বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান

পিসিটি, বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি বন্দর

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। দুনিয়ার খ্যাতনামা বহু বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের পিসিটি এবং বে-টার্মিনাল পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছে কোন কোন প্রতিষ্ঠান। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিষয়টি খুবই সতর্কতার সাথে হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, ভৌগোলিক এবং বাণিজ্যিক কারণে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশের নিকট বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বহু দেশের সরকার এবং বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচন্ড আগ্রহ রয়েছে। এর মধ্যে স্রেফ ব্যবসার জন্য আগ্রহী দেশের পাশাপাশি কোন কোন দেশ ভৌগোলিক কারণেও এখানে আসতে চায়। তবে অধিকাংশ দেশ এতদঞ্চলের ক্রমবর্ধমান সমুদ্রবাণিজ্যে ভাগ বসাতে চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করতে চায় বলেও বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি) নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ইকুইপমেন্ট স্থাপন করেই এই টার্মিনাল পুরোপুরি অপারেশন শুরু করা যায়।

প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ইকুইপমেন্ট লাগবে এই টার্মিনালে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে এই ইকুইপমেন্ট ক্রয় না করে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরপর থেকে বিশ্বের নানা দেশ পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে দেন দরবার শুরু করে। দেশের অতি প্রভাবশালী একজন ব্যবসায়ী এই টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগের মধ্যস্থতা করছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে। সৌদি আরবের রাজ পরিবারের মালিকানাধীন রেড সি গেটওয়ে নামের কোম্পানি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের ব্যাপারে বেশ অগ্রসর হয়েছে।

পতেঙ্গা টার্মিনালের পাশাপাশি মাতারবাড়ি বন্দরের নির্মাণকাজও বেশ এগিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ওই বন্দরে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা অর্ধ শতাধিক জাহাজ ভিড়েছে, পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে। মাতারবাড়ি টার্মিনাল পুরোদমে চালু করতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ইকুইপমেন্ট ক্রয় করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই বন্দরের জন্যও ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। এখানেও বিদেশি অপারেটর নিয়োগের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অপরদিকে আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বে-টার্মিনাল। এই টার্মিনালে মাটি ভরাটসহ বেশ কিছু কার্যক্রম চলছে। তবে বে টার্মিনালের জন্য ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের মতো ব্যয়বহুল এবং নতুন ধাচের একটি কাজ করতে হবে। অর্থের পাশাপাশি টেকনোলজিরও একটি বিষয় এই বন্দরটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ি বন্দর কিংবা বে টার্মিনালে জেটি নির্মাণ থেকে ইকুইপমেন্ট ক্রয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সৌদিয়া আরবের রেড সি গেটওয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, চীনের চায়না মার্চেন্টস স্পোর্ট হোল্ডিং, ভারতের আদানি গ্রুপ, সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং ডেনমার্কের এপিএমওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রস্তাব দেয়ার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি বেসরকারি শীর্ষ পর্যায়েও ব্যাপক যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে অনেকগুলো প্রস্তাব থাকলেও দুবাইর ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং সিঙ্গাপুরের পিএসএ দৌঁড়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এসব প্রস্তাব পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, সরকারই এসব টার্মিনালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আগ্রহের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, টেকনোলজি ট্রান্সফার এবং টার্মিনাল অপারেশনের কাজ করতে অনেকগুলো বিদেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তবে বিষয়গুলো কিভাবে পরিচালিত হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এটি কি বিল্ড অপারেট এন্ড ট্রান্সফার (বিওটি) ভিত্তিতে হবে, নাকি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) ভিত্তিতে হবে সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তবে এসব টার্মিনাল পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে নির্মাণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের পিপিপি অথরিটিই অনেকগুলো বিষয় ঠিকঠাক করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পাহাড়ে মাটি কাটার সময় ডাম্পারসহ আটক ১
পরবর্তী নিবন্ধসেবা ও সচেতনতার মাধ্যমে শৈশব ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব