মীরসরাইয়ে নিহত কিশোর জাহিদ হোসেন রুমনকে বিএনপি পরিবারের সন্তান দাবি করেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি। একইসঙ্গে তার মৃত্যুর জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন দলটির নেতারা। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করা হয়।
গত শুক্রবার বিএনপি–আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে প্রাণ হারায় রুমন। মৃত্যুর পর তাকে ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করেন মীরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাসুদ করিম রানা। এছাড়া গতকাল নিহতের মা বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকেও আসামি করা হয়।
গতকাল বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার।
মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি বানচাল করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ মীরসরাইয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। এ সময় আমাদের লোকজন আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে। এরই মধ্যে পড়ে দোকানের কর্মচারী আহত হয়েছে। পরবর্তীতে তার মৃত্যু হয়। সে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। আওয়ামী লীগ দাবি করছে, সে ছাত্রলীগ করে। তাদের যে দাবি তাতে মনে হয় প্রাইমারি স্কুলের শিশুরাও ছাত্রলীগ করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপি পরিবারের এক শিশুকে মেরে ফেলেছে। উল্টো পুলিশকে সাথে নিয়ে তারা বিএনপির দুজন নেতার বাড়িতে হামলা করেছে, ভাঙচুর চালিয়েছে। বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির আগে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা তারই ধারাবাহিক হামলা।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, নিহত হওয়া কিশোর বিএনপি না আওয়ামী লীগ সেটা আমি বলছি না। কিন্তু সে বিএনপি পরিবারের সন্তান। তার বাবা মারা গেছেন। সে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। এ কারণে আমরা বলছি, সে আমাদের তো নয়ই, ছাত্রলীগও করে না। তার কোনো ছাত্রত্ব নেই। এখন আওয়ামী লীগ তাকে তাদের লোক বলে দাবি করছে। অথচ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ এই শিশুটিকে হত্যা করেছে। বিএনপির কর্মসূচিকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের হামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, রোডমার্চ কর্মসূচি সফল করার জন্য মীরসরাইতে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রস্তুতি সভা আহ্বান করা হয়। প্রস্তুতি সভা শেষে সবাই বের হয়ে যাওয়ার মুহূর্তে আওয়ামী লীগ আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করে। আমাদের লোকজনও আত্মরক্ষার চেষ্টা করে।
উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, যখন আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছিল তখন ওই ছেলেটা ভিডিও ধারণ করছিল। এটা দেখে আওয়ামী লীগের ছেলেরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। এরপর সে পুকুরে পড়ে যায়। পরে আমরা শুনি সে মারা গেছে। হামলার ঘটনা যখন চলছে তখন আমি জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বারবার কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনি আমার কল ধরেননি। উনি যদি তখন ওই ফোনটি ধরতেন এই ঘটনা না–ও ঘটতে পারত। এই ছেলেটা হয়ত মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যেতে পারত।
তিনি বলেন, রাত ৮টার দিকে পুলিশসহ আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমার বাড়িতে এসেছে। পুলিশকে পেছনে রেখে সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে হামলা করেছে। দুই হাজার চেয়ার ভাঙচুর করেছে। ঘরের ভেতর অগ্নিসংযোগ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ–প্রচার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, সরোয়ার আলমগীর, কাজী সালাউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়াত হোসেন ও মীরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী।