রেমিট্যান্সের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা দরকার

| মঙ্গলবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

প্রবাসীদের আয় দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। ডলার সংকটের এ সময়ে সেই গুরুত্ব আরো বেড়েছে। তাই সরকার প্রবাস আয় বাড়াতে প্রণোদনার পাশাপাশি নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তার ইতিবাচক প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চলতি ২০২২২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীরা। ফলে রেমিট্যান্সের উৎস হিসেবে এখন প্রথম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেক শর্ত শিথিল করায় আগের তুলনায় এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে অর্থ পাঠানো সহজ হয়েছে। এ ছাড়া বৈধ পথে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ডলারের রেটও বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশিদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীরা পেশাগতভাবে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছেন। এসব কারণে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাইডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯৬ কোটি ৬৬ লাখ (.৯৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি।

এ কথা অনস্বীকার্য যে দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশাল ভূমিকা আছে। এরপরও তাঁরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ব্যবস্থাপনা ও সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ব্যবহার নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা দরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈধপথে প্রবাসী আয় বাড়ানো ছাড়া বর্তমানের অর্থনৈতিক সংকট সমাধান হবে না। হুন্ডিতে টাকা পাঠালে শাস্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে হবে, যা বৈধপথ বেছে নিতে উৎসাহ দেবে। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়ানোর পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরে তাঁরা বলেন, ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। সুতরাং প্রণোদনার পেছনে বছরে ৫ হাজার কোটি ব্যয় হলে তেমন কিছু যায় আসে না। সুফল পেতে বাড়ি বাড়ি রেমিট্যান্সের টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. নাশিদ রেজওয়ানা মনির এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেন, বর্তমান সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যে আর্থিক অভিগম্যতাকে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে রেখেছে। রেমিটেন্সের বিষয়টি এই এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে। এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত এই কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের ইচ্ছা আমাদের আছে। এতে সুনির্দিষ্টভাবে রেমিটেন্সের বিষয়েও বলা আছে। ২০২১২২ অর্থবছরে আমরা ২১.০৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিটেন্স পেয়েছি। করোনার মধ্যেও এর আগের অর্থবছরেও আমাদের ২৪.৭৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিটেন্স ছিল। আমাদের রেমিটেন্সের প্রবাহ কিছুটা কমে গিয়েছে। এবছর রেমিটেন্সের ওপর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। মানি লন্ডারিং, হুন্ডি এবং রেমিটেন্স ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ করাএসব বিষয় যদিও আমাদের মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়, তবে আমরা এ বিষয়ে সচেতন। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা জেলা থেকে যখন উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, তখন আমাদের অভিবাসী কর্মীরা আরো সুবিধা পাবেন। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে প্রবাসীদের কল্যাণে অনেকগুলো সেবা আছে। শুধু অভিবাসী কর্মীই নয়, তার পরিবারের জন্যেও অনেক সেবা রয়েছে। ব্যাংকের সেবা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, দেশের বৃহত্তর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই হয়। এই রেমিট্যান্স প্রবাহের দিকে লক্ষ্য রেখেই পদ্মা সেতু করতে আমরা সাহস পেয়েছি। আরো বড় বড় মেগা প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পথে। রেমিট্যান্স এখন আমাদের দাঁড়ানোর শক্তি ও নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। তাছাড়া বেকার সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

বিদেশে জনশক্তি পাঠানো এবং প্রবাসীদের সমস্যাসম্ভাবনা দেখাভাল করার জন্য জনশক্তি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রয়েছে। তাদের আরো সক্রিয় হতে হবে। বিশ্বের কোন কোন দেশের কোন কোন সেক্টরে কখন কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে বা থাকে, তার আপ টু ডেট খবর নিতে হবে এবং তা জনগণকে জানাতে হবে। সেখানে বাংলাদেশীদের চাকরি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ সরকারি উদ্যোগে করা দরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লোকজনকে দক্ষ করার জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে