রাসেল তুমি ভালো থেকো ওপারে

নাজনীন আমান | মঙ্গলবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

১৮ অক্টোবর ১৯৬৪। রাত দেড়টা। বঙ্গবন্ধুর পরিবারে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে শিশু। সেই সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন চট্টগ্রামে। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল। ঘন কালো চুল, মায়া চোখ, কোমল চাহনী দিয়ে সবাইকে মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে ফেললো সেই শিশু। মা, বাবা ও পাঁচ ভাইবোনের আদরের ছিল এই রাসেল। বাবাকে খুব একটা কাছে পাওয়া হয়ে উঠে নি। তারপরও পিতা ও পুত্রের যে টান, তাতে একটুও ভাটা পড়েনি। দুজন দুজনের অন্তপ্রাণ। তবে বাবার অভাব অনেকখানি পূরণ করে দিতেন মা ফজিলাতুন্নেছা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগ পর্যন্ত অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল ছোট্ট রাসেলকে। আর তখন সেই একাকীত্ব দূর করার জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। বাবাকে সে সবসময় দেখে এসেছে কারাগারে। তাকে বলা হয়েছিল বাবার বাড়ি কারাগার আর তার বাড়ি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর। ভীষণ দুরন্ত ও ডানপিটে ছেলে রাসেল। তবে আভিজাত্যপূর্ণ অভিব্যাক্তি ছিল। মায়ায় ভরা মন ছিল তাঁর। গরীব, দুখী মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারত না। কিভাবে সাহায্য করবে তাই নিয়ে অস্থির হয়ে যেত। ভীষণ রকমের পশুপ্রেমীও ছিল বটে। বিড়াল, কুকুর, গরু, মুরগী, কবুতর সবাইকে ভালোবাসতে জানত। মাছ ধরে সেটা ছেড়ে দেওয়া ছিল তার অন্যতম খেলা।
বাবার মত হতে চাইত রাসেল। বাবা যেমন পোশাক পরবে সেও তেমনটাই পড়বে। বাবা তাকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন সফর সঙ্গী করতেন। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন এতে করে বাচ্চাদের মন বিশাল হয়, সকল কিছু শেখার আগ্রহ বাড়ে। দেশকে ভালোবাসত বাবার মত। তাই তো দেশ যখন স্বাধীন হল, বাংলার জনতা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং বাড়ির কাছে ভিড় করতে লাগল। বঙ্গবন্ধু আসলেন সবার সাথে দেখা করতে, জনতার উদ্দেশ্য হাত নাড়িয়ে তাদের অভিনন্দন জানালেন। আর তখন ভিতর থেকে ‘জয় বাংলা’ বলে চিৎকার করে বেরিয়ে এল ছোট্ট রাসেল।
১৫ই আগস্ট, ১৯৭৫। বাংলাদেশের জন্য এক কালো অধ্যায়। কী নৃশংস ভাবে হত্যা করা হল বাংলার স্থপতি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। ছোট্ট রাসেল ও বাদ গেল না। মায়ের কাছে যাব এই কথাতেও মন গলেনি ঘাতকদের। তারা মায়ের কাছে নিয়ে গেল ঠিকই, তবে সবার লাশ দেখে দেখে তবেই না মায়ের কাছে যাওয়া। এরপর হাজারো বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গেল ছোট্ট সোনা রাসেলের বুক। বুকের ভিতর কান্নার ঝড় উঠে। বাংলার মানুষ সেইসব হিংস্র জানোয়ারদের কোনো দিন ক্ষমা করবে না। তাদেরকে যদি বাঙালির মাঝে একবার ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে তারা নিজেরাই নিয়ে নিত সেই হত্যার প্রতিশোধ। পরিশেষে বলি, যেখানে আছ, যেভাবে আছ রাসেল, ভালো থাক। আল্লাহ তোমাকে বেহেশতের শ্রেষ্ঠ মাকাম দান করুন। তুমি ভালো থেকো ওপারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবহেলিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা শেখ রাসেল
পরবর্তী নিবন্ধ‘আমি মায়ের কাছে যাবো’