রাজাকারদের আংশিক তালিকা বিজয় দিবসের আগেই

| সোমবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

আগামী বিজয় দিবসের আগেই একাত্তরের রাজাকারদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে এ সংক্রান্ত সংসদীয় উপকমিটি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ উপকমিটি এরই মধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন উপকমিটির আহ্বায়ক শাজাহান খান।

গতকাল রোববার সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শাজাহান বলেন, আগামী ৭১০ দিনের মধ্যে আমরা একটা মিটিং করব। এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছি। কিছু তালিকা আমরা সংগ্রহ করেছি। আশা করছি আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে আংশিক তালিকা প্রকাশ করবো। পর্যায়ক্রমে আমরা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করব। গত ৯ আগস্ট রাজাকারের তালিকা তৈরি করতে ছয় সদস্যের এই উপকমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। খবর বিডিনিউজের।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কয়েকটি রাজনৈতিক দল পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী। তখন যুদ্ধরত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল। আনসার বাহিনীকে এই বাহিনীতে একীভূত করা হয়েছিল।

প্রথমে এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত শান্তি কমিটির অধীনে থাকলেও পরে একে আধা সামরিক বাহিনীর স্বীকৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। একই রকম আধা সামরিক বাহিনী ছিল আল বদর বাহিনী ও আল শামস বাহিনী। তবে স্বাধীনতাবিরোধী এই বাহিনীগুলোকে সাধারণ অর্থে রাজাকার বাহিনী হিসেবেই পরিচিত বাংলাদেশে। এসব বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সমর্থনে ব্যাপক যুদ্ধাপরাধ ঘটায়। প্রায় এক দশক আগে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর রাজাকারের তালিকা তৈরির দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

এর ধারাবাহিকতায় গত বছর বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতাবিরোধীর তালিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য ওই তালিকা স্থগিত করা হয়। এ বছর জানুয়ারি মাসে সংসদেও এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে। খোদ সরকারি দলের সদস্যরাই এ নিয়ে মন্ত্রী সমালোচনায় মুখর হন। সেসময় মন্ত্রী নতুন করে তালিকা তৈরির কথাও জানান।

উপকমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক শাজাহান খান বলেছিলেন, তারা সংসদ সদস্যের মধ্যে যারা মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছেন, তাদের নিয়ে কাজ করবেন। আর তথ্য নেওয়া হবে যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড থেকে।

এদিকে রোববারের বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে একটি সংসদীয় উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সংগঠন এবং একজন মুক্তিযোদ্ধার পৃথক আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে এ উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি শাহাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কাজী ফিরোজ রশীদ ও মোসলেম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদ্য সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান গণি কমিটির কাছে লিখিত আবেদন করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি মো. ইফতেখারুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান। চিঠিতে তারা এমডির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ করেন।

শাজাহান খান বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টের এমডির অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির জন্য কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী আমরা সাব কমিটি করে দিয়েছি। কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারী মাদরাসায় ব্যারিস্টার আনিস
পরবর্তী নিবন্ধবাড়িতে প্লাস্টিকের বস্তায় ১ লাখ ২৫ হাজার ইয়াবা