শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই সম্মিলিত প্রয়াস : সুজন

‘সমস্যা দেখলে আমাকে জানাবেন, সাথে সাথে ব্যবস্থা’ দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য শহর গড়ার জন্য নগরবাসীর সহায়তা চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি মনে করেন, সবাই এগিয়ে না এলে সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা অসম্ভব। শহরে বসবাসরতদের নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রতি জোর দেন তিনি। এ লক্ষ্যে শীঘ্রই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে পাড়ায়-পাড়ায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও জানান প্রশাসক।
দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন খোরশেদ আলম সুজন। গত ৬ আগস্ট ১৮০ দিনের জন্য প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। আজ তার দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাস পূর্ণ হচ্ছে। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসেন সুজন। ‘নগরসেবায় ক্যারাভান’ কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিকদের সচেতন করার চেষ্টা করছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে জানিয়ে সুজন বলেন, আজ (গতকাল) খাল থেকে ময়লা অপসারণ উৎসব শুরু করেছি। খাল আমরা পরিষ্কার করেও আসলাম। পরিষ্কার করতে গিয়ে খালে প্রচুর প্লাস্টিক, পলিথিন ও বোতল দেখেছি। এসব তো সাধারণ মানুষই ফেলেছে। আমরা সেগুলো পরিষ্কার করে আসার পর লোকজন যদি আবার ফেলে তাহলে খাল তো আগের জায়গায় ফিরে যাবে। এখানে মানুষের সচতেন হওয়ার বিষয়টি জড়িত। খালে ময়লা না ফেলে তারা আমাদের সহযেগিতা করতে পারে। প্রশাসক বলেন, দেখা গেছে ইছহাকের পুলে একটি বাসা থেকে সরাসরি খালে ময়লা ফেলা হচ্ছে বীর্জা খালে। এটা কি উচিত?
তিনি বলেন, আমাদের শহর অনেক বড়। সব খাল-নালায় গিয়ে প্রতিদিন পরিষ্কার করার মতো জনবল আমাদের নেই। তাই নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ, আপনারাই এ শহরের বাসিন্দা। শহরকে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর রাখা, মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখার জন্য কর্পোরেশনের পাশাপাশি আপনাদেরকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সম্মিলিত প্রয়াসে শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই।
সুজন বলেন, কর্পোরেশনের কাজ হচ্ছে রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করা, সড়ক বাতি জ্বালানো এবং ময়লা-আর্বজনা পরিষ্কার করা। এখন লোকজন যদি সারাক্ষণ ময়লা ফেলে তা পরিষ্কার করা সম্ভব হবে না। তাই নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা, পুকুর, খাল-নালা পরিষ্কার রাখতে হবে নাগরিকদের।
প্রশাসক বলেন, ক্যারাভানের সুফল মানুষ পাচ্ছেন। যতদিন দায়িত্বে আছি এটা অব্যাহত থাকবে। এর মাধ্যমে মানুষকে জাগিয়ে দিতে চাই। মানুষকে বলছি, নিজের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসুন। নালা-নর্দমা পরিচ্ছন্ন থাকুক সেটাও আপনার অধিকার। সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমার। তিনি বলেন, নগরবাসীর প্রতি আমার আহবান থাকবে যেখানে সমস্যা দেখবেন আমাকে জানাবেন আমি সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবো। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য শহর রেখে যেতে প্রয়োজন সবার সহযোগিতা।
তিনি বলেন, অনেক জায়গায় রাস্তা, ফুটপাত ও নালা দখলে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা করা হয়েছে। খবর পেয়ে তা আমরা ভেঙ্গে দিয়ে আসছি। আবার কয়েকদিন না যেতেই লোকজন ফোনে, ম্যাসেঞ্জারে বা ওয়াটসঅ্যাপে জানাচ্ছে উচ্ছেদ হওয়া জায়গা আবারো দখল হচ্ছে। সে জায়গায় আমরা বক্তব্য হচ্ছে, যারা জানাচ্ছেন তারাও তো প্রতিবাদ করতে পারে।
যারা ময়লা-আর্বজনা ফেলছে, শহরকে নোংরা করছে, রাস্তা ফুটপাত দখল করছে, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ইংল্যাণ্ডে একসময় অনেক বিশৃঙ্খলা ছিল। তারা আজ কোথায়? কয়েক দশক আগেও সিঙ্গাপুর কি ছিল? আজ তারা কোথায়। তাদের এ পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে সেদেশের নাগরিকদের সহযোগিতা করার কারণে।
সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে আরো কিছু সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাবো। কিছুদিনের মধ্যে মহল্লা সর্দারদের সাথে বসবো। পাড়ায় পাড়ায় যাবো। পাড়ায় সামাজিক সংগঠন ও মহল্লা কমিটি আছে তাদের সাথে বৈঠক করে অনুরোধ করবো শহরকে বাসযোগ্য করার ব্যাপারে যেন তারা সহায়তা করে। যারা অন্যায়ভাবে ড্রেনে ময়লা ফেলবে, পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
শহরের প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়ে নাগরিকদের যে বোধ থাকা দরকার সেটার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোথাও সমস্যা দেখলে আমাকে ফোন করে জানাচ্ছে। যদিও রেসপন্সটা স্লো, তবে আগের মত পথে পথে ময়লা ফেলছে না। কোথাও পরিষ্কার দেখলে সেখানে ময়লা ফেলতে সংকোচ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ অনিশ্চয়তা
পরবর্তী নিবন্ধমাত্র ৬ ভোট দূরে বাইডেন