মুখে মাস্ক নেই, আছে অজুহাত

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৮ মে, ২০২১ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানোর প্রধান অস্ত্র হিসেবে মাস্কের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নগর জুড়ে দেখা গেছে অনেকেরই ‘মাস্ক পরতে ভাল্লাগে না’। দোকানির মুখে মাস্ক নেই। ক্রেতার মুখে মাস্ক নেই, অথচ কেনা কাটা চলছেই দেদারছে। একইভাবে চালক কিংবা হেলপারের থুতনিতে মাস্ক, গন্তব্যে যাওয়ার তাড়ার অজুহাতে যাত্রীর মাস্কও তার পকেটে। এভাবেই চলছে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে মানুষের চলাচল ! যাকেই জিজ্ঞেস করা হোক না কেন, বলছে, মাস্ক রয়েছে তাঁর কাছে। ক্যামেরা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখলেই তাঁরা মাস্ক পরছেন। মাস্ক পরার বিষয়ে তারা বলছেন, সব সময় মাস্ক পরে থাকা যায় না। তাদের ভালোও লাগে না। কেউ কেউ আবার বলছেন, মাস্ক পরে থাকলে কথা বলতে অসুবিধে হয়। ক্রেতাদের একজনতো জানালেন, তিনি কখনও মাস্ক পরেন না।
দেশে করোনা রোধে সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ চলছে। দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ বের হচ্ছে। যাচ্ছে দোকানপাটে। যদিও অন্যদিনের চেয়ে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শপিং মলগুলোতে লক্ষ্য করা গেছে বেশি ভিড়। ঈদের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। ফলে কেনাকাটার আরও চাপ বেড়ে চলেছে। অথচ যে কারণে সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করল, তা উপেক্ষিত থাকছে। মানে, দোকানপাট-শপিংমলে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। একই অবস্থা গণপরিবহনের ক্ষেত্রেও।
গণপরিবহন চলাচল সামনে রেখে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) যে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে তার অন্যতম শ্রমিক-কর্মচারী ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার। তবে সরেজমিনে নগরী ঘুরে দেখা যায়, এসব শর্ত বেশিরভাগ পরিবহনেই মানা হয়নি। অর্ধেক আসন খালি রাখার যে বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছিল, সেটিও ছিল অনুপস্থিত। কখনো কখনো মানা হলেও আবার হয়ে গেছে উধাও। তবে লোকাল বাসগুলো এ নিয়ম বেশি ভাঙছে দেখা যায়। বাসের চালক, কন্ট্রাক্টর, হেলপার তো বটেই যাত্রীদের অনেককেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। অনেকেই মাস্ক পরলেও তা ছিল থুতনির নিচে।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই নগরীর কয়েকটি মার্কেটে দেখা গেছে অন্যান্য বারের ঈদের আগের সময়ের তুলনায় ক্রেতাদের সংখ্যা কম। তবু করোনা সংক্রমণের মধ্যেই বিপণি বিতানগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সড়ক বা শপিংমল দেখে আসলে বোঝার উপায় ছিল না, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের দেওয়া কঠোর বিধি-নিষেধ চলমান আছে। মাস্ক বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের চেষ্টা অনেকে করেছেন। তবে এমন জনবহুল স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানা যে সম্ভব নয়; তা স্বীকার করছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। কেন মাস্ক পরেননি জানতে চাইলে হকার মার্কেটের সাইফুল নামের এক দোকানি বলেন, সব সময় তো আর মাস্ক পরে থাকা যায় না। সব সময় পরা হয় না। ক্যামেরা দেখলেই মাস্ক পরা হয়। পাশে থাকা সবুজ নামের আরেক বিক্রেতা অন্যদিনের তুলনায় ভালো বিক্রির কথা জানিয়ে বললেন, অন্য দিনের তুলনায় ভালো বিক্রি হচ্ছে। আর সরকার যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলছে, তা চাইলে মানা সম্ভব। কিন্তু আমরা তো মাস্ক নিচে নামিয়ে রাখি। কারণ, মাস্ক পরে থাকলে ক্রেতা সব সময় কথা ভালো বুঝতে পারেন না। এখন কী করব বলেন? কাস্টমার যেহেতু ভালো বোঝে না, সেহেতু আমাকে মাস্ক খুলে কথা বলতে হয়। নিউমার্কেটের ওভারব্রিজের সামনে কথা হয় এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, মাস্ক আমি কখনও পরি না। দোয়া পড়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আছে। আমার কোনো সমস্যা হবে না ইনশাল্লাহ।
একই অবস্থা পরিবহনের ক্ষেত্রেও। নগরীর ৭ নম্বর রুটে চলাচলকারী একটি বাসের হেলপার আরাফাতের মাস্কটি ছিল থুতনিতে। যাত্রী ডাকছিলেন তিনি। মাস্ক কোথায় পরার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাইরের ডরে মাস্ক রাখছি। পুলিশ দেখলে উপরে তুলি দি।
গতকাল ছুটির দিন বলে যাত্রী সংখ্যা কম ছিল, ফলে এক আসন ফাঁকা রেখে বসার বিধি মানতে দেখা গেছে। কিন্তু বাসে যাত্রী উঠানোর সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ব্যবস্থা দেখা যায়নি। চালক কিংবা হেলপার অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। কারও ছিল পকেটে, কারও হাতে, কারও বা ঝুলছিল থুতনির নিচে। একই উদাসীনতা যাত্রীদের বেলায়ও দেখা গেছে। কয়েকটি বাসের ভেতর গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু যাত্রীও মাস্ক খুলে গাড়িতে বসেছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে যাত্রীদের একজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়িতে তো লোকজন কম, যে কারণে মাস্ক একটু খুলে বসেছি। সারাদিন মুখে মাস্ক পরে থাকলে অস্বস্তি লাগে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকবাজারে আবার টমটমের দৌরাত্ম্য
পরবর্তী নিবন্ধহেফাজত নেতা ফয়েজীর বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় ধর্ষণ মামলা