কাল পহেলা বৈশাখ, ১৪৩১ বাংলা।
দিদিভাই বলে, নোরা কাল খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবি। মেলায় যাবো।
তখন নোরার চোখে মিষ্টি ঘুম পাড়ানী মাসী ঘুমের গান ধরেছে। দিদি ভাইয়ের কথা কানে পৌঁছায় না। নারিতার রাগ হয়। তাই নোরার গা‘ ধরে ডাকে, নোরা নোরা ঘুমিয়েছিস। এখনও দশটা বাজে নি। ওঠ ওঠ, কথা শোন।
বারবার দিদি ভাইয়ের ডাকে নোরা একটু চোখ খোলে। কিন্তু ঘুম পাড়ানী মাসীর গানের সুরে ঘুম ভাঙে না। মাসীর কি আদুরে মন। চুলে বিলি কেটে স্নিগ্ধমায়া মেখে মিষ্টি সুরে নোরাকে ঘুম পাড়াচ্ছে।
নারিতার রাগ বেড়ে যায়। এবার নোরার মাথা তুলিয়ে বিছানায় বসায়। বলে,
– কাল মেলায় যাবো।পহেলা বৈশাখের গান গাইব,তুই নাচবি, মনে নেই?
নোরা ঘুম পাগল। মাথার চুল টানে ঘুম চোখে। আবারও বিছানায় ঢলে পড়ে। তবে দিদির চড়া গলায় ডাকে ঘুম ভাঙে।নোরা বলে,
– দিদিভাই কি বলছ।
– কাল বৈশাখী মেলায় যাবো, মনে নেই।
– হ্যাঁ, খুব মনে আছে।
– তো এত ডাকছি, শুনছিস না।
– দিদিভাই কি বলব, মজার একটি স্বপ্ন দেখছিলাম।
– স্বপ্ন? কিসের স্বপ্ন দেখছিলি। নারিতার প্রশ্ন।
– দিদিভাই কি সুন্দর, ফর্সা, টানা চোখ,কাজল মাখা ভ্রু, মিষ্টি আদুরে কথা। নোরা উত্তর দেয়।
– কে? কার কথা বলছিস?
– ঘুমপাড়ানি মাসীর কথা গো। এত্তো ভালো সে।
– সে আবার কেমন কথা। বল, তাড়াতাড়ি বল।
– দিদিভাই, ভাত খেয়ে শুয়েছি। তড়ঘড়ি চোখ জুড়ে ঘুম আসে। তখনই মাসী আসে। জড়িয়ে আদর করে। তোমার মত মাসীও বলে,জানো নোরা, কাল নতুন বছর শুরু । ডিসি পার্কে,শিরীষ তলায় মেলা বসবে।সবাই নতুন জামা পরবে। চুলের খোঁপায় ফুল দেবে। মেলায় কত কি উঠবে। তুমি যাবে না?
– হ্যাঁ যাবোইতো। আমিও বলি।
– কি বলছিস,ঘুমপাড়ানি মাসী তাই বলেছে! দিদি ভাইয়ের অবাক প্রশ্ন।
– আরো বলেছে,তুমি কি করবে! আমিও বলেছি, দিদিভাই গান করবে, সাথে আমি নাচব।
– কি গান গাইবে দিদিভাই। ঘুমপাড়ানি মাসী প্রশ্ন করে।
– নতুন বছর, পয়লা বৈশাখ, তাই দিদিভাই গাইবে, এসো হে বৈশাখ গানটি।
– ভারী মিষ্টি গান। গানের সুরে সুরে নাচের তালেতালে নতুন বছরকে বরণ করবে। কি মজা। আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে?
– তুই কি বললি? দিদিভাই আবারও প্রশ্ন করে।
– কি বলব? তুমিতো ঘুম স্বপ্ন থেকে টেনে তুললে।
– তা‘তে হলটা কি?
– ফুড়ুৎ, হাওয়া।
– এসব কি কথা।
– বুঝলে না দিদিভাই, তোমার ডাকে ঘুমপাড়ানি মাসী চলে যায়।
– তো ঘুমপাড়ানি মাসীকে নিয়ে যাবিনা সাথে। আমিও থাকতাম।
– তোমার ডাকেই কথা শেষ। আমার ঘুম ভাঙল, মাসী হাওয়া, নেই।
– ঠিক আছে রাগ করিসনে নোরা। মেলায় যাবো বলে তো ডাকছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। এখন শুয়ে পড়।
দু‘জনে পাশাপাশি শোয়। চোখ বুজে।
নোরার চোখে ঘুম নেই। এত ডাকে ঘুমপাড়ানি মাসীকে।
না, মাসী আসে না।
তবু যেন বারবার ঘুমপাড়ানি মাসীর মিষ্টি ছবিটা নোরার চোখের সামনে ভাসে।