পাঁচ শতাংশ সুদে গৃহঋণ পাবেন বন্দরে কর্মরতরা

নীতিমালা প্রণয়ন শুরু

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরতদের গৃহ নির্মাণে ঋণ সুবিধা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতদিন ১২ লাখেরও বেশি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী গৃহ নির্মাণের জন্য মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পেলেও চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই সুবিধার বাইরে ছিলেন। প্রচলিত নিয়মে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা ২০ লাখ টাকা থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেয়ে আসছেন। বিশেষ নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে বন্দরের ছয় হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা কর্মচারীকে এই সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ পান। এই টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারী বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট ক্রয় করতে পারেন। ১০ শতাংশ সরল সুদে যে কোনো ব্যাংক কিংবা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন থেকে এই ঋণ প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করে সরকার, বাকি ৫ শতাংশ দেন ঋণ গ্রহীতা। উপসচিব থেকে সচিব পদমর্যাদা বা জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তারা ২০ বছর মেয়াদি এই ঋণ সুবিধা পান। তবে সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। সরকারি চাকুরিতে স্থায়ী হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ ৫৬ বছর বয়স পর্যন্ত এই ঋণ সুবিধা পাওয়া যায়। সরকারি চাকুরীজীবীরা এককভাবে কিংবা বাড়ি করার ক্ষেত্রে গ্রুপভিত্তিক এই ঋণ নিতে পারবেন। ফ্ল্যাট কেনার জন্যও এই ঋণ দেয়া হয়। তবে ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রেই শুধু ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়। তবে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারি সংস্থার নির্মাণ করা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রেডি ফ্ল্যাটের এই শর্ত শিথিল করা হয়। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সরকারি চাকুরীজীবীদের একটি বড় অংশ এই ঋণ সুবিধা পেয়ে আসছেন। তবে সামরিক, রাষ্ট্রায়াত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এই ঋণ সুবিধার বাইরে রয়েছেন। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে এ ধরনের গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৮’-এর আওতায় এই ঋণ সুবিধা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ছয় হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা কর্মচারী বাইরে ছিলেন।
বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে তাদেরকেও বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণ সুবিধা প্রদানের নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার বা এর বেশি তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহনির্মাণের জন্য এককালীন ৭৫ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা পাবেন। জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা। বেতন স্কেলের নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ ও অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা মূল বেতন বা দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের চাকরিজীবীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা ও অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। আর ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা আট হাজার ২৫০ টাকা থেকে আট হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান, এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন ৩৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের ছয় হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাড়ি নির্মাণের ঋণ সুবিধা আনার প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্টদের উচ্ছ্বসিত করেছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাড়ি নির্মাণের ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। তবে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজয় দিয়ে ফিরল বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধশপথ নিলেন বাইডেন