রমজানে হাইড্রেটেড থাকবেন কীভাবে

ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল আজিজ | শুক্রবার , ২২ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র রমজান মাসে সকলেই তুলনামূলক কম পানি পান করেন। তার ওপর এবারের রমজান পড়েছে বৈশাখ মাসে। এই সময়টায় প্রায়ই অসহনীয় গরম আবহাওয়া বিরাজ করে। গরমের তীব্রতা হোক কিংবা সিয়াম সাধনা, অনেকেই এই সময়ে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় ভোগেন, যা শরীরের জন্য কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়।
গলা শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, ক্লান্ত লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, বমিভাব, মাথাব্যথা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ডিহাইড্রেশনের অন্যতম কিছু লক্ষণ। ডিহাইড্রেশনের কারণে কিডনি, মস্তিষ্ক, লিভার, পাকস্থলী, ফুসফুসের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
শরীরে প্রয়োজনীয়তার দিক দিয়ে অক্সিজেনের পরই পানির স্থান। একজন ব্যক্তিকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৭ লিটার বা ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সারাদিন রোজা রাখার ফলে দিনের অর্ধেক সময় আমরা পানি পান করি না। ফলে সাধারণ দিনে শরীর যে পরিমাণ পানি পেত, তা না পাওয়ায় শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আমরা যখন বাইরে যাই তখন আমাদের শরীর তুলনামূলক বেশি সক্রিয় থাকে। গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীর অনবরত ঘামতে থাকে, ফলে শরীরে পানি ও লবণের মাত্রা কমে গিয়ে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। আপনার শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্রস্রাবের রং কেমন আছে সেটি লক্ষ্য করা। যদি প্রস্রাবের রং হলুদ হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হয়েছে।
যতক্ষণে আমরা তৃষ্ণা অনুভব করি, ততক্ষণে আমাদের শরীর থেকে প্রায় ২ কাপের মত পানি বের হয়ে যায়। শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে কোষগুলো হাইপোথ্যালামাসে একটি সংকেত প্রেরণ করে, যা ভ্যাসোপ্রেসিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে। পর্যাপ্ত পানি পানের ফলে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকে। শরীরে রক্ত তৈরি করতেও প্রয়োজন হয় তরল পদার্থ। শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে রক্তের স্তরও হ্রাস পায়। যার ফলে নিম্ন রক্তচাপ, দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচার জন্যে আমাদের ইফতারে কোমল পানীয়, চা-কফি জাতীয় পানীয় যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। কারণ এসবে বিদ্যমান চিনি, সোডিয়াম এবং অন্যান্য উপাদান শরীরের টিস্যু থেকে পানি শুষে নেয়। রমজানে আমাদের এমন খাদ্যদ্রব্য নির্বাচন করা উচিত যা আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে সক্ষম। ইফতারে শসা, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেটুসপাতা ইত্যাদি সবজি এবং আখ, তরমুজ, ডাবের পানি, স্ট্রবেরি, আপেল, কমলা/ মাল্টা ইত্যাদি ফলমূল শরীরে পানির ঘাটতি পূরণে ভীষণ কার্যকরী। এসব সবজি এবং ফলমূলের অধিকাংশই পানি দ্বারা পূর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন ফলের জুসও পান করা যেতে পারে। তাই রমজানে সুস্থ-সবল ও হাইড্রেটেড থাকতে ইফতারের পর ঘন ঘন পানি পান করার অভ্যাস করুন।
লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার, এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রাম

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিভিন্ন সংগঠনের ইফতার মাহফিল ও বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধআগ্রাবাদে কয়েল কারখানায় আগুন