বিকেল নামতেই বাড়ল ভিড়

ছুটির দিনে ফুটপাত থেকে মার্কেট সর্বত্র মানুষ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৮ মে, ২০২১ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারীর মধ্যেও ঈদ উৎসবের আমেজ নগরীর ছোট-বড় সব মার্কেটে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে ফুটপাত থেকে মার্কেট সর্বত্র ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বিকাল নামতেই মার্কেটে মার্কেটে বাড়তে থাকে ভিড়। ঈদ ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে ক্রেতারা এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে হন্য হয়ে ঘুরছেন। গণপরিবহন চালু হওয়ায় ভিড়টাও আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে অভিজাত মার্কেটগুলোতে ঈদের কালেকশনও বেশ ভালো। করোনার আগেই ব্যবসায়ীরা মার্কেটে ঈদের পোশাক তুলেছেন এবার। জহুর হকার্স মার্কেট, তামাকুমণ্ডি লেইন, রেয়াজুদ্দিন বাজার এবং টেরীবাজারে বিকাল হতেই উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
মাসের শুরু, অনেকেই বেতন পেয়েছেন। আবার ঈদের আগে শেষ শুক্রবার। সামনে ছুটির দিন আর দুইটি। শনিবার ও শবে কদরের দিন সোমবার। বিক্রেতাদের এখনও একটাই চাওয়া, এমন ভিড় যেন থাকে ঈদের আগ পর্যন্ত। গত দুইদিন ধরে কাস্টমার বাড়ছে। আজ কাস্টমার বেশি, বেচাবিক্রিও বেশি। এতোদিনে মনে হচ্ছে ঈদ আসছে। এই রকম বেচাবিক্রির আশায় ছিলাম। চাঁদরাত পর্যন্ত যেন এমন থাকে। গতকাল বিকেলে উচ্ছ্বাস আর তৃপ্তিমাখা কথাগুলো বলছিলেন রেয়াজুদ্দিন বাজোরর কাপড় বিক্রেতা মো. ছিদ্দিক।
করোনাভীতি উপেক্ষা করে ক্রেতাদের ঢল নামছে মার্কেটগুলোতে। মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই শপিংমলগুলোতে। কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতার মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। রয়েছে শিশু-কিশোরও। শারীরিক দূরত্বসহ করোনা সতর্কতা অমান্য করছেন অনেক ক্রেতা। প্রশাসন কিছুটা ছাড় দেওয়ায় ঈদবাজারে অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাব।
অপেক্ষাকৃত বড় সুপারমলগুলো স্বাস্থ্যবিধির দিকে গুরুত্ব দিতে পারলেও জহুর হকার্স মার্কেট, তামাকুমণ্ডি লেইন, রেয়াজুদ্দিন বাজার এবং টেরীবাজারের মতো মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির ব্যত্যয় ঘটেছে বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে এসব মার্কেটে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেট কম সময় খোলা থাকার কারণে একই সময়ে বেশি ক্রেতা আসছেন। এবার সরকার রাত ৮টায় মার্কেট বন্ধ করার সময় সীমা বেঁধে দেয়। সাধারণত ক্রেতারা আগের বছরগুলোতে ইফতারের পরেই বেশি আসতেন। তবে এবার ইফতারের পরে সময় খুব কম।
সরেজমিনে গতকাল নগরীর নিউমার্কেট বিপণী বিতান, বালি আর্কেড, সেন্ট্রাল প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, ফিনলে স্কয়ার, শপিং কমপ্লেঙ, স্যানমার ওশ্যান সিটি, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, আমিন সেন্টার, ভিআইপি টাওয়ার, আখতারুজ্জামান সেন্টার, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট এবং মতি টাওয়ারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেকটি দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
বিক্রেতাদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। ক্রেতাদের আকর্ষণে বিরতিহীনভাবে বিভিন্ন ধরণের পোশাক এবং পণ্যের কালেকশন দেখিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে সেইসব পণ্য খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন। বিক্রেতার সাথে দরেদামে মিললে টাকা পরিশোধ করে বাড়ির দিকে পা বাড়াচ্ছেন। তবে ক্রেতা বিক্রেতা কারো সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানার দিকে আগ্রহ ছিল না। যদিও কয়েকটি মার্কেটে সমিতির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মাইকিং করেছে।
নিউমার্কেটে আসা গৃহিনী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ঈদের সময় আর বেশি নেই। তাই বাচ্চাদের জন্য জামা কিনতে এলাম। মার্কেটে অসম্ভব ভিড়। যতদূর সম্ভব নিজে সেফ থেকে শপিং শেষ করেছি।
নাসিরাবাদ ফিনলে স্কয়ারে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিলা সুমাইয়া উর্মি বলেন, বান্ধবীর সাথে কসমেটিকস কিনতে এসেছি। দুইদিন আগে ফিনলে থেকেই নিজের জন্য গাউন এবং আম্মুর জন্য সেলোয়ার কামিছ নিয়েছিলাম। গতবছর লকডাউনের কারণে মার্কেট বন্ধ ছিল। তাই শপিং করা হয়নি। এ বছর তাই শপিং মিস করতে চাইনি। ইউনেস্কো সিটি সেন্টারে আসা ক্রেতা তারেক নেওয়াজ পলাশ বলেন, এবার করোনার জন্য সত্যিকার অর্থে মার্কেটে ঈদের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারপরেও ঈদ উপলক্ষে একটা পাঞ্জাবি কিনতে এসেছি।
জানতে চাইলে টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান দৈনিক আজাদীকে বলেন, সময় গড়ানোর সাথে মার্কেটে ক্রেতা সমাগমও বাড়ছে। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ক্রেতা-বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন বলেন, শেষ মুহূর্তে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। এখন মনে হচ্ছে ঈদের বাজার চলছে। তবে আগের বছরগুলোতে স্বাভাবিক নিয়মে ব্যবসা করার সুযোগ থাকলে ব্যবসায়ীরা আরো বেশি উপকৃত হতো।
সানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদের ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার বলেন, ঈদের সময় তো হিসেবে আর বেশিদিন বাকি নেই। গত কদিনে ভালোই বেচাবিক্রি হচ্ছে। আমরা মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতাকে দোকানে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। এছাড়া মার্কেট প্রবেশমুখে প্রত্যেক আগত ক্রেতাদের হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধচকবাজারে আবার টমটমের দৌরাত্ম্য