ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্ত কমিটি গঠন, ব্যাংক হিসাব তলব

সিগারেটের জাল ব্যান্ডরোল আমদানি করে ১৩০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

চীন থেকে বিপুল পরিমাণ জাল ব্যান্ডরোল আমদানির মাধ্যমে ১৩০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টার এক ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর আন্দরকিল্লার বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সরকারি ছুটির দিনে গত ১৬ ডিসেম্বর চালানটি খালাসের চেষ্টা করে। এ-৪ সাইজের কাগজ আমদানির মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেটের বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প আমদানি করা হয়। খালাসের সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চালানটি আটক করে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমসের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। চালানটি খালাস করা সম্ভব হলে সরকার প্রায় ১৩০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতো।
সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার বিড়ি সিগারেট বিক্রি হয়। প্রতি প্যাকেট সিগারেট এবং বিড়িতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল ব্যবহার করতে হয়।এটি দেশের প্রচলিত আইনে বাধ্যতামূলক। ব্যান্ডরোল ছাড়া কোন ধরনের বিড়ি সিগারেট বিক্রি করার সুযোগ নেই। ফ্যাক্টরি থেকে বিড়ি বা সিগারেটের প্যাকেট বাজারে বের হওয়ার আগেই এ ব্যান্ডরোল লাগানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করতে হয়। এ খাত থেকে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট রাজস্ব আয় হয়। কিন্তু বিভিন্ন বিড়ি সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সরকারকে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়। চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জাল ব্যান্ডরোল আসে। যা স্বল্পমূল্যে কিনে বিভিন্ন বিড়ি সিগারেটের প্যাকেটে লাগিয়ে দেয়া হয়। যাতে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া সহজ হয়।
এ ৪ সাইজের কাগজ ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডরোল খালাস করে নেয়ার চেষ্টার ঘটনাটি ধরা পড়ার পর নড়ে চড়ে বসে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। বিষয়টি একেবারে অভিনব বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। ঘটনাটি তদন্তের জন্য ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সংস্থার যুগ্মপরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন উপ পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন, সহকারী পরিচালক আলমগীর হুসেন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাশরেকী ইলিয়া কাজান এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল।
কমিটি ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় যে নগরীর আন্দরকিল্লাহ এলাকার জি এ ভবন দ্বিতীয় তলার বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চালানটি আমদানি করেছে। তারা তাদের সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেডের মাধ্যমে ৭টি পৃথক বিল-অব-এন্ট্রি-তে ‘এ-৪ পেপার’ ঘোষণায় পণ্য চালানটি খালাস করছিল। ইতোপূর্বেও একই প্রতিষ্ঠান একই সিএন্ডএফ ব্যবহার করে একই ধরনের পণ্য ঘোষণা দিয়ে বেশ কয়েকটি চালান খালাস করেছে। ভ্যাট গোয়েন্দারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, প্রতিষ্ঠানটি ইতোপূর্বে যেসব চালান খালাস করেছে সেগুলোতেও জাল ব্যান্ডরোল ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তদন্ত কমিটি বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের মূসক নিবন্ধন ফর্ম-২.১ এ উল্লেখ করা ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডে পরিচালিত ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নামে বা কার্যক্রমের সাথে অন্যান্য ব্যাংকের হিসাবগুলোর ব্যাপারেও বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তদন্ত কমিটি এই ধরনের জাল ব্যান্ডরোল কোন কোন সিগারেট ফ্যাক্টরি ব্যবহার করে সেগুলোকেও খুঁজে বের করার অনুসন্ধান শুরু করেছে। কোন কোন সিগারেট ফ্যাক্টরীর সাথে বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের ব্যবসা রয়েছে এবং তারা এ পর্যন্ত কত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এছাড়া উক্ত কমিটি নগরীর ১২৮ জুবিলী রোডস্থ কাদের টাওয়ারের চতুর্থ তলার আরাফাত এন্টারপ্রাইজ নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও অনুসন্ধান শুরু করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটিও বিগত সময়ে ‘এ-৪ পেপার’ ঘোষণায় পণ্য আমদানি করেছে এবং একই সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেডের সহায়তায় ৬টি বিল-অব-এন্ট্রির মাধ্যমে খালাস করেছে। এসব পণ্য কাগজ ছিল নাকি জাল ব্যান্ডরোল ছিল তার অনুসন্ধান করার দায়িত্বও উক্ত কমিটিকে দেয়া হয়েছে বলে সংস্থার মহাপরিচালক ড. মঈন খান জানিয়েছেন। দৈনিক আজাদীকে তিনি বলেন, রাজস্ব ফাঁকির যে কোন চেষ্টা উদঘাটন করার সক্ষমতা ভ্যাট গোয়েন্দাদের রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলে গেলেন শহীদজায়া মুশতারী শফী
পরবর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ