বিপন্ন হলুদ কচ্ছপ মিলল পাহাড়ে

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৯ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ মহাবিপন্ন সৃরীসৃপ প্রাণী। উভচর এই কচ্ছপ বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। তবে প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে কোথাও কোথাও এদের দেখা মিলে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার উলিটিলা এলাকায় মহাবিপন্ন এ পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপের দেখা মিলেছে।
একে চাকমা ভাষায় বলা হয় পারবো ডুর। এরা লম্বায় ৩৩ সে.মি পর্যন্ত হয়। ওজনে প্রায় ৩ কেজি। বর্ষায় ডিম পাড়ে। ৩ থেকে সাড়ে ৫ মাস পর ছানা বের হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কচ্ছপ ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়।
ছয় বছর ধরে মাটিরাঙার উলিটিলায় এলাকায় প্রাকৃতিক বন ও বণ্যপ্রাণী রক্ষায় কাজ করছে ‘পিটাছড়া বন ও বণ্যপ্রাণী সরক্ষণ উদ্যোগ’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের প্রধান স্বেচ্ছাসেবী মাহফুজ রাসেল বলেন, পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ উভচর প্রাণী হলেও এরা ডাঙায় বেশি থাকে। গুল্মজাতীয় খাবার এদের প্রিয়। ডাঙায় থাকে বলে মানুষ মাংসের কারণে এ কচ্ছপ শিকার করে। ফলে এর সংখ্যা কমছে। নিরামিষভোগী এ কচ্ছপের মূল খাবার সবুজ ঘাস, লতা-পাতা, ফুল ও ফল। তবে পাহাড়ি এলাকায় বন ধ্বংসের পাশাপাশি ঝোপ ঝাড় কেটে সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে। এতে কাছিমসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আবাসভূমি বিপন্ন হচ্ছে।
মাহফুল রাসেল আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী এই কচ্ছপ সংকটাপন্ন হলেও আমাদের দেশে এটি মহাবিপন্ন। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুসারে এটি সংরক্ষিত প্রাণী। সম্প্রতি উলিটিলা এলাকায় প্রথমবারের মতো কচ্ছপটি আমরা দেখতে পাই। পরে কচ্ছপের খোলসে সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে তা বনে অবমুক্ত করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ খুব কমই দেখা যায়। এরা বনের ঝোপ ঝাড়ে থাকতে পছন্দ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়ি বন এদের বিচরণ ভূমি। কিন্তু বন উজাড় ও শিকারের কারণে পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ মহাবিপন্ন।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ খুবই দুর্লভ। এখন বনের ভিতরেও মানুষের বসতি হয়েছে। ফলে কচ্ছপসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী হত্যার শিকার হচ্ছে। মানুষ যদি এদের না মারে তাহলে প্রজনন বাড়বে। পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ আমাদের দেশের প্রচলিত বন আইনেও সংরক্ষিত রয়েছে। কেবল বাংলাদেশেই নয় হলুদ কচ্ছপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপন্নও। কেউ যাতে এ ধরনের কচ্ছপ ধরে শিকার করতে না পারে সেজন্য বন বিভাগ সর্তক রয়েছে। এছাড়া কচ্ছপসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষায় মানুষের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপকে লাল তালিকাভুক্ত প্রাণী হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন এই বন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ছাড়াও এটি ভারত, নেপাল, চীন, মায়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ায় দেখা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার বিষয়ে এফসিপিএস কোর্স চালুর অনুমোদন পেল চমেক
পরবর্তী নিবন্ধবাসে করে পালানোর সময় মাঈনু গ্রেপ্তার