যে পালঙ্কে আছে ১৬ পরী

বানাতে সময় লেগেছে তিন বছর দাম কোটি টাকা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ২৯ মার্চ, ২০২১ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

সেগুন কাঠ দিয়ে পরী পালঙ্ক বানিয়েছেন খাগড়াছড়ির গুঁইমারা উপজেলা শহরের মো. নুরুন্নবী। ওই পালঙ্কে রয়েছে কাঠের কারুকাজ করা ১৬ পরী। পালঙ্ক বানাতে সময় লেগেছে তিন বছর দুই মাস। ওই দৃষ্টিনন্দন পালঙ্কটির দাম প্রায় কোটি টাকা। তবে সেটি এখনও বিক্রি হয়নি বলে জানা গেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন পালঙ্কটির চার কোনায় বড় চারটি পরী ও মাঝারি চারটি পরী এবং দুই প্রান্তে রয়েছে আটটি ছোট পরী। ওই খাটে বড় চার পরীর হাতে দেওয়া হয়েছে চারটি প্রজাপতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খাটের ছবি ছড়িয়ে পড়লে এটি দেখতে অনেকেই ঘটনাস্থলে ভিড় করেন।
জানা যায়, গুঁইমারার নুরুন্নবীর বাড়িতে ২০১৭ সালে শুরু হয় ওই পরী পালঙ্ক তৈরির কাজ। চলতি বছরের ১৬ মার্চ কাজ শেষ হয়েছে। পালঙ্কটি তৈরি করতে মো. আবু বক্কর দীর্ঘ সময়ের এই কাজের পারিশ্রমিক নিয়েছেন ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি তৈরি করতে কাঠ লেগেছে প্রায় ১০০ ঘনফুট। আবু বক্কর কোনো নকশার অনুকরণ ছাড়া পালঙ্ক তৈরি করেছেন। আবু বক্কর জানান, ১৪ বছর বয়সে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি ফার্নিচার দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর চার বছরের মধ্যে পরিপূর্ণ কারিগর হয়ে ওঠেন। তিন বছর আগে তিনি এই কাজের চুক্তি নিয়ে নেন। তিন বছর দুই মাসে তিনি কাজ শেষ করেন। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ তিন বছর আগে এই পালঙ্ক তৈরির চুক্তি নিয়েছি। সম্পূর্ণ নিজের ডিজাইনে এই পালঙ্ক আমি বানিয়েছি। এই খাটের পারিশ্রমিক চুক্তি অনুসারে নিয়েছি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
ওই পালঙ্কটি দেখতে স্থানীয়রা ছাড়াও ঢাকা থেকে কিছু সৌখিন ব্যক্তি তার বাড়িতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। খাগড়াছড়ি থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. আব্দুল গফুর বলেন, পালঙ্কটির কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেই শখের বসে দেখতে এসেছি। এমন খাট জীবনে প্রথম দেখলাম। খাটটি তৈরি করতে যে পরিমাণ অর্থ ও শ্রম গেছে তা অবিশ্বাস্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন সৌখিন মানুষের পক্ষেই এটা তৈরি করা সম্ভব। মাটিরাঙার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ খাট রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশ। শুধু অর্থ থাকলেই এমন একটি নান্দনিক খাট তৈরি সম্ভব নয়। মানিকছড়ির মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ খাট তৈরির মাধ্যমে ফার্নিচার মিস্ত্রি আবু বক্কর ছিদ্দিক তার ভেতরে লুকায়িত প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তার প্রতিভার মুল্যায়নেরও দাবি জানান তিনি।
গুঁইমারা ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ফার্নিচার মিস্ত্রি আবু বক্কর ছিদ্দিক যা করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ খাট তৈরিতে অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে মো. নুরুন্নবী তার সুন্দর মনের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, পরী পালঙ্কটি গুঁইমারাকে দেশবাসীর কাছে নতুন করে পরিচিত করে তুলেছে। তিনি বলেন, আবু বক্করের ( কাঞ্চন মিস্ত্রির) যে এমন প্রতিভা আছে এই পালঙ্কটি না দেখলে জানা হতো না। তার এই কাজ মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
মো. নুরন্নবী জানান, ভিন্ন কিছু করার ভাবনা থেকেই ব্যতিক্রমী একটি খাট তৈরির চিন্তা করেন তিনি। তিন বছর আগে কাঠ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করা হয়। তিনবছর দুই মাস পর স্বপ্নের পূর্ণতা লাভ করেছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় নেওয়ার জন্যই এই পালঙ্কটি তিনি তৈরি করেছেন। এটি তৈরি করতে আবু বক্করের ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকসহ মোট ব্যয় হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। পরী পালঙ্কটি মসৃণ করতে চারজন শ্রমিকের সময় লেগেছে এক মাস ১৯ দিন। এই পালঙ্কটির দাম ধরা হবে এক কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ঢাকার এক বড় কর্মকর্তা পালঙ্কটি ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ যাচ্ছে বেসরকারি খাতে
পরবর্তী নিবন্ধহেফাজতের নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না