যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ অনিশ্চয়তা

ভোট গণনা বন্ধের দাবি ট্রাম্পের

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি চলছে। সামপ্রতিক সময়ের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের ফল জানতে নির্ঘুম রাত কাটানো রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার একদিন পরও কে জয়ী তা জানতে না পারায় উদ্বেগ নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোট গণনা চলার মধ্যেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেভাগে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করার পর তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের সমর্থকরা বেশ চটেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বাইডেন সমর্থকদের আশঙ্কা, হেরে গেলে ট্রাম্প নির্বাচনের ফল নাও মেনে নিতে পারেন। রিপাবলিকান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোর অনেক ভোটার প্রেসিডেন্টের মতোই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হচ্ছে বলে প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ তুলেছেন। এর মধ্যে নিউইয়র্কসহ কমপক্ষে ৮টি রাজ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। ব্যাপক গোলযোগের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি রাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সারাদিন এসব রাজ্যের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এমনকী লুটপাটের আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। এদিকে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে জয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চারটি রাজ্যের ফল প্রকাশের আগেই আদালতের শরণাপন্ন্ন হয়েছেন। এমনকী পরোক্ষভাবে তিনি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ট্রাম্প এক টুইটে অভিযোগ করেছেন, ‘বিস্ময়কর ব্যালট’ এসে তার প্রাথমিক এগিয়ে থাকাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। এসময় তিনি ভোট গণনা বন্ধের দাবি জানান। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে নিয়ম ভেঙে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ী দাবি করায় সহিংসতাকে উস্কে দেওয়া হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থান নেয়। এমনকী ট্রাম্পের এই ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন পরবর্তী যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কা করা হয়েছিল তা-ই ঘটছে শুরু করেছে বলে মনে করছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
ম্যানহাটনের ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্ক এলাকার কাছাকাছি ওয়েস্ট ভিলেজে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের একটি পোস্টারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরপরই পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর আরেক দল জনতা ওয়েস্ট ফোর্থ স্ট্রিট ও সিঙথ অ্যাভিনিউয়ে সড়কের পাশে রাখা আবর্জনার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা তাদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গ্রেপ্তার শুরু করে। রাত ১১টা পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। পুরো ম্যানহাটন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। শত শত পুলিশের গাড়ি রাস্তায় লাইট ও সাইরেন বাজিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে।
এছাড়া ওয়াশিংটন, অ্যারিজোনা, লস অ্যাঞ্জেলেস, মিনিয়াপলিস, শিকাগো, মিশিগান, ডেনভার ও পোর্টল্যান্ড শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সহিংসতার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করে। পোর্টল্যান্ড ও ওরেগনে প্রতিটি ভোট গণনার দাবিতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ডের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভ থেকে কিছু মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে সিটি সেন্টারে বিভিন্ন দোকানের জানালা ভাঙচুর করে। ওয়াশিংটনের লাফায়েত স্কয়ারের কাছে ট্রাম্প ও বাইডেন সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থা নেয়। এসময় একজন নারীসহ তিনজন ছুরিকাহত হন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওয়াশিংটনের পুলিশ প্রধান পিটার নিউজহ্যাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কাউকে ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিভিন্ন এলাকার ডানপন্থি মিলিশিয়া সদস্যদের উপরও নজর রাখছেন। ভোটে কারচুপি নিয়ে ট্রাম্প যে অভিযোগ করেছেন তার কারণে এ ধরনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রাস্তায় নেমে যেতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা। কট্টর-ডানপন্থি পুরুষদের দল ‘প্রাউড বয়েজের’ নেতা এনরিক তারিও বুধবার ভোরের আগে হোয়াইট হাউস থেকে কিছুটা দূরে তার উপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। হামলাকারীদের মধ্যে একজনের মুখে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ মাস্ক ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় পুলিশ এনরিকের উপর হামলার ঘটনাটি নিশ্চিত করতে পারেনি। তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি।
পেনসিলভেইনিয়ার ম্যাককনেলসবার্গের ৬৬ বছর বয়সী স্ট্যানলি কার্লিন ভোট দিয়েছেন হাতি (রিপাবলিকান) মার্কায়। এ আইনজীবী এখন নিজের রাজ্যে ডাকযোগে পড়া অসংখ্য ভোটের বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই ধরনের বেশিরভাগ ভোটই ফিলাডেলফিয়ার কেন্দ্রস্থলের এলাকার; আপনি ওখানকার লোকজনকে বিশ্বাস করতে পারবেন না, বলেছেন পেনসিলভেইনিয়ার রিপাবলিকান পার্টির কমিটি সদস্য কার্লিন। ভোটের ফল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতা বেধে যেতে পারে বলে শঙ্কা পেনসিলভেইনিয়ার বেথেলেহেমের বাইডেন সমর্থক জুডি মোয়েরি।
মামলা দায়ের ট্রাম্প শিবিরের : ভোট গণনার সময় মিশিগানের বেশ কয়েকটি কাউন্টিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এর নির্বাচনী কর্মীদের উপস্থিতি এবং অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে ইতোমধ্যে রাজ্যটির আদালতে মামলা দায়ের করেছে ট্রাম্প শিবির। মামলায় মিশিগানের ভোট গণনায় স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করা হয়েছে। ১৬ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট থাকা মিশিগানে শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে উইসকনসিনের মতো এ অঙ্গরাজ্যেও চমক দেখাতে চলেছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। আর তাই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসা এখনও বাকি থাকলেও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ট্রাম্পের নির্বাচনী দল। রাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯৬ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে আছেন বাইডেন। আর ট্রাম্পের দখলে আছে ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম লটে আনা হবে অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন
পরবর্তী নিবন্ধশহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই সম্মিলিত প্রয়াস : সুজন