মোমবাতি

অনিক শুভ | বুধবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

মোমবাতি তৈরির গল্প অনেক পুরনো। এর জন্মস্থান হিসেবে রোমকে ধরা হয়। তখনকার সময়ে মোমবাতি তৈরি হতো পাইথ দিয়ে। ল্যাটিন শব্দ ক্যানডেবে থেকে ক্যান্ডেল শব্দটির উৎপত্তি। তিন হাজার বিসি থেকে এর যাত্রা শুরু। পরবর্তী সময়ে ন্যাচারাল ফ্যাক্ট, টল এবং ওয়াঙ্‌ দিয়ে মোমবাতি তৈরি হতো। বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে, ১৮ শতকের দিকে, কোলজা অয়েল, ব্যাপসিড অয়েল এবং প্যারাফিন মিশিয়ে তৈরি করা হয় অত্যাধুনিক মোমবাতি। ১৫০০ এডির মোমবাতির প্রচলন ছিল শুধু প্রার্থনার কাজে। প্রথম দিকে মোমবাতি শুধু ইউরোপে তৈরি হলেও পরবর্তীতে এর রপ্তানি শুরু হয় বিভিন্ন দেশে। ১৩২০ সালের দিকে ইউরোপে ক্যান্ডালমাস খুব বিখ্যাত হয়। ১৩৩০ সালের দিকে লন্ডনের ওয়াঙ্‌ ক্যান্ডেলার কোম্পানি মোমবাতি জগতের রাজা হয়ে যায়। তারা ১৪৮৪ থেকে ১৫১৫ সাল পর্যন্ত সব দেশে মোমবাতি রপ্তানি করা শুরু করে। ১৭৯০ সালের দিকে এসে জোসেফ স্যামসন মোমবাতি তৈরির নতুন এক ফর্মুলা আবিষ্কার করেন। তার আগ পর্যন্ত মোমবাতি হাতে তৈরি হতো।
আর আজকের এই মোমবাতি এক শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতিতেও মোমের ব্যবহার জানা যায়। মৌমাছি অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় মোম তৈরি করে মৌচাক নির্মাণ করে। ধীরে ধীরে মোমবাতি, এক আলোর উৎস থেকে বিভিন্ন ব্যবহারে ছড়িয়ে পড়ে। সমস্ত ধর্মে মোমবাতির আলো এক অপার্থিব শান্তির দূত হয়ে বিরাজ করছে। গৃহস্থালির অগ্নি এবং আলোর উৎস থেকে, আধুনিক গৃহিণীর ড্রইংরুমের শোভাবর্ধনের উপকরণ হয়ে, মোমবাতি প্রবেশ করে রাজনীতির আঙ্গিনায়। কিন্তু মোমবাতির ব্যবহারজনিত উদ্ভাবনী গবেষণা, আজও বহমান।
এখন চীনের তৈরি প্লাস্টিকের কাঠামোতে ছোট ছোট বাতিযুক্ত কিছু চার্জার লাইট দেশের বাজারে আসছে। লম্বা-খাটো, গোল, তেকোনা, যেমন তার হরেক রকম আকার; তেমনি লাল, নীল হলুদ, সবুজ বিভিন্ন রঙের বাহার। একেবারে নজরকাড়া জিনিস। ব্যবহারও সহজ। বোতাম চাপামাত্র ঝলমলে আলোয় আঁধার বিতাড়িত। এক পাশে প্লাগ সংযুক্ত। সুবিধামতো কোনো সকেটে সংযোগ করলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পুরো চার্জ। একবার পুরো চার্জ হয়ে গেলে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আঁধার তাড়ায়। আগুন লেগে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই। দামও হাতের নাগালে। ফলে তাড়াতাড়ি এসব বাতি এখন খুব জনপ্রিয় হচ্ছে মানুষের কাছে।
তবে চীনের বাতির রমরমায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশেও এখন এ ধরনের বাতি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব দেশি বাতির গায়ে উৎপাদনকারীর কোনো ভিত্তি নেই। দাম চীনা বাতির চেয়ে কম। জীবনধারায় তাই মোমবাতির জায়গা দখল করে নিয়েছে এসব বিজলিবাতি। প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া মোমবাতির শেষ আশ্রয় হবে হয়তো কেবল জন্মদিনের কেকের সামনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাদর মেঘের দেশে
পরবর্তী নিবন্ধকি ছু জা না কি ছু অ জা না