শপথ নিলেন বাইডেন

দেশবাসীর প্রতি ঐক্যের ডাক

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

তিন দশকের বেশি সময় ধরে এদিনটার প্রতীক্ষা করেছেন জো বাইডেন। অবশেষে এল সেই মুহূর্ত। ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। তাঁর সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার নিলেন কমলা দেবী হ্যারিস। কোভিড বিধিনিষেধ মেনে ছিমছাম অনুষ্ঠানে আগামী চার বছরের জন্য এই গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করলেন ৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন। বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টায় মার্কিন রাজনীতিতে সূচনা হল বাইডেন যুগের। ১২৭ বছরের পুরনো বাইবেলে হাত রেখে শপথ নেন তিনি।
শপথের পর নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এটি আমেরিকানদের দিন। এটি গণতন্ত্রের দিন, ইতিহাস এবং আশা নবায়ন ও সংকল্পের দিন। দেশবাসীর প্রতি ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল, আমেরিকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রের কারণে আজ দিনটি উদযাপন করা সম্ভব হচ্ছে। মানুষ তাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তাদের এ চাওয়ার প্রতি মনযোগ দেওয়া হয়েছে। বক্তব্যে উভয় দলের তাঁর পূর্বসূরিদের ধন্যবাদ দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যারা উপস্থিত হতে পারেননি তাদের প্রতিও ধন্যবাদ জানিয়ে বাইডেন বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি উভয় দলের আমার পূর্বসূরিদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আমাদের সংবিধান এবং তার শক্তি, আমাদের জাতির শক্তি সম্পর্কে অবগত।
শপথের কিছু সময় আগে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে অভিষেক অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন। এর আগেই সেখানে পৌঁছেছিলেন কমলা হ্যারিস ও তার স্বামী ডাও এমহফ। একসঙ্গে তারা ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠেন। সে সময় তাদের স্বাগত জানান মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
অনুষ্ঠানস্থলে আগে থেকেই হাজির ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা। বিচারপতি সোনিয়া সটোমেয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে শপথ পাঠ করান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে শপথ পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। ২০০৯-২০১৩ সালে বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় যে পারিবারিক বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে সেই একই বাইবেল ব্যবহার করেন বাইডেন। বাইবেলটি পাঁচ ইঞ্চি পুরু। ১৮৯৩ সাল থেকে তার পরিবারের সংগ্রহে রয়েছে এটি। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া ছাড়াও ১৯৭৩ সাল থেকে সাত বার সিনেটর হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় প্রত্যেকবারই এটি ব্যবহার করেছেন তিনি।
অভিষেক অনুষ্ঠানস্থলে আগেই এসে উপস্থিত হন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ২০১৬ সালের ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত হন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।
হোয়াইট হাউসে যখন বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে, তখন শেষবারের মতো এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে ফ্লোরিডায় পৌঁছান বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতে তাকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিদায় জানানো হয়। সেখানে তিনি ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
সাধারণত অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রচুর লোকসমাগম হয়। ক্যাপিটল হিলের ওয়েস্ট ফ্রন্টে বহু মানুষ নিবন্ধন করে বা আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার সাধারণের জন্য কোনো আমন্ত্রণপত্র ছিল না। ছিল না নিবন্ধন করে এতে যোগ দেওয়ার কোনো সুযোগ। এই শূন্যতা ঢাকতে ওয়েস্ট ফ্রন্টে বসানো হয়েছে হাজারো মার্কিন পতাকা। বাইরে ভিড় করে থাকা মানুষেরাও এবার থাকছেন না। তবে হোয়াইট হাউজে আসার পথে বাইডেনকে দুয়ো জানাতে রাস্তার দু পাশে ট্রাম্প সমর্থকেরা ঠিকই ছিলেন।
এর আগে ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৮-২০১৬ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। কিন্তু এবার চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। কোভিডের লড়াই তো আছেই, সামলাতে হবে দুর্বল হয়ে পড়া অর্থনীতিকে। ট্রাম্প আমলে কলেবরে বেড়েছে চীনের শক্তি। একই সঙ্গে আছে রাশিয়ার রক্তচক্ষু। এছাড়াও ট্রাম্পের জমানায় সারা বিশ্বেই কমেছে মার্কিন প্রভাব। একের পর এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমেরিকাকে হাসির খোরাক করে তুলেছিলেন ট্রাম্প। এসবকে সামলে এগোতে হবে ডেলাওয়্যারের জো-কে। ১৯৭২ সালে প্রথমবার ডেলাওয়্যার থেকে সিনেটে যান তিনি। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ বিষয়ক কমিটির সদস্য ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। একই সঙ্গে সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন তিনি। প্রথমবার ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌঁড়ে নাম লেখান তিনি। এরপর ২০০৮ সালেও ব্যর্থ হন। কিন্তু প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিজের ডান হাত হিসেবে বেছে নেন ছয় বারের সিনেটরকে। ওবামার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মেডিকেয়ার থেকে ট্যাক্স রিলিফ অ্যাক্ট, বিভিন্ন ইস্যুতে সাফল্য পান তিনি।
বার্নি স্যান্ডার্সের সমাজতন্ত্র দিয়ে যে ভোটে জেতা যাবে না তা বুঝেছিল ডেমোক্যাট ভোটাররা। এলিজাবেথ ওয়ারেন বা কমলা হ্যারিসের ওপরও ভরসা করতে পারেননি তাঁরা। ট্রাম্পকে রুখতে তারা তাই বিশ্বাস রাখেন ঘরের ছেলে ইমেজ সম্পন্ন জো বাইডেনের ওপর। এক শ্রেণির শ্বেতাঙ্গ ভোটকে নিজের দিকে এনে সহজেই ট্রাম্পকে হারিয়ে ৩০৬ ইলেকটরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন বাইডেন। তবে তাঁর জয়ের নেপথ্য বড় ভূমিকা ছিল কমলা হ্যারিসেরও। প্রথমবার কোনও ভারতীয় ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই প্রথমবার কোনও মহিলা হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ফলে দুই হাত উপুড় করে মহিলারা, কৃষ্ণাঙ্গরা ও এশিয়ানরা ভোট দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটদের। আজ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তেও তাঁর মায়ের কথা স্মরণ করতে ভুলেননি কমলা। সব ছেড়ে অনিশ্চিতের পথে যেদিন তামিলনাড়ু থেকে আমেরিকা যান শ্যামলা গোপালন, সেদিন তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে তাঁর মেয়ে একদিন ইতিহাস গড়বে। সেজন্যই হয়তো ল্যান্ড অফ ড্রিমস বলা হয় আমেরিকাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচ শতাংশ সুদে গৃহঋণ পাবেন বন্দরে কর্মরতরা
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্রোহী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা