ভোজ্যতেলের দাম লাগামহীন

মিল মালিকদের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৯ মে, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

বেড়েই চলছে ভোজ্যতেলের বাজার। সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে মিল মালিকরা কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছেন এমন অভিযোগ খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের।

তারা বলছেন, ভোজ্যতেল আমদানিতে ১০ শতাংশ ভ্যাট পুনর্বহালকে পুুঁজি করে একটি কোম্পানি তেল সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। অপর একটি কোম্পানি পুরনো ডিওর (ডেলিভারি অর্ডার) সরবরাহ বন্ধ রেখে নতুন দাম নির্ধারণ করে সরবরাহ দিচ্ছে। যা একেবারে অযৌক্তিক। কারণ সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের সাথে সাথে ভোজ্যতেলের দাম কমে যায়, সে সময় যাদের কাছে ডিও ছিল তাদের সবাইকে লোকসান গুনতে হয়। সে লোকসানের ভাগ কিন্তু কোনো কোম্পানি নেয়নি।

গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৩৫০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৭০০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৪৫০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায় ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে উঠে।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী এএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল আলম লিটন বলেন, বর্তমানে বাজারে সিটি গ্রুপ ভোজ্যতেলের সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এছাড়া টিকে গ্রুপ এখন কেবল নতুন দামে সরবরাহ দিচ্ছে। তবে এস আলম ও মেঘনা গ্রুপের ভোজ্যতেল সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এখন মিল মালিকরা সয়াবিন ও পাম তেল আগেই আমদানি করেছেন। এখন সরকার নতুন করে ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করলে তার প্রভাব সাথে সাথে পড়ার কথা না। কিন্তু কিছু কিছু মালিকরা সেই বিষয়টিকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা করছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে ভোজ্যতেলের মিল হাতে গোনা। সরকার চাইলে এই মিলগুলোতে তদারকি করা একদম সহজ বলে মনে করি। এছাড়া খাতুনগঞ্জে তেল বাজারে ডিও বেচাকেনা হয়। যার কারণেও বাজার স্থির থাকে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় টাইগাররা
পরবর্তী নিবন্ধজেলা প্রশাসনের স্মার্ট লাইসেন্সিং অ্যাপ চালু