যে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১১ মে, ২০২১ at ৪:১৬ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্তের খবর জানা গেছে কয়েকদিন আগেই। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য মতে অন্যান্য ভেরিয়েন্টের তুলনায় এটি কয়েকগুন বেশি সংক্রমনশীল ও ভয়ানক। ভারতের বর্তমান বিপর্যস্ত পরিস্থিতি-ই এ তথ্য জানান দেয়। শনাক্তের পর ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঘিরে এখন দেশজুড়ে উৎকন্ঠা। এই উৎকন্ঠার বাইরে নয় চট্টগ্রামও। ঈদ উপলক্ষে মার্কেটগুলোতে অস্বাভাবিক ভিড় ও ঘরমুখো যাত্রায় যে বেপরোয়াভাব দৃশ্যমান তাতে উদ্বেগ বেড়েছে আরো বেশি। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না হওয়ায় করোনা সংক্রমণ আবারো লাগামহীন হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে মার্কেটে ভিড় করছেন, গাদাগাদি করে গ্রামে ছুটছেন, সবমিলিয়ে মানুষের যে বেপরোয়া চলাফেরা; তাতে যে ভেরিয়েন্টই হোক না কেন, পরিস্থিতি ফের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর ভারতীয় ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ ছড়ালে তা আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে দেশে আগে থেকেই অবস্থান করা ভেরিয়েন্ট (যা একরকম লোকাল ভেরিয়েন্ট বলা চলে) তা যদি ব্যাপক হারে ছড়ানোর সুযোগ পেয়ে যায়, তবে ভারতের মতো বা তার চেয়েও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলবে। মানুষের বেপরোয়া চলাফেরা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পরিস্থিতি কোন পথে এগুচ্ছে, তা ঈদ পরবর্তী সময়ে অনুধাবন করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
তবে ভাইরাসের কোন ধরনের ভেরিয়েন্ট, সেটা নিয়ে চিন্তা করে মানসিক চাপ না নেয়ার পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার। তার মতে করোনা ভাইরাসের সব ধরনের ভেরিয়েন্টেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা একই রকম। যথাযথভাবে মাস্ক পরিধানের পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্তে উৎকন্ঠার বিষয়ে প্রবীন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহবায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ভারতে ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ভেরিয়েন্টের পাশাপাশি ভারতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যর্থতাও একটি বড় কারণ। মানুষ অঙিজেন পাচ্ছে না। সংক্রমনে রোগী বেড়ে গেলে আমাদের পরিস্থিতিও একই রকম হতে পারে। তাই ভেরিয়েন্টের চিন্তা না করে নিজেদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক পরা, ব্যক্তিগত দূরত্ব, সামাজিক দূরত্ব ও ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। ঈদ ঘিরে অনেকেই কেনাকাটা করতে মার্কেটে ছুটছেন। টাকা থাকলে কেনাকাটা করুন, তাতে আপত্তি নেই। তবে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই করুন। নয়তো রোগী হয়ে হাসপাতালে গেলে দেখা যাবে শয্যা পাওয়া যাবে না। শয্যা পেলেও অঙিজেন পাওয়া যাবে না। অঙিজেন পেলে আইসিইউ পাবেন না। এর ফল কি হতে পারে, তা ভেবে দেখার পরামর্শ এই প্রবীন চিকিৎসকের।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলছেন, আমাদের এখানে এটা প্রমাণিত যে, ভেরিয়েন্ট যা-ই হোক, ঠেকানোর জন্য উপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হলে কিংবা ভাইরাস যদি ব্যাপক হারে বিস্তারের সুযোগ পায়, তবে সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। কিন্তু পর্যটন এলাকা, জনসমাগম, গণপরিবহন ও মার্কেট বন্ধ রাখতে পারলে সংক্রমণ কমে আসে। এটা অনেকটা প্রমানিত।
ভারতীয় ভেরিয়েন্টের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, আমরা যা দেখেছি, আগের ভেরিয়েন্টগুলো কিন্তু আমাদের এখানে আসতে আসতে দুর্বল হয়ে গেছে। ভারতীয় ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। ঈদ পরবর্তী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করা যাবে। তবে যা-ই হোক, এ ভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত থাকতে হলে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার আহবান জানান সিভিল সার্জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা
পরবর্তী নিবন্ধসিটি গেটে আটকে দেয়া হলো ১৭০ গাড়ি