মিলছে লকডাউনের সুফল

কমছে মৃত্যু ও শনাক্তের হার

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১ মে, ২০২১ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

ধীরে ধীরে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে কমে আসছে কোভিড-১৯ শনাক্তের হার। কমছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুও। বিষয়টাকে চলমান লকডাউনের সুফল হিসেবেই দেখছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞগণ। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পাশাপাশি মানুষের চলাচল সীমিত করে জনসমাগম এড়ানো গেলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। লকডাউনের ফলে মানুষের চলাচলে পূর্বের চেয়ে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ এসেছে। আবার লকডাউন কার্যকরে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ছিল কঠোর। ফলে কমছে সংক্রমণ। প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে লকডাউন। যা ১১ এপ্রিল থেকে দুইদিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় কঠোর লকডাউন। যা চলে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। তৃতীয় দফায় তা বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এবং চতুর্থ দফায় ৫ মে মধ্য রাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এদিকে গত ১ এপ্রিল একদিনে সারা দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ৬ হাজার ৪৯৬ জন। যা নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ছিল ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ওইদিন মারা যায় ৫৯ জন। বিপরীতে গত ২৯ এপ্রিল শনাক্তের হার ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যা আগের দিন ২৮ এপ্রিল ছিল ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগে ১৯ এপ্রিল ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, , ১৭ এপ্রিল ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং ১৪ এপ্রিল ছিল ২০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ ধীরে ধীরে কমেছে শনাক্তের হার। এদিকে কঠোর লকডাউনের শুরুর দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল সারা দেশে মারা যায় ৯৮ জন। যা ১৯ এপ্রিল ১১২ জন এবং ১৭ এপ্রিল ছিল ১০১ জন। আশার কথা হচ্ছে, লকডাউনের প্রভাবে কমছে মৃত্যুর সংখ্যা। যেমন ২৯ এপ্রিল ৮৮ জন, ২৮ এপ্রিল ৭৭ জন এবং ২৭ এপ্রিল ৭৮ জন মারা যান।
এদিকে চট্টগ্রামেও মিলছে লকডাউনের সুফল। গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ছিল ২৬ শতাংশ। যা গতকাল ছিল ১৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। মাঝখানে ১৭ এপ্রিল ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল। ধীরে সেটা কমছে। গত এক সপ্তাহে যা গড়ে ১৫ শতাংশে চলে আসে। এর মধ্যে ২৮ এপ্রিল ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশে চলে আসে।
লকডাউনের সুফল প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আজাদীকে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আমরা নতুন করে মাইকিং করে প্রচারণা শুরু করেছি। শহরের যেসব জায়গায় লোক সমাগম বেশি হচ্ছে সেখানে মোবাইল কোর্ট থেকে হ্যান্ড মাইক দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। সেখানে লোকজনের উদ্দেশে বলা হচ্ছে, ‘আপনারা জনসমাগম করবেন না। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।’ তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে লকডাউনের মধ্যেও মানুষ বেরিয়ে চলে আসছে। বিনাপ্রয়োজনে ১০-১২ জন বা ২০-২৫ জন মিলে গেদারিং করছে, তাদের কোনো কাজই নাই তারপরও অহেতুক জমায়েত হচ্ছ।
জেলা প্রশাসক বলেন, লকডউন চলছে। এরপরও মানুষ যদি সচেতন না হন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন তাহলে সুফল পাবো না। মাস্ক ৮০ শতাংশ সুরক্ষা দেয়, তাই মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এ জায়গা থেকে আমরা সচেতনতামূলক মাইকিং করছি এবং মাস্ক বিতরণ করছি। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা ও অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ আহ্বান যদি মানুষ শুনে তাহলে করোনার সংক্রমণ থেকে সবাই সুরক্ষা পাব। তাই সবার কাছে আহ্বান থাকবে সচেতনভাবে ও আন্তরিকতার সাথে যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলি।
তিনি বলেন, লকডাউন দেয়ার আগে বিশেষ করে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের আগে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। তখন শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি ছিল। সেটা এখন ১০ শতাংশে কমে এসেছে। তাই বলা যায়, লকডাউনের সুফল আমরা অবশ্যই পেয়েছি। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমরা এখন অনেক ভালো আছি। তিনি বলেন, লকডাউন যদি আরো কিছুদিন চালানো যায়, বিশেষ করে ঈদের সময় তাহলে আরো কিছু সুফল মিলবে। ঈদের সময় ঢাকা-চট্টগ্রামে যাতায়াত বেড়ে যায়, সারা দেশেই মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়, শহর থেকে গ্রামে যায়, গ্রাম থেকে আবার শহরে আসে, সেটা যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় ইনশাল্লাহ সুফল পাব এবং করোনা সংক্রমণের হার কমে যাবে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, লকডাউনের কারণে কিছুটা হলেও মানুষ ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। তাছাড়া এখন রমজান এবং প্রচণ্ড গরমও পড়ছে। সবমিলিয়ে বাইরে লোকজন খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বের হচ্ছে না। শপিং কমপ্লেক্সগুলো খোলা থাকলেও সেখানে কিন্তু ভিড় নাই। আমরা যেটা বার বার বলে আসছি, মানুষ যত কম বের হবে, বের হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে ও মাস্ক পরে তাহলে সংক্রমণ কমতে থাকবে। সেটাই এখন প্রমাণিত। সারা দেশের মত চট্টগ্রামবাসীও লকডাউনের সুফল পাচ্ছে।
তাহলে কি পরবর্তীতে লকডাউন বাড়ানো হলে সংক্রমণ আরো কমতে থাকবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মানুষের চলাচল যতই সীমিত রাখতে পারবো ততই আমাদের জন্য মঙ্গল। রাষ্ট্র এটাও মাথায় রাখছে অর্থনৈতিক যে চাপ সেটাকেও সচল রাখা। সব মিলিয়ে বলবো, যেটাই আমরা করি, স্বাস্থ্যবিধি যদি যথাযথ মানা হয়, মাস্ক ব্যবহার এবং চলমান ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাহলেই সংক্রমণটা কমাতে পারবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় চিংড়িজোন দখলের অভিযোগ