রাতের অন্ধকারে যুদ্ধ শুরু। রূপম সুপমের বাবা ভীষণ চিন্তায় পরে।
রূপম সুপমের বড়ো।
দুই ভাই। খুবমিল ওদের। যাওয়া খাওয়া, খেলা,দূরে যাওয়া এক সাথে,সবকিছু।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সবাই যুদ্ধের ট্রেনিং দিতে ভারত যাচ্ছে। রূপম,সুপমের বাবা দেশপ্রেমিক। দেশকে ভীষণ ভালোবাসে। তাই সুপমকে বলে,
– সুপম তোকে যুদ্ধে যেতে হবে। ট্রেনিং নিতে ভারত যাবি।
– যাবো বাবা। আমিও দেশকে ভালোবাসি।
– ঠিক আছে,তৈরি থাকিস।
কয়েকদিন পরে সুপমের বাড়িতে পাশের বাড়ির সিদ্দিক,মোতালেব,
আনিস আসে।সুপমকে বলে,
– তোর বাবা আছে?
– আছে চাচা,আসুন।
সবাই ভেতরে আসে। দিবাকর সবার বড়ো। তাই সুপমের বাবা দিবাকরকে সবাই সম্মান করে।ভালোমন্দে আলাপ করে। দেশের অবস্হা দেখে সবাই চিন্তিত। রাজাকার,আলবদরের অত্যাচারে সবাই ভাবিত।
কি করা যায় তাই নিয়ে আলাপ করতে সবাই এসেছে।
দিবাকর সবাইকে দেখে দারুণ খুশি।বলে,
– কিরে সিদ্দিক, মোতালেব, আনিস কি খবর তোদের!
– ভালো! তবে আমরা এসেছি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলাপে।
– কি বিষয়ে? দিবাকর প্রশ্ন করে।
– দেশের যে অবস্থা তা‘তে ভালো মনে হচ্ছেনা। রাজাকারের অত্যাচারে গ্রামের মানুষেরা ভয়ে উদ্বিগ্ন। সিদ্দিক বলে।
–আমিও তাই নিয়ে ভাবছি। দিবাকর বলে।
– এখন আমরা কি করতে পারি? আনিস প্রশ্ন করে।
– আমাদের ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে পাঠাতে হবে শিঘ্রি।
– আমরাও তাই ভাবছি। মোতালেব বলে।
– তা‘হলে আর দেরি নয়। কাল পরশু সবাইকে ট্রেনিং এর জন্য ভারত পাঠাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে সবইকে যুদ্ধ করতে হবে। দেশকে স্বাধীন করতে হবে।
দিবাকরের কথায় সবাই হ্যাঁ বলে।
যুদ্ধের ট্রেনিংএ যাবার জন্য সুপমকে তৈরি করে বাবা। তখনই সুপমের মা বাঁধা দেয়। বলে
– এতো ছোট ছেলেকে যুদ্ধে পাঠাবার দরকারটা কি? আমার ছেলে যাবেনা।
– না মা, তোমার কথা নয়। আমি যুদ্ধে যাবোই। সুপম বলে।
– আমিও যুদ্ধে যাবো। সাথে সাথে রূপম ও বলে।
দিবাকর দুই ছেলের কথায় গর্ব করে। বলে,
– সাবাশ বেটা। দেশকে সত্যিসত্যি ভালোবাসিস তোরা। তোরাই পারবি দেশকে স্বাধীন করতে। রূপম এখনও তুই ছোট। আগে বড়ো হবি। তারপর তোকে ও যুদ্ধে পাঠাবো।
সুপম,ইউনুপ,রানা, করিম সবাই রাতের আঁধারে বের হবার আগেই দিবাকর বলে,
– তোরা আমাদের গর্বিত সন্তান। দেশ বাঁচাতে প্রয়োজনে প্রান দিতে দ্বিধা করবিনা।
সিদ্দিক,মোতালেব,আনিস ও তাই বললো।
– তবে আর দেরি নয়। সবাই পথে খাবার জন্য খাবার নিয়েছিসতো!
– হ্যাঁ,নিয়েছি। ইউসুপ বলে।
সবাই পায়ে ধরে সালাম করে।
দিবাকর আবারও বলে,
– সবাই এক সঙ্গে থাকবি,কাউকে বিপদে রেখে আসবিনা। যুদ্ধ করবি প্রানপনে। যা, সবাই বীরেরবেশে বেরিয়ে পর।
ট্রেনিং শেষে সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে।
প্রতিটি আক্রমনে জয় করে ছুটছে ওরা।
সাথে মিত্রবাহনী।
কি আনন্দ! আকাশে, পথে,নদীতে সমানতালে আক্রমন করছে মুক্তিবাহিনী, মিত্র বাহিনী।
চারিদিকে শুধু জয়ের খবর। পাকসেনারা আর পারছেনা। দেশের রাজাকার, আলবদর ভয়ে গ্রাম ছাড়ছে।
নয়মাস যুদ্ধ শেষে বিজয়ের সুর বাজে।
জয়বাংলা! জয়বাংলা প্রতিধ্বনিতে ফেটে পরে দেশ।
ইউসুপ, রানা, করিম দেশে ফেরে বীরের বেশে।
ফেরেনি সুপম।
সুপমকে না দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিবাকর।
– ইউসুপ, সুপম কোথায়?
কারো মুখে উত্তর নেই। সবাই চুপ।
দিবাকর আবারও প্রশ্ন করে উঁচু গলায়।
– আমার সুপম কই?
– নেই চাচা। যুদ্ধ শুরুতেই সুপম মারা যায়। আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। করিম উত্তর দেয়।
ঠিক তখনই মাইকে শোনা যায়, “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে
যুদ্ধ করি“
দিবাকর আর কথা বাড়ায়না।
শুধু বলে,
– আমার সুপম একটি নতুন দেশের জন্য প্রাণ দিলো। সুপম তোকে ধন্যবাদ। তুই আমার গর্ব– অহংকার।
ইউসুপ, রানা, করিম দিবাকরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে,
– চাচা আমাদের ক্ষমা করো, তোমার কথা রাখতে পারিনি কেউ। তোমার ছেলেকে আমাদের সাথে নিয়ে আসতে পারিনি।
– দ্যুত বোকা, কিযে বলিস তোরা! সুপম নেইতো কি? তোরাতো আছিস। তোরাইতো আমার সন্তান।
তোরাইতো দেশের উজ্বল নক্ষত্র, ভবিষ্যত। তোরাই একদিন এই বাংলাদেশকে অনেকদূর নিয়ে যাবি। উপহার দিবি বঙ্গবন্ধুর একটি চকচকে সোনারবাংলা।
ইউসুপ, রানা, করিম একসঙ্গে চীৎকার করে বলে, জয়বাংলা, জয়বঙ্গবন্ধু।