বিদ্রোহী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

আ. লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিএনপির পুরনো অভ্যাস- জিতলে নির্বাচন ভালো, আর হারলে কারচুপি হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই ধাপে পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে, সবটাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। আমরাও সেটা চাই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে। আর যেন কোনো সহিংসতা না হয় সেজন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, দল থেকে কাউন্সিলর পদে সমর্থন দেয়া হয়েছে। এর বাইরে দল থেকে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে তাদের আর কোনো পদ পদবী দেওয়া হবে না।
তিনি গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংগঠনের দারুল ফজল মার্কেটস্থ কার্যালয়ে যৌথ সভা থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সভায় মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, নৌকার পক্ষে ’৭০ সাল থেকে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। এতে আমাদের সকলের জন্যই একটি নির্ভরশীল জয়যাত্রা সূচিত হবে। সকলকে মনে রাখতে হবে, কোনো অপশক্তি যেন দল ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারপরও আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়নি। বরং গ্রিক পুরাণের ফিনিক্স পাখির মতো ছাইভস্ম থেকে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ কখনো পিছু হটতে জানে না। শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, পেট্রোল বোমায় মানুষ পুঁড়িয়েছে, ১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র এনেছে, কীটনাশক ঔষধ আনতে গিয়ে ১৭ জন কৃষককে গুলি করে খুন করেছে, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে এবং হাওয়া ভবনের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতে যারা দেশকে ধ্বংস করেছে তাদের মুখে গণতন্ত্রের বুলি মানায় না। শেখ হাসিনা ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন- এটাই বীর বাঙালীর মহত্তম অর্জন। তিনি সাংগঠনিক বক্তব্যে বলেন, দলের ভেতরে কোনো বিশৃক্সখলা বরদাস্ত করা হবে না। যারা এসব করছেন তারা সাবধান হয়ে যান, ভবিষ্যতে দলে আপনাদের স্থান হবে না।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন বলেন, ১৯৯৪ সালে প্রয়াত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র পদে বিজয়ী হয়ে চট্টগ্রামের স্বপ্ন পূরণে যে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছিলেন তা একে একে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আমাদের ও আপনাদের জানা উচিত বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনা অন্তপ্রাণ চট্টগ্রাম। কারণ এই চট্টগ্রাম মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঠিকানা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখছেন তার সাথে সকলকেই একাত্ম হতে হবে। এই দায়িত্বটি নেতাকর্মীদের একাগ্রতার সাথে পালন করতে হবে। আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া বেগম বলেছেন, আওয়ামী লীগ অনেক চরাই-উৎড়াই পেরিয়ে দলকে মজবুত ভিত্তি দিয়েছেন শেখ হাসিনা, তা যেন শুধুমাত্র গুটি কয়েক সুবিধাভোগী ব্যর্থ করে দিতে না পারে সে দিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন বলেছেন, আমাদের সকলের লক্ষ্য একটাই- আগামী ২৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা। এজন্য আমাদের কাছে প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটা মুহূর্তও অপচয় করা যাবে না।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ অনেক প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়র নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ, আমি বিশ্বাস করি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মহানগর আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে।
সমাপনী বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, দলের সাংগঠনিক নির্দেশনা এবং বিধি-বিধান প্রত্যেককে মেনে চলতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কেউ সামান্য ছাড় পাবে না।
সভায় বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা যদি দলের প্রতি এবং দলের সভাপতির প্রতি সম্মান প্রদশন করে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ান তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের যারা সহযোগিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় সকল মতভেদ ভুলে আগামী ২৭ জানুয়ারি নৌকাকে জয়ী করতে সকলে ঐক্যমত্য পোষণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ ছালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, এড. সুনীল কুমার সরকার, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিকুল ইসলাম ফারুক, হাসান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ হোসেন, হাজী জহুর আহমেদ, জালাল উদ্দীন ইকবাল, মানষ রক্ষিত, দেবাশীষ গুহ বুলবুল, জোবাইরা নার্গিস খান, দিদারুল আলম চৌধুরী, আব্দুল আহাদ, আবু তাহের, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, শহীদুল আলম, সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব সিআইপি, মীরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান জসীম উদ্দীন, চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল করিম চৌধুরী, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বাকের ভূঁইয়া, পটিয়া পৌর মেয়র হারুনুর রশিদ, হাট হাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলম, ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব, বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী গালিব, বোয়ালখালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধরীসহ মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যকরী নির্বাহী কমিটির সদস্য, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহ্বায়কবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক কার্য্যনির্বাহী সদস্য ও কাউন্সিলর তারেক সোলায়মানের মৃত্যুতে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশপথ নিলেন বাইডেন
পরবর্তী নিবন্ধদায়িত্ব পালন করবেন ২০ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট