শিক্ষার মানোন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা জরুরি

| বুধবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ১০। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ। এটি পাসের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড বলা যায়। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এবার ৯৩ হাজার ৮৮৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী কম অংশ নেয়। ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১০২ জন। একইসঙ্গে এবার ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। ১১১টি কেন্দ্রে ২৬৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৪৫ হাজার ৩৩৯ জন এবং ছাত্রী ৪৮ হাজার ৫৪৩ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় (মহানগরসহ) পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬৮ হাজার ৯৯৬ জন, কক্সবাজারে ১১ হাজার ৪৫৪ জন, রাঙামাটিতে ৫ হাজার ১১৫ জন, খাগড়াছড়িতে ৫ হাজার ৪৭১ জন, বান্দরবানে ২ হাজার ৮৫৩ জন পরীক্ষার্থী।

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার উল্লেখ করার মতো। শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল নয়, সব সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। জিপিএ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও ইতিবাচক। তবে পরীক্ষার ফলাফল আকাশচুম্বী হলেও শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। তাঁরা বলেছেন, দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সমপ্রসারণ হলেও শিক্ষার গুণগত মানের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ও বিস্তৃত শিক্ষানীতির অভাব যেমন রয়েছে তেমনি সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং দক্ষ শিক্ষকের অভাবও সুস্পষ্ট।

শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে তাঁরা বলেছেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষার আসলে কোনো অর্থ নেই। শিক্ষা ক্ষেত্রে মানের ক্রমাবনতি রোধ না করতে পারলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। গুগণত শিক্ষা অর্জনে টেকসইকরণসহ বিশ্বমানের শিক্ষা এবং যুগোপযোগী শিক্ষার জন্য যুগোপযোগী নীতি এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষার মান এককভাবে শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল নয়। দেশের সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হলেও বলা যাবে না যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গুণগতমানের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে। শিক্ষার মান নির্ভর করে শিক্ষাক্রমের সফল বিস্তারণ, শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো সুযোগসুবিধা, মানসম্মত শিক্ষক, গুণগত শিক্ষা ও সে শিক্ষার ফলাফলের ওপর। তাই বলা যায়, কেবল ফল বা জিপিএ বৃদ্ধি অথবা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পাসের হিসাব দিয়ে দেশের শিক্ষার মান কোনোভাবেই বিচার করা যায় না। পাস করা বিদ্যার প্রতি আমাদের যত আগ্রহ। নাম্বারের সূচকে আমরা শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করি। বেছে বের করি কে মেধাবী, কে মেধাশূন্য। এই মানদণ্ড এখন সর্বব্যাপী কার্যকর। এর ফলে একজন শিক্ষার্থীর যাবতীয় ধ্যানজ্ঞান, কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণ মার্কস অর্জনের মধ্যে। স্কুলকলেজ, কোচিং বা প্রাইভেট টিচারের কাছে যেখানেই সে শিক্ষা অর্জনের জন্য যাচ্ছে, তাকে ঘুরে ফিরেই ঐ নির্দিষ্ট কয়েকটি সাবজেক্টের নির্দিষ্ট পরিসীমার ভেতরে আটকে রাখা হচ্ছে। ইনিয়েবিনিয়ে ও ক্ষেত্রবিশেষ ধমক দিয়ে বা শাস্তি দিয়ে বাধ্য করা হচ্ছে সে বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করার জন্য। ফলে ছাত্রছাত্রীর মেধা, চিন্তাচেতনা, মননশীলতা ও মূল্যবোধ বিকশিত হবার সুযোগ পাচ্ছে না। সে পথ রুদ্ধ হয়ে থাকছে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ আবশ্যক বলেও মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তাঁরা বলেন, পাসের হার বাড়লেই আমরা বলতে পারব না শিক্ষার মান বেড়েছে। এই যে এ বছর এত শিক্ষার্থী জিপিএ৫ পেল তাদের সবার মান তো এক নয়। আর শিক্ষার মান বাড়াতে বাংলাদেশের মানের শিক্ষা নয়, আমাদের প্রয়োজন বিশ্বমানের শিক্ষা। তাঁদের মতে, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে