রমজানের আগেই অস্থির বাজার

বেড়েই চলেছে প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দাম

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৯ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

রমজান শুরু না হতে বেড়েই চলেছে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকেই দাম নির্ধারণ করে দিতে হয়েছে। তেল ছাড়াও ডাল, সাদা মটর ও রমজানের অত্যাবশকীয় পণ্য ছোলার বাজার বাড়তি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি। তবে ভোক্তারা বলছেন, প্রতিবছর রমজান এলে ব্যবসায়ীরা একেক অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করেন। তাই অনেক ভোক্তা প্রশ্ন রাখছেন, ভোগ্যপণ্যের উর্ধ্বগতি ঠেকাবে কে?
খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) চিনির দাম ছিল ২ হাজার ১৮০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে সেটি ১৬০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৪০ টাকায়। অন্যদিকে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে পাম তেলের দাম। বর্তমানে প্রতিমণ পাম তেল ২৮০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯৩০ টাকা। এছাড়া সয়াবিন তেলের দাম প্রতি মণ ৩০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪৫০ টাকায়। অপরদিকে ভালো মানের প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ার ছোলা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। তবে বাজারে এখনো মিয়ানমারের ছোলা আসেনি। অন্যদিকে মোটা মসুর ডালের দাম কেজিতে ২ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকায়। এছাড়া মটর ডালে দাম কেজিতে ৩ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকা। তবে বেড়েছে সাদা মটরের দাম। সাদা মটর কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। এছাড়া চিকন মুগ ডাল কেজিতে ১৬ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০৪ টাকা এবং মোটা মুগ ডাল কেজিতে ৮ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। অপরদিকে রসুন কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। অন্যদিকে চীনা এবং ভারতীয় আদার দাম গত দুই সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা এবং চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অন্যদিকে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, মাঝারি মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, যা গত দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। চিকন মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা এবং মোটা মশুর ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। অন্যদিকে মটর ডাল কেজিতে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা, মুগ ডাল ৫ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ টাকা। পেঁয়াজের কেজি ৩ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, চীনা রসূন ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, ভারতীয় আদা ৭০ টাকা এবং চীনা আদার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
কাজীর দেউরি হক ভান্ডার স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, পাইকারীতে দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। দাম কমে গেলেও আমরা কমিয়ে দিই।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ডিমান্ড এবং সাপ্লাইয়ের হেরফের হলে কিন্তু দাম বেড়ে যায়। বিশেষ করে তেল-চিনির কথা বলতে হয়। তেল এবং চিনি কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরের কেউ আমদানি করে না। সারা দেশের ৮-১০টা মিল মালিক করে থানেক। আর এখানে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। ডাল-ছোলা এসব প্রাইভেট সেক্টরে অনেকেই আমদানি করে থাকেন। তবে রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থা টিসিবি ভুর্তুকিমূল্যে প্রতি বছরের মতো এবারও পণ্য বিক্রি করবে। এছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বারও ভুর্তুকিমূল্যে পণ্য বিক্রি করবে। তবে আমাদের একটি কথা হচ্ছে কোনো ব্যবসায়ী যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে আমরা সজাগ আছি। একইসাথে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। কোনো ভোক্তা যেন একসাথে বেশি পণ্য না কিনে ।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার দাম বৃদ্ধির কারণেই ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এখানে কোনো ধরনের কারসাজি হচ্ছে না। তবে বাজারে ইতোমধ্যে প্রচুর পণ্য আমদানি হয়েছে। পণ্যের কোনো ধরনের ঘাটতি হবে না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোটাই ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তারা একেক সময় একেক অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করে যান। প্রশাসনও এদের কাছে অসহায়। দেখা যায়, প্রশাসন অভিযান চালাতে গেলে তারা দোকানপাট বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করে দেয়। তারপরেও অন্তত সাধারণ ভোক্তাদের স্বার্থে প্রশাসনকে একটু কঠোর হতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম কমে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা এ সময়টাকে ব্যবসা করার জন্য মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেয়। ইতোমধ্যে বাজারে সব ধরনের পণ্য ঊর্ধ্বগতিতে ছুটছে। তাই এখন থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন যদি উদ্যোগ না নেয়, তবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজয়দেবপুরে জনতা এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে
পরবর্তী নিবন্ধ৩ ইউপি ও ১ পৌরসভায় মনোনয়ন পত্র দাখিল