বয়স ৪৭ থেকে হলো ৮৭, এখনো মেলেনি ভূমি অধিগ্রহণের টাকা

ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কাঁদলেন নুর চেহের

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

চল্লিশ বছর আগে নূর চেহের বেগমের জমিটুকু অধিগ্রহণ হয়। তখন তার বয়স ছিল ৪৭। এখন তিনি ৮৭ বছরে পা রাখলেও মেলেনি ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা। ৩৮ শতাংশ সেই ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন ৪০ বছর ধরে।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুনানিতে এসে মর্মস্পর্শী এসব কথা বলছিলেন নুর চেহের বেগমের ছেলে মিজানুর রহমান। তখন পাশেই ছিলেন বৃদ্ধা নুর চেহের। এক পর্যায়ে মাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় অডিটোরিয়ামে থাকা দর্শকদের মধ্যে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। গতকাল অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুনানিতে ৪৭টি অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে নুর চেহের বেগমের সিরিয়াল ছিল ৩১। তার নাম ধরে ডাকতেই মিজানুর রহমান মাকে ধরে স্টেজে তোলেন। হাঁটতে পারছিলেন না। ছেলের হাতে ভর করে এক পর্যায়ে উঠে স্টেজে থাকা চেয়ারে বসেন নুর চেহের বেগম। দুদক কমিশনারের উদ্দেশ্যে মায়ের হয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আমি কী দোষ করেছি, আমার মা কী দোষ করেছে? আমরা আর কতদিন অপেক্ষা করব? ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা চাওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার হুমকির শিকার হয়েছি। আমি বন্দরে একটি ছোট চাকরি করি। সেখান থেকে ছাঁটাই করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়।

মিজানুর বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের সময় বাবা বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে বাবা মারা গেছেন। কিন্তু আমরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি। মা শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। কতদিন বাঁচবেন জানি না। মায়ের মৃত্যুর আগে যাতে ক্ষতিপূরণের টাকাটা পাই সে চেষ্টা করছি। শুনানিতে তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে ৩৮ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিজেদের জমি হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের ভুলে ক্ষতিপূরণের টাকা পান অন্যরা। এরপর থেকে নিজের ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে ঘুরছি। কিন্তু এখনো কোনো কূল-কিনারা হয়নি।

এদিকে শুনানিতে যখন নূর চেহের বেগম ও তার ছেলে ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেলেন তখন দুদক কমিশনার ড. মো মোজাম্মেল হক খান তা মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন। এত বছর পরও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি শুনে তিনি বিস্মিত হন। তিনি বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনতে চান। বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-ব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, এ বিষয়টি সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসনের। আমরা তো ক্ষতিপূরণের টাকা দিই না। তারপরও মানবিক দিক বিবেচনা করে নূর চেহের বেগমের ছেলে মিজানুর রহমানকে বন্দরে চাকরি দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য জানতে চাইলে ডিসি মমিনুর রহমান বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর নুর চেহের বেগম আমার কাছে একাধিকবার এসেছেন। অর্থ আত্মসাৎকারী যে ছয়জন রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন। যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তবু আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্য হিসেবে ৫ লাখ টাকা তাকে দিতে পারি। এছাড়া উক্ত বিষয়ে চলমান মামলাগুলো কী অবস্থায় রয়েছে তা দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ পর্যায়ে দুদক কমিশনার বলেন, একজনের ক্ষতিপূরণের টাকা অন্য ব্যক্তিরা কীভাবে তুলে নিলেন, জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তাকে আশ্বস্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর বাগ্মিতা
পরবর্তী নিবন্ধ২২ দপ্তরের বিরুদ্ধে ৪৭ অভিযোগ