শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মসহ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তদন্তে দুদক

সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে একটি টিম গতকাল বুধবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে যান। সেখানে অধ্যক্ষ নুরুল আলমের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন।
তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত আজাদীকে বলেন, শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম এবং কোচিং ফি আত্মসাৎসহ প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে যাই। অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে ১৭ জন শিক্ষক নিয়োগ, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও কোচিং ফিসহ বিভিন্ন তহবিলের অর্থ আত্মসাৎসহ আরো নানা অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে দুদক। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা কমিটিতেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষকে সম্প্রতি বোর্ডে ডেকে আনা হয় বলেও জানা গেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা কমিটির বিকল্প অভিযোগ নিম্পত্তি কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম আজাদীকে বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ অভিযোগ নিস্পত্তি করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নিয়ম রয়েছে। অভিযোগ নিস্পত্তি শেষে আমরা মন্ত্রণালয়কে জানাবো।
এদিকে, অধ্যক্ষ নুরুল আলমের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলেও এখনো তিনি প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বভার ছাড়েননি মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়েও গতকাল বুধবার অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান দুদক কর্মকর্তারা। এ তথ্য নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, অধ্যক্ষের ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো দায়িত্ব ছাড়েন নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে গভর্নিং বডি অনুমোদন দিয়েছে এবং এটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে তিনি (অধ্যক্ষ) দাবি করেছেন।
তবে ৬০ বছর পূর্ণ হলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবশ্যই দায়িত্ব ছাড়তে হবে মর্মে গত ২৭ অক্টোবর নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশির মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়- ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ১১.১১ ধারায় অনুসৃত বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকদের কোনো বিধি বিধান না মেনে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে এবং তা অনুমোদনের জন্য মাউশি বরাবর প্রেরণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চুক্তি ভিত্তিক অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক নিয়োগে উক্ত শিক্ষক বিধি অনুযায়ী ৬০ (ষাট) বছর পূর্তিতে অবসরে গেলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে দায়িত্বভার অর্পণ করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পণ করতে হবে। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষক পদে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের বিষয়টি সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি উক্ত পদের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারবেন।
এই নির্দেশনার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে দায়িত্বভার আবশ্যিকভাবে হস্তান্তরে কঠোর বার্তা দিয়েছে মাউশি।
মাউশি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই নির্দেশনার মূল বার্তা হচ্ছে- বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন থাকলেও অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অবশ্যই ছাড়তে হবে। পরে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ চূড়ান্ত অনুমোদন হলে তিনি ফের দায়িত্ব নেবেন।
উল্লেখ্য, সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবরে সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আলমের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে বলে স্কুল সূত্রে জানা গেছে। সে হিসেবে অক্টোবরের পর তার প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদে থাকার সুযোগ নেই। তবে এখনো তিনি দায়িত্ব ছাড়েন নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকার যুব মহাসমাবেশে চট্টগ্রাম থেকে যাবে কমপক্ষে ৬০ হাজার লোক
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬