মাঙ্কিপক্স : কতটা দুশ্চিন্তার?

| সোমবার , ২৩ মে, ২০২২ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস মহামারী থেকে পরিত্রাণের আগে আশঙ্কা জাগিয়ে তোলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আরেকটি ভাইরাস। নাম তার মাঙ্কিপক্স। যুক্তরাজ্যসহ ১২টি দেশে ৮০ জনের দেহে তা ছড়িয়েছে, যে সংক্রমণের কথা তাদের ভাবনায়ও আসেনি। তাহলে কী ঘটতে চলেছে? মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার এ ভাইরাসটি কি এখনই দুশ্চিন্তিত হওয়ার মতো? নাকি কেবলই একটি মহামারীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে সবাই বেশি উত্তেজিত?

বিবিসি লিখেছে, এটা পরিষ্কার যে মাঙ্কিপক্স আরেকটি কোভিড নয়, আর ঘটনা এমন নয় যে এর বিস্তার রোধে আরেকটি লকডাউন ঘনিয়ে আসছে। তবে মাঙ্কিপক্সের এই প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিক এবং অপ্রত্যাশিত। বিশেষজ্ঞদেরও অবাক করেছে। আর যখন কোনো ভাইরাস আচরণ পরিবর্তন করে, তখন তা উদ্বেগের কারণ হয়েই দাঁড়ায়। ১৯৫৮ সালে বানরের দেহে এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ায় এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপঙ। যদিও এখন ইঁদুরকেই বিস্তারের প্রধান পোষক হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।

পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার রেইন ফরেস্টের কেউ একজন সংক্রমিত প্রাণির সংস্পর্শে আসে এবং ভাইরাসটি তার থেকে ছড়িয়েছে। সংক্রমিতদের ত্বকে একটি ফুসকুঁড়ি ফুটে ওঠে, যা থেকে ফোস্কা পড়ে এবং খোসপাঁচড়া ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটি এখন তার স্বাভাবিক জায়গা থেকে বাইরে চলে এসেছে এবং ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে এজন্য দীর্ঘস্থায়ী ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের প্রয়োজন। সেই কারণেই এর প্রাদুর্ভাব ছোট হতে থাকে এবং নিজেরাই শেষ হয়ে যায়।

প্রথমবারের মতো এ ভাইরাস এমন লোকদের মধ্যে পাওয়া গেছে, যাদের সঙ্গে পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার কোনো স্পষ্ট যোগাযোগ নেই। কার কাছ থেকে তারা সংক্রমিত হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। অঙফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্যান্ডেমিক সায়েন্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক স্যার পিটার হরবি বলেছেন, ‘আমরা একটি খুব নতুন পরিস্থিতিতে আছি, এটি অপ্রত্যাশিত, সেই সঙ্গে উদ্বেগজনক।’ যদিও তিনি বলেছেন, এটি ‘দ্বিতীয় কোভিড’ নয়। তবে তা প্রতিরোধে ‘আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে’। কারণ এটি এমন কিছু, ‘যা আমরা সত্যিই এড়াতে চাই’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মাঙ্কিপঙ হারিয়ে যাওয়া গুটি বসন্তের মতো, তবে তুলনামূলক কম গুরুতর এবং সংক্রমণ বেশি ছড়ায় না। এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, গাঁট ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং দেহে অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগীর দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জল বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়র ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

কীভাবে ছড়ায় : সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়-চোপড় ও বিছানা থেকে ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে।

চিকিৎসা : এই ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গুটি বসন্তের টিকা এবং ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ মাঙ্কিপঙের উপসর্গ রোধে সাহায্য করতে পারে। যে কোনো ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়। যেহেতু এ রোগ প্রাণঘাতী নয় তাই এটি নিয়ে উদ্বেগের তেমন কারণ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মাঙ্কিপঙের যে কঙ্গো ধরনটি অপেক্ষাকৃত ভয়ানক ধরা হয়, তাতে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশ। আর পশ্চিম আফ্রিকা ধরনটিতে মৃত্যুর হার ১ শতাংশ।

তাহলে কী ঘটতে চলেছে : বিবিসি লিখেছে, ‘আমরা জানি এই প্রাদুর্ভাব ভিন্নরকম, কিন্তু কেন তা জানি না। এক্ষেত্রে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে, হয় ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়েছে কিংবা একই পুরনো ভাইরাসটি শক্তিশালী হতে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গা বেছে নিয়েছে। মাঙ্কিপঙ একটি ডিএনএ ভাইরাস। তাই এটি কোভিড বা ফ্লুর মতো এর দ্রুত রূপান্তর বা মিউটেশন হয় না। যাকে স্বস্তির কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অন্যটিতে সীলগালা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রদীপ-চুমকির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে আজ