রামুর বাঁকখালীর ড্রেজিং প্রকল্পের অনিয়ম দেখতে ড্রোন উড়ালেন ইউএনও

আজাদী অনলাইন | সোমবার , ৭ জুন, ২০২১ at ৮:৩১ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে চলমান ড্রেজিং প্রকল্পের নানা অনিয়ম পর্যবেক্ষণ করতে ড্রোন উড়িয়েছেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা।
এ সময় তিনি নদীর বুকে মজুদ করা ড্রেজিংয়ের বালু দ্রুত সরিয়ে নিতে এবং নদীতে তলিয়ে যাওয়া বালু উত্তোলন করে ওই স্থানটি পুনরায় ড্রেজিং করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন। বাংলানিউজ
আজ সোমবার (৭ জুন) দুপুর ২টার দিকে রামুর হাইটুপি ও ভুতপাড়া অংশে কাজ পরিদর্শনে গিয়ে ড্রোন উড়িয়ে বিপুল পরিমাণ বালু পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেন ইউএনও।
এর আগে গতকাল রবিবার (৬ জুন) ‘বাকঁখালীতে ড্রেজিং: শেষ পর্যন্ত নদীর বালু নদীতেই গেল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ওই প্রকল্পের কাজ দেখতে যান ইউএনও।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ‘নদীর বালু নদীতে রেখেই চলছে ড্রেজিং’ ও ২৭ এপ্রিল ‘বাঁকখালী ড্রেজিং: কার্যাদেশের আগেই ৬ কোটি টাকার বালু বিক্রি’ শিরোনামে দু’টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
২৫ এপ্রিল প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওইদিনই কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নদীর বুকে মজুদ করা বালু পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে তুলে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় দেড় মাস হলেও সেই নির্দেশনা মানা হয়নি। আজ সোমবার আবারও একইভাবে সরেজমিনে গিয়ে বাকি বালু সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন ইউএনও।
প্রণয় চাকমা বলেন, “বাঁকখালী ড্রেজিং খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। কিন্তু নদীর দু’পাড়ে বালু রাখার জায়গা না পেয়ে বালুগুলো নদীর বুকে একপাশে মজুদ করেছিল। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেক বালু পানিতে তলিয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “এখন যা বালু আছে দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য বলা হয়েছে। জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলে নদী তীরের উত্তর পাশে যে জমিগুলো আছে সেখানে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ইউএনও বলেন, “ড্রেজিংয়ের বালু নদীতে চলে গিয়ে নদীর যে অংশটি ভরাট হয়ে গেছে সেটি পুনরায় ড্রেজিং করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
আজ সোমবার সকালে আবারো বাঁকখালী নদীতে চলমান ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর নেতারা।
সুজন নেতারা হাইটুপি, ভুতপাড়া, রাজারকুল, আতিক্কাবিবির ঘাটসহ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় সুজনের সহ-সভাপতি মাস্টার কিশোর বড়ুয়া, অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাসেম, অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন, সাংবাদিক আল মাহমুদ ভুট্টোসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সুজনের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ কর জানান, শুরু থেকেই নদীর বুকে বালু মজুদ করার দৃশ্য দেখে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ভারী বর্ষণ শুরু হলেই এসব বালু পুনরায় নদীতে চলে যাবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।
সুজনের নেতাদের দাবি, শুরু থেকে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি থাকলে এমন সমস্যা হতো না।
ড্রেজিংয়ের বালু নিরাপদ দূরত্বে মজুদ না করে কেন নদীর বুকে রাখা হলো, সেই বালুর বড় একটি অংশ নদীতে তলিয়ে গেল, আবার স্বয়ং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিজেরাই স্কেভেটর দিয়ে বালু পানিতে বিলিয়ে দিল, সব মিলিয়ে রামু কক্সবাজারের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ প্রকল্পের সুফল কতটুকু পাওয়া যাবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সুজনের নেতারা।
তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. সরওয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বালুগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি বালু চলে যাওয়ার কারণে যে স্থানটি ভরাট হয়ে গেছে সেগুলো পুনরায় ড্রেজিং করে দেওয়া হবে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বাঁকখালী নদী ড্রেজিং ও খনন করে নদীর নাব্যতা বাড়ানোর মাধ্যমে নৌচলাচলের পথ সুগম করা, দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সাগরে নৌকা/ট্রলার নিরাপদ অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পোতাশ্রয় হিসেবে বাঁকখালী নদী ব্যবহার করা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নদী ভাঙনের হাত থেকে ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য ২০১৬ সালে প্রায় ১৯৫ কোটি ৫৪৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প গ্রহণ করে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পে নদী ২৮ কিলোমিটার ড্রেজিং ছাড়াও রয়েছে ৪.৬৫০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ/ পুনরাকৃতিকরণ, দু’টি রেগুলেটর নির্মাণ ও ১২ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজ। ২০১৬ সালের জুনে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি মাস জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প এটি। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দুই উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ১৯ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। বন্যা থেকে রক্ষা পাবে রামু সদরের তিন লাখ মানুষ। পাশাপাশি নদী ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাবে অন্তত দুই হাজার পরিবার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ার বিলে ১৫ কেজির বোয়াল
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবানের লামায় বৃষ্টির পানিতে খেলতে গিয়ে দুই ছাত্রের মৃত্যু