিতিশীল, কিন্তু তার মেয়ে এবং তার স্ত্রীর মতো স্থিতিশীল এবং যুক্তিসঙ্গত ব্যক্তিদের দ্বারা বেষ্টিত। গল্পটির ভিত্তিটিতে একটি খুব নারীবাদী দিকও ছিল, যে তার চারপাশের মহিলারা জানেন যে তারা কী নিয়ে কাজ করছেন।

আগেই বলেছিলেন যে আপনি নিজেকে একজন মতাদর্শিক লেখক হিসাবে মনে করেন না, কিন্তু নারীবাদের জন্য জনসাধারণের মুখপাত্র হতে আপনি কী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? আপনি কি সবসময় একজন জনসাধারণের বুদ্ধিজীবী হতে আগ্রহী ছিলেন, যেভাবে আমরা বলতে পারি আপনি সর্বদা একজন লেখক হতে চেয়েছিলেন?

যখন থেকে আমি লেখা শুরু করি, আমি চেয়েছিলাম লোকে যেন আমার বই পড়ে। আমি কখনোই সে নারীবাদী আইকন হতে চাইনি কেননা মাঝে মাঝে এটি আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে। লোকে বলে, ‘তুমি এ কারণেই এত বিখ্যাত’, কিন্তু আমি তো নিজের কাছে এ কারণে বিখ্যাত নই।

লোকে কেন আপনাকে ঔপন্যাসিকের বদলে নারীবাদী আখ্যা দেয় বেশি?

নারীবাদ একটি সহজ হুক। একদিক থেকে বলতে গেলে, সাহিত্য অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়, এবং হয়তো একজন ঔপন্যাসিকের চেয়ে আমাকে নারীবাদী আইকন হিসেবে চিহ্নিত করা মানুষের জন্য সহজ। কিন্তু আমি সব সময়ই রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলাম। আমরা কীভাবে বিষয়গুলোকে আরও ভাল করে তুলতে পারি তার জ্বলন্ত বিষয়টি আমাকে নারীবাদ সম্পর্কে কথা বলতে বাধ্য করে। এবং আমি বলতে চাই, এটি করা সবসময় আমার শিল্পের জন্য ভাল নয়। আমি আমার সময়ের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু নারীবাদ নিয়ে কথা বলাটা আসে আবেগ থেকে। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে আমরা বিশ্বকে আরও উন্নত করতে পারি।

আপনি কি চিন্তিত ছিলেন যে আপনার শিল্পের জন্য একটি শিশুকে রাখার অর্থ কী হতে পারে?

হ্যাঁ। আমি ভাবতাম যে একজন ভাল মা হতে পারব না কারণ আমি আমার শিল্পের প্রতি এতটাই নিবেদিতপ্রাণ ছিলাম। আমি নিজেকে বলেছিলাম, আমার ভাগ্নে এবং ভাগ্নি আছে যাদের আমি পছন্দ করি, তাদের লালনপালন করতে সাহায্য করেছি, তাই তারা আমার সন্তান হবে। এটা আমি দীর্ঘদিন ধরে ভেবেছিলাম, কারণ আমি অনুভব করেছি যে আমার শিল্প এবং সন্তানের উভয়ের প্রতি সত্য হতে পারছি না।

তবে এখন কি পরিবর্তন হয়েছে?

বয়স বাড়ছে। আমি কৌতুক করতে পছন্দ করি এবং বলতে চাই যে আপনি [একটি সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য] প্রস্তুত যখন আপনার শরীর প্রস্তুত হয় না, এবং যখন আপনার শরীর প্রস্তুত হয়, তখন আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত হন না। আমি মনে করি আপনার কাছে সেরা সময়ে রয়েছে যখন আপনি ২২, কিন্তু ২২ বছর বয়সে আপনি নিজেকেও জানেন না। তারপর যখন আপনি ৩৮ বছর বয়সী এবং নিজেকে জানেন, আপনার ডিম্বক সেরা মানের হয় না। যাই হোক, আমরা অন্য সময় এসব নিয়ে কথা বলব। কিন্তু আমার বাচ্চা হয়ে গেছে এবং এ সম্পর্কে সততার সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। একটি শিশু থাকা লেখার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এটা শুনতে খারাপ লাগছে হয়তো। আপনি যেভাবে সময় কাটিয়েছেন সেভাবে আপনি আপনার সময়ের মালিক হতে পারবেন না। কিন্তু মাতৃত্ব যে অন্য বিষয় এবং আমি পুরুষদের জন্য দুঃখিত বোধ করি যে তারা এর স্বাদ নিতে পারে না। একটি নতুন মানসিক সমতল খুলুন যা আপনার শিল্পকে উজ্জীবিত করতে পারে।

আমি সত্যিই মনে করি মাতৃত্ব শিল্পকে উজ্জীবিত করে। কীভাবে এটি কার্যকর করা হবে তা অন্য প্রশ্ন। কিন্তু একটি সন্তানের জন্মের সাথে আসা আবেগময় প্লেনে অ্যাক্সেস করা এবং সাথে তার চোখ দিয়ে বিশ্বকে দেখতে পারি এবং এমন বিষয়গুলো লক্ষ্য করতে পারি যা আমি তাকে ছাড়া লক্ষ্য করতাম না। আমি সময় হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু অন্যান্য উপায় বেশ সমৃদ্ধভাবে অর্জন করেছি। অন্তত সেই তত্ত্ব নিয়ে এখন কাজ করছি। (সংক্ষেপিত)

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅক্সিজেনে বৃদ্ধাশ্রমে এক মাসের খাদ্য সামগ্রী প্রদান
পরবর্তী নিবন্ধনারীর সমান অধিকার ও নারী দিবস