চকবাজারে আবার টমটমের দৌরাত্ম্য

সড়ক-ফুটপাতেও অবৈধ বাজার, দুর্ভোগ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৮ মে, ২০২১ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ব্যস্ততম চকবাজার ধনিরপুল থেকে রাহাত্তারপুল সড়কে ফের নিষিদ্ধ টমটম স্টেশন চালু হয়েছে। সড়কে ব্যাটারিচালিত অবৈধ টমটম স্টেশন বসিয়ে লাখ টাকা চাঁদাবাজিতে জড়িত একটি সন্ত্রাসী চক্র। এর আগে পুলিশের অভিযানে দুই দফা টমটম স্টেশন উচ্ছেদ হয়েছিল। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে উচ্ছেদ হলেও চলতি মাসে ফের চালু হয়েছে স্টেশনটি। বিষয়টিকে পুলিশের সাথে চোর-পুলিশ খেলার সাথে তুলনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, অবৈধ টমটম স্টেশন স্থাপন এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে প্রথম দফায় গত বছরের ২৬ আগস্ট চক্রের প্রধান এক যুবলীগ নেতাসহ তিনজনকে আটক করে চকবাজার পুলিশ। এস এম সামাদ নামের একজনসহ ওই সময় গ্রেপ্তারকৃত চারজনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। ওই সময় বেশ কিছুদিন কারাগারে ছিল তারা। এই সময় বন্ধ হয়ে যায় বছরের পর বছর সড়কে দাপিয়ে বেড়ানো নিষিদ্ধ টমটম গাড়ি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বেশ কয়েকমাস বন্ধ থাকার পর গত মার্চ মাসে ফের চালু হয় অবৈধ টমটম স্টেশন। কয়েকদিন চলার পর চকবাজার থানা পুলিশ স্টেশনটি উচ্ছেদ করে। ওসি খন্দকার আতাউর রহমান বদলি হয়ে গেলে নতুন গতিতে চালু করা হয় টমটম স্টেশন। বর্তমানে পুরো সড়ক জুড়ে এসব অবৈধ বাহনের দৌরাত্ম্য চলছে।
সূত্র বলেছে, চক্রটি সবসময় ওসি পরিবর্তনের সুযোগকে কাজে লাগায়। নতুন করে মাঠে নামে। ইতিমধ্যে বেশকিছু ব্যাটারি চালিত টমটম গাড়িও জব্দ করেছে পুলিশ। তবে স্থানীয়রা বলছেন, নামমাত্র গাড়ি জব্দ করলেও অবৈধ এই স্টেশন বহাল রয়েছে ধনিরপুল এলাকায়। প্রতিদিন ৫০/৬০টি ব্যাটারিচালিত টমটম গাড়ি চলাচল করছে চকবাজার ধনিরপুল স্টেশন থেকে বাকলিয়া থানাধীন রাহাত্তারপুল পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই স্টেশনে গাড়ি অন্তর্ভুক্ত করতে চক্রের দলনেতাকে অগ্রিম দিতে হয় দশ হাজার টাকা। এরপর প্রতিদিন নির্ধারিত হারে গাড়ি প্রতি চাঁদা তোলা হয়। এজন্য রাখা হয়েছে দুইজন লাইনম্যান। ধনিরপুল থেকে রাহাত্তারপুল পর্যন্ত সরু এ সড়কটির এক কিলোমিটার জুড়ে টমটম গাড়িতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের। লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ, লাখ লাখ মানুষের চলাচল রয়েছে রাতদিন আঠারো ঘণ্টা।
শুধু টমটম স্টেশন নয়, চকবাজারের এই সড়কে বিড়ম্বনার আরেক কারণ ফুটপাত জুড়ে অবৈধ কাঁচাবাজার। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত বাজার থাকলেও খালপাড় থেকে ফুলতলা পর্যন্ত সড়কে ফুটপাত দখল করে কাঁচাবাজার বসিয়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এখানে দোকান প্রতি এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও দৈনিক দুইশো করে চাঁদা দিতে হয় এই চক্রকে। এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিও বিস্ফোরণ আইনে মামলা হয়েছে চকবাজার ও পাঁচলাইশ থানায়। সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তারও হয়। কয়েকদিন কারাবাস করে ফিরে আবারো নতুন উদ্যমে অপকর্ম শুরু করে। এই চক্রটি চাঁদাবাজির পাশাপাশি বাজারে মাদক ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করে।
শুধু অবৈধ টমটমই নয়, চকবাজার এলাকায় গাড়ি এবং স্ট্যান্ড নিয়ে বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। চকবাজারের বিভিন্ন স্পটে গড়ে ওঠেছে একাধিক পরিবহন স্টেশন। কেয়ারির সামনে থেকে মাহিদ্রা, গোলজার মোড় থেকে টিকটিকি ও অলি খাঁ মোড় থেকে টেম্পো স্টেশন। তাদের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, যাত্রী ওঠানামা সবমিলিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ শিক্ষা জোন খ্যাত চকবাজার থানা এলাকায়। এদিকে, পরিবহন স্টেশন, ফুটপাতে দোকানসহ বিভিন্ন খাত থেকে পুলিশের নাম ভাঙিয়েও চলে চাঁদাবাজি। সবকিছু মিলে বিশৃংখল এক পরিবহন দৌরাত্ম্য পুরো এলাকাজুড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ড বন্ধসহ পরিবহন খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে চকবাজার থানার নবাগত ওসি মোহাম্মদ আলমগীর মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আজাদীকে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। আমি চকবাজার থানায় জয়েন করেছি বেশি দিন হয়নি। অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছি। তারা বলছে, টমটম চলার রুট পারমিট আছে। আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিকেল নামতেই বাড়ল ভিড়
পরবর্তী নিবন্ধমুখে মাস্ক নেই, আছে অজুহাত