শত কোটি টাকার সড়কবাতিতে নেই কাঙ্ক্ষিত সুফল

অনেক রাস্তায় জ্বলে না, বাড়ছে ছিনতাইকারীর আনাগোনা।। বৈদ্যুতিক পোল চুরিতে জড়িত চসিকের ২ কর্মচারী বরখাস্ত

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

নগরে শত কোটি টাকা খরচ করে লাগানো সড়ক বাতির কাঙ্ক্ষিত সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাস্তায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্থাপিত সড়কবাতি জ্বলে না। অন্ধকার হয়ে থাকে এলাকা। এতে ওসব এলাকায় বেড়েছে ছিনতাইকারীর আনাগোনা।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সময় সড়কে লাগানো এলইডি বাতির বৈদ্যুতিক পোলের তার চুরির ঘটনাও ঘটছে। মূলত এ কারণেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকা। প্রায় সময় সংশ্লিষ্ট থানায় এ বিষয়ে অভিযোগও করা হয় চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে। তারপরও চুরি থামছে না। আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে এবং এর নিচে এ ধরনের চুরির ঘটনা বেশি ঘটে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক তার ও বৈদ্যুতিক পিলার চুরির সঙ্গে চসিকের কর্মচারীদের কেউ কেউ জড়িত থাকে। চুরির সময় হাতেনাতে ধরাও পড়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি খুলশী থানার ওয়াসার মোড়স্থ খাজ খাজ পেট্রোল পাম্পের সামনে চসিকের ভেঙে পড়া বৈদ্যুতিক পিলার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রকৌশল বিভাগের ৪ নম্বর ডিভিশনের শ্রমিক আজিজ উল্লাহ ও রং মিস্ত্রি বাবুল হোসেন হাতেনাতে ধরা পড়ে। পরদিন তাদের খুলশী থানায় হস্তান্তর করা হয়। জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল এ দু’জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে চসিক।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় সপ্তাহজুড়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি সড়কের সড়কবাতি জ্বলছে না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাটহাজারী সড়কের অক্সিজেন থেকে নন্দীর হাট পর্যন্ত। এছাড়া সার্সন রোডের শুরু থেকে গ্রামার স্কুল পর্যন্ত, খুলশী পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে রেল লাইন পর্যন্ত, অলংকার মোড় থেকে সরাইপাড়া, শুভপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে রশীদ বিল্ডিং, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পুরাতন এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। এ ছাড়া কালুরঘাট থেকে বহাদ্দারহাট পর্যন্ত মাঝে মাঝে বেশ কয়েকটি বাতি জ্বলে না বলে চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন।
এ দিকে আসকার দীঘির পূর্ব পাড়ে কয়েকদিন ধরে সড়কবাতি কিছুক্ষণ জ্বলে আবার বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা জাকের আহমেদ।
এ বিষয়ে চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাশ দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত সপ্তাহে জিইসি মোড়ে ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পে উঠতে বাতি না জ্বলার অভিযোগ ছিল। সেটা আমরা ঠিক করে দিয়েছি। এ ছাড়া অন্য কোথাও বাতি জ্বলছে না এমন তথ্য পাইনি। নিয়মিত আমরা মনিটরিং করি। কোথাও সমস্যা দেখলে মেরামত করে দিই।
এ কর্মকর্তা বলেন, প্রায় সময় এলইডি বাতির পোল চুরির ঘটনা ঘটে। এ কারণেই সমস্যাটা হয়। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট থানায় জানিয়েছি। ফ্লাইওভারে এবং এর নিচে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। কয়েকবার চোর হাতনাতে ধরাও পড়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, তার চুরির ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে কোতোয়ালী, চকবাজার, পাঁচলাইশ, বন্দর, ইপিজেড ও পতেঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট থানা এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তার চুরির ঘটনা বন্ধ হয়নি। সড়কবাতি না জ্বলার কারণ হিসেবে তার চুরির বিষয়ে গত বছরের এপ্রিলে সিএমপি কমিশনারকে চিঠিও দিয়েছিলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
জানা গেছে, গত বছর নাসিারবাদ মহিলা কলেজের সামনে থেকে চসিকের বৈদ্যুতিক পোল থেকে তার চুরি করে পালানোর সময় দুই চোরকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে জনতা। ধৃতরা হচ্ছেন মো. লোকমান হোসেন (৩৩) ও মো.তারেক (২৫)। তাদের কাছ থেকে চুরিকৃত তার ও তার কাটার সরাঞ্জাম জব্দ করা হয়েছিল।
একই বছর ওআর নিজাম রোডের এএনজেড বিল্ডিংয়ের সামনে সিঁিড় দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি বেয়ে উঠে কাটিং প্লাস দিয়ে তার কাটার চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা এক চোরকে দেখে ফেলে। ঘটনাস্থল থেকে সড়কবাতি চোর চক্রের সদস্য মো. ইউসুফ প্রকাশ রুবেলকে (৩১) আটক করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
এর আগেও বিভিন্ন সময় এলইডি বাতির তার চুরির সময় কয়েকজন ধরা পড়ে। এর মধ্যে নগরের আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারে স্থাপিত এলইডি লাইটের তার চুরির সময় শক খেয়ে এক চোর ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে যায়। পরে চসিকের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে নিশ্চিত হন, ওই চোর সিটি কর্পোরেশনের তার চুরি করছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুকুরে মিলল মানুষের কঙ্কাল
পরবর্তী নিবন্ধপানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু নেই : ওয়াসা