রোদ বৃষ্টির গল্প

মিলন বনিক | বুধবার , ৩০ মার্চ, ২০২২ at ১:৩৩ অপরাহ্ণ

রোদেলার স্কুল বন্ধ।
জানলার কাছে রোদেলার পড়ার টেবিল। সে বসে বসে পড়ছে। সকালের মিষ্টি নরম রোদ এসে লাগছে গায়ে। প্রতিদিন সকালে বৃষ্টির মা আসে ময়লা নিতে। রোদেলা অপেক্ষা করছে বৃষ্টির জন্য। মার সাথে রোজ কাগজ কুড়াতে আসে বৃষ্টি। দেখে খুব মায়া হয়। রোদেলার ইচ্ছা বৃষ্টির সাথে বন্ধুত্ব করবে।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। রোদেলা দরজা খুলে দেয়। বৃষ্টি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। রোদেলার মনটা খুশিতে নেচে উঠে। বৃষ্টি প্রথম যেদিন এসেছিল সেদিন চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়েছিল রোদেলার দিকে। কী সুন্দর ঘন কালো চোখ! রোদেলা চোখ ফেরাতে পারেনি। শ্যামলা রং। পরনে ছেঁড়া ময়লা ফ্রক। খালি পা।
পেছনে একটা বড় ময়লার থলে। ময়লা সাফ করার সময় ফেলে দেওয়া কাগজ, স্যান্ডেল, প্লাষ্টিক এসব কুড়িয়ে নেয়। রোদেলা অনেকক্ষণ তাকিয়েছিল। চুলগুলো ঘন কালো। মুখখানা ফ্যাকাসে। কী সুন্দর আদুরে চেহারা। বয়স বড়জোর সাত আট হবে। রোদেলার সমবয়সী। বেশি মুগ্ধ করেছে বৃষ্টির কাজল কালো দুটো চোখ। রোদেলা হাত ধরে সোফায় বসিয়ে জিজ্ঞাসা করে-
তোমার নাম কী।
বিষ্টি।
রোদেলা হেসে বলল-
বিষ্টি না। বল, বৃষ্টি।
বৃষ্টি লজ্জা পেয়েছে। লেখাপড়া জানে না। ঝুম ঝুম বৃষ্টির মধ্যে জন্মেছিল বলে মা নাম রেখেছে বৃষ্টি। বৃষ্টিও জিজ্ঞাসা করল-
তোমার নাম কী।
রোদ।
ওমা! রোদ কারো নাম হয়?
কেন হয় না? আমি রোদ, তুমি বৃষ্টি। কেমন মিলে গেলো। রোদ বৃষ্টি। তুমি আমার বন্ধু হবে?
ক্যামনে? আমি তো ইশকুলে পড়ি না। সারাদিন কাগজ কুড়াই। তাছাড়া—-।
ততক্ষণে রোদের মা স্নান সেরে বের হয়েছে। বৃষ্টিকে সোফায় বসে মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে খুব রাগ করল। রোদ মিনতি করে বলল-
মা, তুমি শুধু শুধু ওকে বকছো। আমিই ওকে এনে বসিয়েছি। বৃষ্টির কোনো দোষ নেই। আমিই তো ওর বন্ধু হতে চেয়েছি।
মা আরও রেগে গিয়ে বলল-
এইটুকুন মেয়ে। আমাকে দোষ-গুণ শেখানো হচ্ছে! তুই জানিস না, ওরা কত খারাপ। সুযোগ পেলে ঐ থলের মধ্যে সব চুরি করে নিয়ে যাবে।
মা যতই বলুক, রোদের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না, এই মেয়ে কিছু চুরি করতে পারে? বৃষ্টির মা বাইরে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েকে বকতে দেখে বলল, ও মা, চইল্যা আয়। বড়লোকের লগে গরিবের বন্ধুত্ব অয় না। বৃষ্টি কাঁধে থলেটা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
রোদেলার মা চেঁচিয়ে বলল, এই দাঁড়া, দাঁড়া। থলেতে কী আছে দেখি। ময়লা থলে। হাত দিতে গিয়েও হাত সরিয়ে নিল। বৃষ্টি কিছু না বলে থলের মুখটা খুলে দেখাল। কয়েকটা কাগজের টুকরো ছাড়া আর কিছুই নেই। লজ্জা পেল রোদেলার মা। তার পর একবার রোদের দিকে তাকিয়ে চলে গেল বৃষ্টি।
রোদেলার খুব খারাপ লাগছে। এ যেন বন্ধুর প্রতি চরম অপমান। বার বার বৃষ্টির নিষ্পাপ চেহারাটা চোখে ভাসছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টির চলে যাওয়া দেখছে রোদ। আর মনে মনে বলছে, তুমি আবার এসো। আমি তোমার বন্ধু হবো। নিশ্চয় হবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল
পরবর্তী নিবন্ধফুলের মৌ