বাসে করে পালানোর সময় মাঈনু গ্রেপ্তার

মায়ের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি বাবার অফিস থেকে নেয়া সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় ক্ষোভ ছিল পরিবারের ওপর

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৯ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় মাকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাঈনুদ্দিন মোহাম্মদ মাঈনুুকে (২৯) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি বিশেষ টিম। গত বুধবার রাতে নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহনে পালানোর সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ।
গ্রেপ্তার মাঈনুদ্দিন জাপা নেতা ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টারের ছেলে। গত ১৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন শামসুল আলম। গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে পটিয়ায় নিজ বাড়িতে ছেলে মাঈনুর গুলিতে নিহত হন তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৫০)। একই রাতে মাঈনুকে একমাত্র আসামি করে বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, মাঈনুদ্দিন স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় থেকে জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি। নানা অপরাধে জড়িয়ে হয়েছে একাধিক মামলার আসামি। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়। দুই বছরের মাথায় অপরাধে জড়িয়ে পড়লে ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। পরিবারের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করার পর বউকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে পরিবার। বউকে নিয়ে যাওয়ার পর মাঈনুকে নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে সম্পত্তির জেরে মা জেসমিন আক্তারকে হত্যা করে কারাগারে যেতে হচ্ছে তাকে।
লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, শামসুল আলম মাস্টার জীবিত থাকাবস্থায়ই মাঈনুদ্দিন উচ্ছৃঙ্খল ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য ছেলের ওপর বিরক্ত ছিলেন খুব। জীবদ্দশায় তাই তিনি তার নামে কোনো সম্পত্তি লিখে দিয়ে যাননি। সবকিছু লিখে দিয়ে যান স্ত্রী ও মেয়েকে। এ নিয়ে পরিবারের প্রতি নাখোশ ছিল মাঈনুল। সে সবসময় ইনব্যালেন্স জীবনযাপন করে আসছিল। পরিবারের একটি প্রভাব ছিল এলাকায়। এটি ব্যবহার করেও এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ করেছে সে।
এম এ ইউসুফ আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর মাঈনুদ্দিনের মধ্যে মাকে খুন করার জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা দেখিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি সে তার বাবার অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিল। সেটি বৈধ নাকি অবৈধ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত ১৩ জুলাই শামসুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন সকালে মেয়েকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলেন জেসমিন। সেটি জেনে মাঈনুদ্দীনের ধারণা হয়েছিল তাকে বাদ দিয়ে তার মা ও বোন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং সম্পত্তি বিক্রি করে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাবেন। সেটি নিয়ে দুপুরে ঘরে গিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে ঝগড়া বাধায় মাঈনুদ্দিন। একপর্যায়ে নিজের কোমরে থাকা পিস্তল বের করে বোনের দিকে গুলি ছোঁড়ে। সেটি তার শরীরে না লাগায় আরেকটি গুলি ছোঁড়ে মায়ের দিকে।
লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, জেসমিন আক্তারকে গুলি করে দ্রুত পালিয়ে মাঈনুদ্দিন মাঈনু পটিয়া থেকে চন্দনাইশের দোহাজারীতে চলে যায়। সেখান থেকে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সাতকানিয়ায় গিয়ে একটি কারখানায় আশ্রয় নেয়। গ্রেপ্তার এড়াতে মাঈনুদ্দিন তার মোবাইল ফোন সেট ফেলে দেন। এরপর ঢাকায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার সাতকানিয়ার কেরানিহাট থেকে সে ঢাকাগামী বাসে উঠে। টিকিট না কেটে সুপারভাইজারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে গাড়িতে উঠেছিল সে। ওই বাস শাহ আমানত সেতু এলাকায় পৌঁছার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে সাতকানিয়া এলাকার একটি গুদাম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়।
এমএ ইউসুফ বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে পুরো ঘটনাটি ঘটেছে পারিবারিক অবক্ষয় থেকে। পরিবার থেকে যদি মাঈনুলকে ছোট বেলা থেকে নজরদারিতে রাখা হতো, শাসনের মধ্যে রাখা হতো তাহলে এমন উচ্ছৃঙ্খল হতো না। হয়তোবা এমন পথে পা বাড়াতো না। তাকে দেখেই মনে হয় সে নেশাগ্রস্ত। আজকের মাঈনু একদিনে তৈরি হয়নি। পরিবারের নজরদারির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে সে এমন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে আমরা সবার প্রতি অনুরোধ করে বলতে চাই, আপনার সন্তানের প্রতি নজর রাখুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপন্ন হলুদ কচ্ছপ মিলল পাহাড়ে
পরবর্তী নিবন্ধকন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ৩ ধাপ এগিয়ে ৬৪তম স্থানে চট্টগ্রাম বন্দর