শবে বরাত : আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার অপার সুযোগ

| মঙ্গলবার , ৭ মার্চ, ২০২৩ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

শবে বরাত বা মধ্যশাবান। আল্লাহ পাক কোরআনে করিমায় যাকে ‘নিসফে মিন শাবান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরী শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ‘শবেবরাত’ মানে সৌভাগ্যের রজনী। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই বিশেষ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। এ মাসটিতে হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন।

আজ সেই সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবে বরাত। মুসলমানদের কাছে ১৪ শাবান দিবাগত রাত অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতির জন্য তাঁর অসীম রহমতের দরজা খুলে দেন। শাবান মাসের পরই আসে পবিত্র রমজান মাস। শবে বরাত মুসলমানদের দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই রাতের ইবাদতবন্দেগীর গুরুত্ব অপরিসীম।

এবার গত দুবছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে মুসলমানরা পালন করেছে এক অন্যরকম এক শবে বরাত। ছিলো মসজিদগুলোতে মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে নামাজ আদায়ের নির্দেশনা, ছিলো না কোথাও জনসমাগম, ঘর থেকেও মানুষের বাইরে বেরুনোর নিষেধাজ্ঞা ছিলোএমন কঠিন অবস্থায় পালিত হয়েছিলো পবিত্র শবে বরাত। আলহামদুলিল্লাহ বিশ্ব আজ অনেকটা মুক্ত এ মহামারি থেকে। মহা সঙ্কটময় এ করোনাকালীন সময় কাটিয়ে পূর্বের ন্যায় এ বছরও বিশ্বের তাবৎ মুসলিম উম্মাাহ যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ইবাদতের মাধ্যমে পালন করবে এ রাতটি। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতেশবেবরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরেক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন’। ‘শিরক’ ও ‘বিদ্বেষ’ এ দু’টি বিষয় থেকে যারা মুক্ত থাকবেন তারা কোনো অতিরিক্ত আমল ছাড়াই এ রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করবেন। কিন্তু শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে না পারলে অন্য আমল দিয়ে ওই রাতের বরকত ও ক্ষমা লাভ করা যাবে না। দুঃখের বিষয় হলো, শবেবরাতে আমরা অনেক নফল আমল করলেও ওই দু’টি শর্ত পূরণের চেষ্টা খুব কম মানুষই করে থাকি। আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দিন।

আল্লাহতায়ালা যেকোনো সময় তার বান্দার দোয়াপ্রার্থনা কবুল করতে পারেন। তার পরও বছরের এমন কিছু বিশেষ সময়ক্ষণ রয়েছে, যে সময়গুলোর মর্যাদা ও ফজিলত অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। সেসব দিনক্ষণে কৃত ইবাদত, দোয়ামোনাজাতের মর্যাদা বেশি ও সওয়াবের মাত্রা অপরিসীম। এ বিষয়গুলো মুসলমানদের মনে শবেবরাতে ইবাদতবন্দেগি ও বেশি বেশি নেক কাজ করার স্পৃহাকে জাগিয়ে তোলে। ফলে দেশব্যাপী শবেবরাত উপলক্ষে সৃষ্টি হয় এক ধর্মীয় আবহ। যা মানুষের ধর্মীয় বিষয়াদি পালনের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিরাট সহায়ক হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও ভাবগম্ভীর পরিবেশে শবে বরাত পালন করে থাকেন। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান মসজিদে, বাড়িতে নফল নামাজ আদায়, মিলাদ মাহফিল, দানখয়রাতের মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করবেন। শবে বরাতের এই মহিমা সমুন্নত রাখতে হবে প্রতিটি ক্ষণে, যাতে কোনো অশুভ ও অকল্যাণ আমাদের স্পর্শ করতে না পারে। ইসলামের শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের শাশ্বত বাণীর প্রতিফলন ঘটাতে হবে চিন্তা ও কর্মে। ইসলামের শিক্ষা থেকে কখনোই যাতে আমরা বিচ্যুত না হই, সে ব্যাপারেও সদা সজাগ থাকতে হবে। এই রাতে আমরা সবাই আল্লাহর কাছে আবেদননিবেদন করব এবং অশ্রুসিক্ত হয়ে আল্লাহর প্রিয়জনদের পাশে থেকে তার দরবারে এভাবে প্রার্থনা করব, হে আল্লাহ! আমরা অপরাধী! তোমার দরবারে পেশ করার মতো কোনো যোগ্যতা আমাদের নেই, তবে আমরা তোমাকে, তোমার প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, অন্তরে রয়েছে তোমার প্রতি অনুরাগ, জাহান্নামের ভয়, জান্নাত লাভের কামনা, তোমার করুণার কোনো শেষ নেই, তুমি করুণা করে আমাকে মানুষরূপে সৃজন করেছ, লক্ষকোটি নেয়ামতদানে বাধিত করেছ। আর মহান এ রাতে তোমার দরবারে তোমার প্রিয়জনদের সঙ্গে বসে মোনাজাতের সুযোগ দিয়েছ। হে রাহমানুর রাহীম! তুমি করুণা করে আমাদের ক্ষমা করে দাও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে